রোজার ডায়েট কেমন হওয়া উচিত

রমজান ডায়েট কী!

রমজান বা রোজার মাসে জনসংখ্যা ভিত্তিক খাদ্যতালিকাগত প্যাটার্নের কোন তথ্য আসলে নেই।¹

বহুল কাঙ্ক্ষিত রমযান মাস দোর গোড়ায় এসে গেছে, আর কিছুদিন পর সেহরি খাবো। রমজান মাস এলেই খাওয়া দাওয়ার ধুম পড়ে যায় অনেকের । মানুষ অস্থির থাকে কি খাবে, কি খাবেনাএসব নিয়ে।

বিখ্যাত চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, কিছু নিয়ম নীতি অনুসরণ করলে, কষ্ট ছাড়াই রোজা পালন করা যায়।



যে খাদ্য স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণে কম কিন্তু পুষ্টিতে বেশি ও ভারসাম্যপূর্ণ তা রমজানের সময়কালে সুস্থ ও সক্রিয় রাখবে আমাদের।

যে খাদ্য স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণে কম কিন্তু পুষ্টিতে ভরপুর ও ভারসাম্যপূর্ণ তা রমজানের সময়কালে সুস্থ ও সক্রিয় রাখবে আমাদের।

একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য, একজন ব্যক্তির সমস্ত প্রধান খাদ্য গ্রুপ (শর্করা, আমিষ ও চর্বি) থেকে খাবার গ্রহণ করা উচিত, এবং দুই বেলার খাবারের মধ্যে সমানভাবে বিতরণ করা উচিত।

খাবারগুলো আমাদের দৈনিক চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই নির্বাচন করা দরকার। কোন উদ্ভট ডায়েট না মেনে আমাদের দেশের মানুষের যে ধরনের খাদ্যাভ্যাস রয়েছে, তার আলোকেই আমরা সুস্থ্য ভাবে খাওয়ার চেষ্টা করব।


রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। এই প্রবন্ধে উপমহাদেশে যারা রোজা রাখে তাদের মধ্যে রমজানের প্রধান খাদ্যতালিকা পর্যালোচনা করে তৈরি।

স্বাস্থ্যকর বনাম অস্বাস্থ্যকর খাবার

গবেষণায় দুটি প্রধান প্যাটার্নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • স্বাস্থ্যকর খাবার (অন্যান্য শাকসবজি, ফল, হলুদ শাকসবজি, ক্রুসিফেরাস সবজি, টমেটো, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, দই পানীয়, পোল্ট্রি, জলপাই, বাদাম, ফলের রস, আলু, কফি, এবং রসুন) এবং
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার (উচ্চ প্রক্রিয়াজাত মাংস, মেয়োনিজ, কোমল পানীয়, মিষ্টি, পরিশোধিত শস্য, স্ন্যাকস, শিল্প রস, লাল মাংস, বাদাম, হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট, মাখন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, অঙ্গের মাংস এবং শর্করা) ()।


রমজানে স্বাস্থ্যকর খাবার


সেহেরি

আদর্শ রমজান ডায়েট বানাবেন কীভাবে?


সাহার খাবারকে প্রাতঃরাশ হিসাবে বিবেচনা করা হয় (মোট দৈনিক ক্যালোরির প্রায় ৩০%) এবং সর্বাধিক অনুপাত ইফতার খাবারের জন্য বরাদ্দ করা হয় (প্রায় ৬০%)

# আপনার সেহরিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু উপাদান:

  • পুরো শস্য-উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে গোটা শস্যের সিরিয়াল, পুরো শস্যের রুটি, বাদামী চাল এবং ওটমিল।
  • তাজা ফল এবং শাকসবজি।
  • প্রোটিনের উৎসের মধ্যে রয়েছে দুধ, দই, ডিম, বাদাম।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি-উৎস হল বাদাম এবং জলপাই।


কিছু গবেষণার ভিত্তিতে, খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন বৃদ্ধি হতে পারে () এবং খাদ্যের চর্বি হ্রাস ()।

রমজানে স্বাভাবিক নিয়ম পরিবর্তন করে সুবহে সাদিকের আগে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া সেরে নিতে হয়। এটি মজার বিষয় যে সূর্যোদয়ের আগে, মুসলমানরা সেহরি নামে যে খাবার খান, এই খাবারটি প্রায়শই সকালের নাস্তা বা প্রাতঃরাশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে হয় , তবে কিছু সংস্কৃতিতে বিশেষত: বাংলাদেশিদের মধ্যে এটি রাতের খাবারের মতো।

সেহরি দিনের জন্য তরল এবং শক্তি সরবরাহ করে, তাই স্বাস্থ্যকর খাবার , দুধ, ফলমূল, দিনটি আরও ভালভাবে মোকাবেলা করতে সহায়তা করতে পারে।

সেহেরীর সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার মোটেই ঠিক নয়, কারণ চার পাঁচ ঘণ্টা পার হলেই খাদ্যগুলো পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে গিয়ে হজম হয়ে যায়।

শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সেহেরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, সেহেরীর খাবার মুখরোচক, সহজ পাচ্য ও স্বাস্থ্য সম্মত হওয়া প্রয়োজন। যেসব খাবার হজম করতে কষ্ট হয়, তা বর্জন করা শ্রেয়। সহজ পাচ্য তেমন কিছু সেহেরির খাবার হল,

