হাসপাতাল
হাসপাতাল যখন নির্ভরতার প্রতীকহাসপাতাল কখন নির্ভরতার প্রতীক? # রুগীর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা। যত্নের মানের প্রতি অঙ্গীকার। সমবেদনা। জীবনের উন্নতি। এসবের জন্য কোন হাসপাতাল নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
রোগীর কাছ থেকে বিশ্বাস বলতে কী বোঝায়? # ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রবিন্দুতে নিহিত, এবং রোগীর বিশ্বাস সেই সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক। যদি একজন রোগী আপনাকে বিশ্বাস করে এবং মনে করে যে তারা বিচার ছাড়াই আপনার সাথে সৎ হতে পারে, তাহলে তারা এমন তথ্য প্রদান করার সম্ভাবনা বেশি থাকবে যা আপনাকে আরও ভাল যত্ন প্রদান করতে সাহায্য করতে পারে।
১,"হাসপাতাল/hospital " ইংরেজী শব্দটি মূলত লাতিন "হস্পিস" থেকে এসেছে, যার অর্থ "অতিথি বা দর্শনার্থীর জন্য থাকার ব্যবস্থা প্রদান করে এমন স্থান।
২, "রোগী / patient" শব্দটি ল্যাটিন patio/ প্যাটিও র থেকে এসেছে, যা কোন কিছু ভোগ করা বুঝায় । ৩, হাসপাতাল, এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা রোগ নির্ণয়ের জন্য তৈরি, কর্মীযুক্ত এবং সজ্জিত; অসুস্থ ও আহত উভয়ের চিকিত্সা ও শল্যচিকিত্সার জন্য; এবং এই প্রক্রিয়া চলাকালীন তাদের আবাসনের জন্য । আধুনিক হাসপাতালগুলো প্রায়শই জীবিত ও মৃতদেহের ময়নাতদন্ত এবং শিক্ষকতার কেন্দ্র হিসাবেও কাজ করে। ৪, একটি হাসপাতালের চেয়ে ছোট একটি চিকিত্সা সুবিধা কেন্দ্রকে সাধারণত ক্লিনিক বলা হয়। ৫, হাসপাতালের আবিস্কারক বাগদাদের খলিফা হারুন আল রশিদ। পৃথিবীর প্রাচীনতম হাসপাতালটি ৮০৫ খ্রিস্টাব্দ খলিফা হারুন আল-রশিদ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল বাগদাদে । ৬, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রীসে প্রথম মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমান ইরানের গন্ডিসাপুরে ৩০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক মেডিকেল স্কুল। ৭, উপমহাদেশে রাজা অশোক হিন্দুস্তানে খ্রিস্টপূর্ব ২৩০ খৃ: প্রথম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ৮, বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল হল, সেবা ও গবেষণার জন্য, ৯, আদর্শ হাসপাতালের প্রতিটি শয্যার জন্য গড়ে ২৫০০ sq. ft জায়গার প্রয়োজন। সে হিসেবে ১০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য প্রয়োজন ২৫০,০০০ sq ft জায়গা! ১০, একটি ভাল হাসপাতালে সঠিক দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাসহ ডিউটিতে সর্বদা পর্যাপ্ত কর্মচারী থাকে। জরুরী অবস্থা ও ব্যস্ততার সময় কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তার জন্য হাসপাতালের নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে। হাসপাতালটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং কর্মীরা নিশ্চিত করেন যে সেখানে সংক্রমণের ঝুঁকি যতটা সম্ভব কম । তৃপ্তি: আপনি যখন স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে কাজ করেন তখন তৃপ্তির অনুভূতি পান। লোকদের সাহায্য করেন। মানুষের জীবনে পার্থক্য তৈরিতে সহায়তা করতে পারেন।
বাংলাদেশের মাননীয় হাইকোর্ট দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে রোগীদের জরুরি সেবা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ১১, রোগী এবং চিকিত্সক ছাড়াও হাসপাতালের প্রয়োজনীয় স্টাফ হল,
১২, একটি হাসপাতালের অতীব প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সরঞ্জাম হল,
মন্দ হাসপাতালের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী :
১৪, আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোর সমস্যাগুলো আপাত দৃষ্টিতে কী :
সরকারি হাসপাতালে বিছানার অতিরিক্ত রুগী যাদের জন্য কোন বাজেট বরাদ্দ নেই। চিকিৎসক ও নার্সদের অতিরিক্ত সেবার বিনিময়ে তারা সেবা পেয়ে থাকেন !১৫, চিকিত্সা ক্ষেত্র আকর্ষণীয় কেন ?
