গাধা সম্পর্কে আশ্চর্য জনক তথ্যগুলো কী! !

গাধা সম্পর্কে আশ্চর্য জনক তথ্যগুলো কী! !

যারা ঘোড়ায় চড়া শিখতে চান, আগে গাধায় চড়ার চেষ্টা করুন কারণ গাধা তার আরোহীকে কখনো ফেলে দেয়না!
গাধা
গাধা একা থাকতে পারেনা। একটি, কুকুর, ছাগল বা শিশুর সাহচর্য পেলেও সে উৎফুল্ল থাকে।

গাধা একটি গৃহপালিত প্রাণী হলেও বর্তমানে অনেকে পোষ্য প্রাণী (pet) হিসেবে গাধা পালছেন । গাধা খুব আজ্ঞাবহ কিন্তু ঘোড়ার মত যত্ন প্রত্যাশী নয়। ভারবহন নয় ভালো বন্ধু হিসেবে পশুপাখির ফার্মে গাধার চাহিদা বাড়ছে।

১, আমাদের সমাজে  আছে গাধা একটা বোকা প্রানী। কিন্তু প্রাণিবিজ্ঞানীরা একে বুদ্ধিমান ও স্মার্ট প্রাণী বলেই মনে করেন। মানুষের কণ্ঠের নির্দেশ বোঝে তারা ও পুরনো মনিব ও সঙ্গীসাথীকে ২৫ বছর পরেও চিনতে পারে গাধা এমন রেকর্ডও আছে।

২, বিবর্তনে গাধা, জেব্রা এবং ঘোড়া একটি সাধারণ পূর্বপুরুষের কাছ থেকে বিকশিত হয়েছিল।


চিত্র, eihoppus সেটা ohippus নামক ছোট্ট একটি প্রাণী, যার পায়ে বর্তমান ক্ষুরের বদলে ছিল পাঁচটি আঙ্গুল ।

দৌড়ে পালানোর সুবিধার জন্য ইহিপো র পাঁচ আঙ্গুল এক আঙুলের ক্ষুরে পরিণত হয়।

কিন্তু প্রজাতি আলাদা হওয়ায় এদের যৌনমিলনের ফলে অনুর্বর প্রজাতির সংকর প্রাণীই উৎপন্ন হয়। যেমন খচ্চর।

৩, গাধার ঘ্রাণ ও শ্রবণ শক্তি প্রবল ।

দূরের বিপদজনক গন্ধ তারা আগেই বুঝে ফেলে ও সামনে কিছুতেই এগোয় না। পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করতে থাকে। এতে অনেক মনিব না বুঝে গাধাকে একগুঁয়েপ্রাণী মনে করেন।

৪, সামনে বাঁধা থাকলে ভারবাহি গাধা আগেই নিজের গতিপথ বদলে নেয়।

৫, ভারবহন ও ভারসাম্য রক্ষায় অনন্য গাধা।

সে তার ওজনের দ্বিগুণেরও বেশি ওজন বইতে পারে ( পাঁচশ কেজি পর্য্যন্ত) । তার ভারসাম্য খুবই উন্নত। যত বন্ধুর পথ হোক সে তার মনিবকে কখনো নীচে ফেলে দেবে না , যা ঘোড়ার নেই ।


ঘোড়াগুলি রাজকীয় হিসাবে অনুভূতি দেয়, তাদের মহিমা থেকে দূরে, গাধাগুলি - আকারে ছোট এবং শারীরিকভাবে স্নেহশীল - পুরানো আলিঙ্গনযোগ্য বন্ধুদের মতো অনুভব করায়।

৬, গাধার প্ৰকৃত ইংরেজি নাম ছিল Ass ও she-ass

কিন্তু সেটা গালিতে বা ভালগার শব্দে পরিনত হওয়ায় , পরে dunkey বলে ইংরেজি তে ডাকা শুরু হয় ।

মোটা পর্যটক যারা বেশি হাঁটতে নারাজ, তাদের জন্য আছে নিবেদিত প্রাণ গাধা।

৭, নেতৃত্বে গাধার বিচক্ষণতা প্রমাণিত।

গাধাদের নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে। নিজের ও মনিবের নিরাপত্তা সবার আগে চিন্তা করে সে।

৮, ভেড়া ও ছাগলের পাল পাহারা দেয়ার জন্য একটি গাধা যথেষ্ট। 


চিত্র, বোকা গাধার কাছে ধরাশায়ী বুদ্ধিমান শেয়াল!

খুব মনোযোগ দিয়ে গাধা পাহারা দেয় ভেড়ার পাল।

৯,নেকড়ে বাঘ ও শেয়াল গাধাকে ভয় করে।


চিত্র, ভেড়া চুরি করতে আসা নেকড়ে টি গাধার সাথে লড়াইয়ে হেরে , মনিবকে দেখে ক্লান্ত গাধাটির পেছনেই আশ্রয় নিয়েছে।

তারা কোন ভেড়ার খোঁয়ারে ঢুকে পাহারায় গাধাকে দেখতে পেলে , দ্রুত সটকে পড়ে।

গাধা শিকার করতে এসে হায়েনা কীভাবে নিজেই শিকারে পরিণত হল তা  দেখলে বুঝবেন।

১০, গাধা তার সঙ্গীনিকে খুব ভালোবাসে


চিত্র, সঙ্গিনীর সাথে।

গলা জড়িয়ে ঘুমায়, শরীর পরিস্কারও করে দেয় সারাক্ষন।  

১১, গাধা সামাজিক প্রাণী।

গাধা একা থাকতে পারেনা। কমপক্ষে একটি ছাগল বা শিশুর সাহচর্য পেলেও সে উৎফুল্ল থাকে। অন্যান্য প্রাণীর সাথে চমৎকার মানিয়ে নেয় গাধা, যা ঘোড়া পারেনা।