  • ভাত
  • মিশ্র সবজি,
  • মাছ
  • মুরগির মাংস
  • পাতলা করে কাটা গরু / খাসির মাংস।

অথবা মিশ্র খাবার যেমন খিচুড়ির মত পুষ্টির মিশ্রণ খেতে পারেন। সঠিক মিশ্র খাবারের উপকার অনেক। অনেক মিশ্র খাদ্য হজমের জন্য সহায়ক নয়।

খাদ্য সংমিশ্রণ, সর্বোচ্চ পুষ্টির নিশ্চয়তা কী ⁉️👉


ইফতার


কিছু ক্ষেত্রে, খেজুর, মধু, মিষ্টি এবং কোমল পানীয় খাওয়ার কারণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

ইফতার একজন রোজাদার ইফতারে কি খাবেন তা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের উপর।

পারত পক্ষে দোকানের তৈরি ইফতারি ও সেহেরী না খাওয়াই ভালো। ইফতার বাজারে যেসব ইফতার পাওয়া যায় সেসব মুখরোচক খাবার স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে কিনা তা জানার উপায় নেই ।

যদি মনে হয় সেসবে ভেজাল তেল, বেসন ও কৃত্রিম রং মেশানো আছে সেগুলো বর্জন করুন। যে তেলে ভাজা হয়, সেই তেল এক বারের বেশি ব্যবহার উচিত নয়।

কারণ একই তেল বারবার আগুনে ফুটালে কয়েক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি হয়, যেমন পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন, যার মধ্যে বেনজা পাইরিন নামক ক্যান্সার হতে পারে এমন পদার্থের মাত্রা বেশি থাকে।



যারা রমজানে রোজা রাখে তাদের খাদ্যের ধরণগুলি একই রকম নয়, অন্যান্য মাসের জন্য পূর্বে রিপোর্ট করা প্যাটার্নগুলির মতোও নয়।

সারাদিন অভুক্ত থাকি বলে ইফতারের সময় এসব বেশি খেতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সেজন্য ইফতার প্রথমে অল্প করে খাওয়া উত্তম। রাতের খাবারের জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখুন। কারণ যারা ইফতারের আইটেম বেজায় খান, তারা রাতে ভাল করে খেতে পারেন না।

সুস্থ, স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারিতে যেসব খাওয়া উচিত;

  • খেজুর বা খুরমা,
  • ঘরের তৈরি শরবত,
  • কচি শসা (হজম সহজ)
  • পেঁয়াজু,
  • বুট,
  • ঘরের রান্না করা নুডুলস
  • দু-একটা জিলাপি
  • দেশি মৌসুমি ফল ।( ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে হজম হয়। )

কি খাবেন না ইফতারিতে:

বেশি ভাজি কাবাব, ভুনা তেহারি ও হালিম।

কারন এতে বদহজম হতে পারে।


রাতের খাবার


যাইহোক, গবেষণা মানুষের শিক্ষাগত অবস্থা এবং নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকাগত নিদর্শনগুলির প্রতি প্রবণতার মধ্যে কোনও সম্পর্ক দেখায়না।

এশা ও তারাবির নামাজের পরই পরিমাণ মত রাতের খাবার গ্রহণ করা উচিত। দেরিতে রাতের খাবার খেলে , সেহরীর আগে হজম হওয়ার পর্যাপ্ত সময় পায়না। রাতের জন্য সহজ হজম হয় এমন কিছু খাবার :



ডায়েট বিশ্লেষণের সীমাবদ্ধতা থেকে বিষয়গত বা খাওয়ার স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তগুলিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

  • মাছ অথবা
  • মুরগির মাংস,
  • ডাল ও
  • সবজি ইত্যাদি

গরমে পানিশূন্যতা কিভাবে মোকাবেলা করবেন

গ্রীষ্মকালীন রমজানে পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত । দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং পানি শূন্যতার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ইফতার ও সেহেরি সময়ের মধ্যে অন্তত পক্ষে আট গ্লাস পানি পান করুন।

অনেকে পানির পরিবর্তে লেমন অথবা রোজ ওয়াটার, ফ্রুট ওয়াটার, নানা ধরনের শরবত, ভিটামিন ওয়াটার সহ নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত পানীয় পান করেন।

(এ ব্যাপারে বৈরুতের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশনিস্ট ফারা নাজার এর অভিমত: রোজাদারদের শুধু বিশুদ্ধ পানি পান করাই ভালো। )

তার মতে, কার্বোনেটেড ও সুগার ড্রিংক, চা ও কফি পান করলে শরীর থেকে অধিক পানি বের হয়ে যায়।

কফি ও চায়ের ডাই ইউরেটিক ইফেক্ট-এর কারণে ইফতার ও সেহেরিতে চা কফি পরিহার করা বা কম পান করা ভালো।

রোজাদারদের প্রচুর সবুজ শাকসবজি, ফলমূল আহার করা উচিত কারণ সেগুলোতে বেশিরভাগ পানি ও আঁশ থাকে।


সূত্র, বিবিসি হেলথ,
1-https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4270674/#:~:text=We%20identified%20four%20major%20dietary,and%20eggs%3B%203)%20Mediterranean%2D

মন্তব্যসমূহ