ওমিক্র্ন, ভয় নয় তবে আশাও আছে

ওমিক্র্ন,

আমাদের দেশে না আসা পর্যন্ত "আপাতত, এটা চায়ের কাপে ঝড়," ছিল। কিন্তু জিম্বাবুয়ে ফেরত নারী ক্রিকেটার দুজন ইতিমধ্যে রোগটি দেশে নিয়ে এসেছেন। তবে ইতিমধ্যে বিশ্বের ৮০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই নতুন উদ্বেগ। যুক্তরাজ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে এই ভ্যারিয়েন্টে। ভারতের অনেক রাজ্যে ছড়িয়ে গেছে। 



এর উৎস দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪% মানুষের সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হয়েছে। অথচ সেখানে কোভিড19 এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ''ওমিক্রন " ভীষন উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে সারা বিশ্বে।

নিউইয়র্ক ও লন্ডন শেয়ার বাজারে তেলসহ, ট্রাভেলস ব্যবসায় দর পতন ঘটেছে এই খবরে। তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, ইতিপূর্বে যাদের কোভিড19 হয়েছিল তাদের পুন:সংক্রমণ হচ্ছে এই অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে। 


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই নতুন করোনভাইরাস রূপকে "উদ্বেগজনক" বলে ঘোষণা করেছে এবং এর নাম দিয়েছে ওমেক্রন।

এটিতে প্রচুর পরিমাণে মিউটেশন হয় এবং প্রাথমিক প্রমাণগুলি পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা দেখিয়েছে, WHO বলেছে। এটি ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে WHO তে প্রথম রিপোর্ট করা হয়েছিল। 

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণ নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো এবং এসওয়াতিনি থেকে ভ্রমণকারীরা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না যদি না তারা ইউকে বা আইরিশ নাগরিক বা যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা না হয়।

উপসর্গ:

অমিকর্ণে সংক্রমিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর পরিচিত উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছে না। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগটির মৃদু উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।  মৃদু রোগের সঙ্গে এক-দু’দিন মাংসপেশির ব্যথা, ক্লান্তি এবং খারাপ লাগা দেখা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে স্বাদ বা ঘ্রাণ হারানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। হালকা কাশি হতে পারে। কিন্তু করোনার পরিচিত উপসর্গগুলো দেখা যায়নি।


এটি  'দুঃসংবাদ হলেও - শেষ কথা নয়'। তবে এটি ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মত হলে হয়তো নিমেষেই ধ্বংস করে দেবে আমাদের অর্জিত হার্ড ইম্যুনিটি।

ডব্লিউএইচও বলেছে যে এই রূপটি প্রাথমিকভাবে B.1.1.529 নামে পরিচিত, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় সমস্ত প্রদেশে বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।

জাতিসংঘের জনস্বাস্থ্য সংস্থা একটি বিবৃতিতে বলেছে, "এই  ভ্যারিয়েন্টের  প্রচুর পরিমাণে মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি আন্তঃ সম্পর্কিত।" 


দক্ষিণ আফ্রিকানরা নতুন ভ্যারিয়েন্টটিকে ভীষন  ভয় পাচ্ছে । এর ফলে দেশটির সাথে বিশ্বের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে দীর্ঘ সময়ের জন্য। 

যুক্তরাজ্যের একজন শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়েছেন যে ভ্যাকসিনগুলি "প্রায় অবশ্যই" নতুন রূপের বিরুদ্ধে কম কার্যকর হবে।


তিনি বলেছেন যে ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তনগুলি আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।


এদিকে, মার্কিন সংক্রামক রোগের প্রধান ডাঃ অ্যান্টনি ফৌসি বলেছেন যে নতুন রূপের ভাইরাসটি একটি "লাল পতাকা" প্রদর্শন করেছে, কিন্তু এটি সম্ভব যে ভ্যাকসিনগুলি এখনও গুরুতর অসুস্থতা প্রতিরোধে কাজ করতে পারে।

"যতক্ষণ না এটি আমাদের অ্যান্টিবডিগুলিকে এড়িয়ে না যায়, যা আপনাকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করে", ডাঃ ফৌসি সিএনএনকে বলেছেন।

আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না যে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, ভ্যাকসিন বা ওষুধ কম কার্যকর করে বা এটি আরও গুরুতর রোগের দিকে নিয়ে যায় কিনা।

আমি গ্যারান্টি দিতে পারি যে , আমরা আগামী সপ্তাহগুলিতে ওমিক্রন সম্পর্কে আরো অনেক কথা বলব , অনেক উদ্বেগজনক খবর শুনবো। হয়তো আবার লক ডাউনের মত কঠোর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে আমিদের।
শুধুই হতাশা নয়, মিলছে আশার খবরও।


গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে বলা হয়, করোনার অমিক্রন ধরনের তীব্রতা নিয়ে সামান্য হলেও আশাবাদী হওয়ার মতো কয়েকটি কারণ আছে। বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পাওয়া তথ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও ভাইরাস প্রতিরোধী বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে আশাপ্রদ খবর মিলছে। তবে আশাবাদী হলেও সতর্ক থাকার বিকল্প দেখছেন না বিজ্ঞানীরা। 


ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধে আশা দেখছেন বিজ্ঞানীরা

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে গত বছর জিবুডি (সোত্রোভাইমাব) এবং লাজেভরিওর (মলনুপিরাভির) মতো বেশ কয়েকটি ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যে এসব ওষুধ ব্যবহার করে দেখা গেছে, তা গুরুতর অসুস্থতা ঠেকাতে সক্ষম। যারা আগে থেকেই ক্যানসারের মতো জটিল রোগে ভুগছিলেন এবং কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হওয়ার পর আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই ওষুধ কার্যকারিতা দেখিয়েছে। দুই ওষুধই সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটির প্রকোপ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আশঙ্কাও কমিয়ে এনেছে।

তার আগ পর্যন্ত ভালো থাকুন, নিরাপদ থাকুন। 



সূত্রঃ বিবিসি

মন্তব্যসমূহ