১২,গাধা ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

একই বয়সের ঘোড়ার চেয়ে গাধা শক্তিশালী।

১৩, গাধার আদি বাসস্থান মরুভূমি


সেজন্য গরম আবহাওয়া পছন্দ তার। শরীরের চামড়া ঘোড়ার চেয়ে পাতলা ও পশম পানিরোধী নয় । তাই সে বৃষ্টিকে ভয় পায় ও ঠান্ডায় কাঁপে।


১৪, গাধা ও ঘোড়ার হাঁটার ভঙ্গি একই।

কিন্তু মরুভূমির প্রাণী হওয়ায়, গাধা ঘোড়ার মতো দৌঁড়তে পারেনা, এতে শক্তি বেশি ক্ষয় হবে বলে। সেজন্য বিবর্তনের শুরুতে গাধা যেমন ছিল এখন প্রায় তেমনি আছে , কেবল কান দুটো ঘোড়ার চেয়ে লম্বা হয়েছে, মরুভূমিতে ষাট মাইল দূরের আওয়াজ ও শুনতে পায়।

১৫, তারা কখনো চমকায় না।

জোরে আওয়াজ হলে কৌতূহলে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেয় । অথচ জোরে আওয়াজ হলে ঘোড়া দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে।

১৬, মরুভূমি তে ঘাস কম থাকায় গাধা ঘাসের ৯৫% ই শরীরের কাজে লাগায়। তাই এদের গোবরে কোন সার থাকে না।

১৭, যারা ঘোড়ায় চড়া শিখতে চান তাদের জন্য গাধা "ভাল শুরু" হতে পারে। সে কখনোই সওয়ারী কে ফেলে দেয় না।

১৮,সংকর প্রাণী উৎপাদনে গাধার জিন চমৎকার মানিয়ে নেয়।

পশ্চিমে ছেলে গাধাকে জ্যাক ও গাধিকে জেনি বলা হয়। এর সাথে ঘোটকির সংকর প্রাণী হল মিউল ও জেব্রার সংকর হল জংকি। গাধীর সাথে ঘোড়ার সংকর হলো হিনী। হিনীর চেয়ে মিউল শক্তিশালী হয়। এরা সব অনুর্বর বা বন্ধ্যা হয়।

১৯,মিশরীয় সভ্যতা ও সিল্ক রোড নির্মাণে গাধার ভূমিকা ছিল ।


প্রাচীন মিশরের দেয়াল চিত্রে সে আছে।

আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাধার পিঠে চড়েই পিরামিড ও ফারাওদের প্রাসাদ তৈরির সরঞ্জাম আসতো। তাই মিশরীয়দের দেয়াল চিত্রে গাধার উল্লেখযোগ্য ছবি আছে।

গাধার বাহন ছাড়া সিল্ক রোড অকল্পনীয় । প্রাচীন সিল্ক রোডে বেশিরভাগ সিল্ক বহন করতো গাধা।

২০, সব প্রাণীর দুধের মধ্যে একমাত্র গাধার দুধই নন- এলার্জিক।

যেসব শিশুদের পেটে সমস্যা থাকে তাদের জন্য এর দুধই সর্বোত্তম।

২১, চিনে পৃথিবীর সবচে বেশি গাধা আছে। ব্রিটেনে গাধা আমদানি করতে হলে তার (গাধার) পাসপোর্ট প্রয়োজন ।

২২, গাধার পিঠে চড়ে যীশুর জেরুজালেম গমন করেন।

বাইবেলের উভয়ই সংস্করনে গাধাকে যিশুখ্রিস্টের বাহক বলা হয়েছে। যীশু জেরুজালেমে ঘোড়ার পিঠে না চড়ে গাধার পিঠে চড়ে প্রবেশ করেছিলেন। কারণ তিনি নিজেকে রাজা বা শাসক পরিচয় দিতে চান না।

২৩, জেরুসালেম ডানকী।

যে সকল গাধার পিঠে ও সামনের দুই দিকে ক্রস চিন্হ থাকে তাদের jerusalem dunkey। চিত্র, jerusalem dunkey, যীশুখ্রিস্টীয় ক্রুশ এর আদলে ক্রস চিন্হ ।


২৪, গাধার ডায়েট 

ঘোড়ার মতোই গাধাকে বেশি খাওয়ানো নিষেধ। মোটা হলে ক্ষুরের নীচে হাড় বেড়ে তার ভার বহন ক্ষমতা কমে যায় ।

২৫, গণতন্ত্রের প্রতীক ও গাধা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হয়ে গেল । গাধা প্রতীক নিয়ে জো বাইডেন রেকর্ড ভোটে জিতলেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির গাধা প্রতীক অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের ১৮৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি প্রচারে প্রথম ব্যবহার করা হয়। জ্যাকসনের বিরোধীরা তাকে জ্যাকাস বা বড় গাধা বলে অভিহিত করতেন। গালিটি প্রত্যাখ্যান করার পরিবর্তে জ্যাকসন তার প্রচারের পোস্টারে গাধার চিত্র অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তিনি কুইন্সি অ্যাডামসকে পরাস্ত করে আমেরিকার প্রথম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। তারপর হতে গাধা ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনী প্রতীক।

সূত্র ও চিত্র : গুগল মামা।






মন্তব্যসমূহ