১৬, হাসপাতালের ধরণ কি কি :
আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে, হাসপাতাল দুই প্রকার,
- অলাভজনক (সাধারণত সরকারি হাসপাতাল)
- লাভজনক(সাধারণত বেসরকারী হাসপাতাল)
হাসপাতালকে তার আকার দ্বারা শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে।
- একটি ছোট আকারের হাসপাতালে ১০০ টিরও কম শয্যা রয়েছে।
- একটি মাঝারি আকারের হাসপাতালে ১০০ থেকে ৫০০ শয্যা রয়েছে এবং
- একটি বৃহত আকারের হাসপাতালে 500 টিরও বেশি শয্যা রয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবার ধরণ অনুযায়ী হাসপাতাল গুলো হল,
- প্রাথমিক হাসপাতাল /স্বাস্থ্যকেন্দ্র : এটি হল প্রধান ডাক্তার যে আপনার স্বাস্থ্যের চিকিৎসা করে, সাধারণত একজন পেশাদার অনুশীলনকারী বা জিপি বা ইউনিয়ন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রর চিকিৎসক তিনি জিপি, ডেন্টিস্ট, ফার্মাসিস্ট এবং চক্ষু ডাক্তার হতে পারেন ।
- মাধ্যমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র যা বিশেষজ্ঞদের বোঝায়। যেমন ঐ রোগের স্পেশালিস্ট বা কনসালটেন্ট , জেলা সদর হাসপাতালের যত্ন ইত্যাদি ।
- টারশিয়ারি হাসপাতাল , এটি বলতে অত্যন্ত বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি এবং যত্ন বোঝায়। যেমন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা ইনস্টিটিউট।
শিক্ষন হিসাবে হাসপাতালের শ্রেনিভাগ।
শিক্ষন হাসপাতালে হাতে কলমে শিক্ষাদান চলছে।- মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- টিচিং হাসপাতাল মেডিকেল স্কুলগুলির সাথে সংযুক্ত, যেখানে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সে কারনে রুগীরা প্রায় ফ্রি চিকিৎসা লাভ করেন ।
- জেনারেল হাসপাতাল।এই হাসপাতালগুলি একাডেমিক স্বাস্থ্য সুবিধা বা সমাজ-ভিত্তিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হতে পারে। তারা এই অর্থে জেনারেল, যে তারা সমস্ত ধরণের চিকিত্সা এবং অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ভাল এবং তারা তুলনামূলকভাবে স্বল্পমেয়াদী যত্নের প্রয়োজন তীব্র অসুস্থতার রোগীদের দিকে মনোনিবেশ করে।
সিস্টেম বা কর্পোরেট হাসপাতাল সমূহ,
- এই হাসপাতালগুলি ব্যক্তি মালিকানাধীন। যেমন, এপোলো, ল্যাবএইড, গ্রিনলাইফ হাসপাতাল।
- কেন্দ্রীয় অuফিস বা প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত হয়, যেমন সরকারি হাসপাতাল সমূহ ।
- একটি নেটওয়ার্ক এবং সংস্থাগুলির একটি গ্রুপ যা চিকিত্সা সেবা সরবরাহ সমন্বয় করে, যেমন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, এপোলো, ফরটিস ।
- কর্পোরেট হাসপাতালের প্রশাসনের অনেক লোকের কেবল ব্যবসায় ডিগ্রি রয়েছে এবং তারা স্বাস্থ্যসেবার চিকিত্সার দিক সম্পর্কে কোনও ধারণা রাখেন না। তারা লাভ দেখে এবং রোগীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে না। দিনশেষে বদনামের ভাগীদার হোন সেখানের ডাক্তাররা।
১৭, হাসপাতালের নিরাপত্তা
- বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতাল সমূহে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য কোন নিরাপত্তা কর্মী নেই। রুগীর স্বজনের সাথে ভুল বোঝাবুঝির ফলে স্থানীয় মাস্তান ও সুযোগ সন্ধানী লোকজন প্রায়ই ঝামেলা সৃষ্টি করে। গবেষণা বলছে, যে সমস্ত দেশে চিকিৎসকরা নিরাপদ বোধ করেন সেসব দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নততর।
- অধিক রুগী, দীর্ঘ শিফট ও সংক্ষিপ্ত কর্মীদের নিয়ে কাজ করা অন্যতম চ্যালেঞ্জযুক্ত বিষয় ডাক্তার ও নার্সদের জন্য।
- অধিকাংশ হাসপাতালগুলি 24/7 খোলা থাকে , চিকিৎসক ও নার্সদের উপর নির্ভর করে সেবা, তবুও তারা অনুভব করেন যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাপ্য বেতন ও সম্মান দেয় না।
১৮, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ:
এদেশে ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার পদ স্বল্পতার কারণে অধিকাংশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসাররাই অন্যান্য সময় শিফট করে কাজ চালিয়ে যান ।
১৯, হাসপাতালের বিল কি জিনিস ?
আমরা অনেকেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আসলেও আমার চিকিৎসা বিল কে দিল তা জানি না।আবার বেসরকারি হাসপাতালের সেবা নেয়ার পর তাদের গলাকাটা বিল দেখে যারপরনাই বিরক্ত হই ।
এই পৃথিবীতে 200 এর অধিক দেশ আছে যেগুলির অধিকাংশ দেশ জনগণকে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারেনা ।
মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো রুগীদের সম্পুর্ন ফ্রি চিকিৎসা দেয়। রুগীদের চিকিৎসা ব্যয়ভার সরকার বহন করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনামূল্যে চিকিত্সা করার মতো কোন হাসপাতাল নেই। জরুরী চিকিৎসা হলেও, সমস্ত ফি আপনি বা আপনার বীমা সংস্থা দ্বারা পরিশোধ করতে হবে। তারপরও সেখানকার ষাট শতাংশ কম্যুনিটি হাসপাতাল অলাভজনক। রুগীর বিলের উপর বাড়তি লাভ নেই।
হাসপাতালের বিল দেয়ার জন্য পৃথিবীতে সাধারণত চারটি পদ্ধতি আছে:
- ১, বেভেরিজ মডেল
ব্রিটেনের National Health Service (NHS) এর প্রবক্তা William Beveridge এ পদ্ধতির আবিস্কারক। স্বাস্থ্যসেবা ও তার খরচ সরকার জনগনের ট্যাক্সের টাকায় চালাবে। যেভাবে পুলিশ বিভাগ চলে। এটি এখনও পর্যন্ত শুদ্ধতম পদ্ধতি।
ইংল্যান্ডে রুগীর হাতে হাসপাতালের বিল না দিয়ে তা সরকারি হিসাবে যায়। এসব বিষয়ে চিকিৎসক দক্ষ হন, এবং রুগীর বিল যেন গড় ট্যাক্স এর উর্ধে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখেন। বাড়তি বিলের জন্য ডাক্তারকে জবাবদিহি ও করতে হয়। এসব কেবল সরকারি হাসপাতালের জন্য।
ব্রিটেন ছাড়াও স্পেন, নিউজিল্যান্ড, হংকং প্রভৃতি দেশ এটি অনুসরণ করে।- ২, বিসমার্ক মডেল,
জার্মান চ্যান্সেলর বিসমার্ক এর নামানুসারে এ পদ্ধতিতে ১৯০০ শতক থেকেই ইন্স্যুরেন্স সিস্টেম অনুসারে রুগীর বিল রুগী ও সরকার যৌথভাবে “sickness funds” থেকে প্রদান করে। অতিরিক্ত বিল হলে রুগীর বেতন হতে কিস্তিতে কর্তন হয়। সরকারি ও বেসরকারি উভয়ই রুগীর জন্য। সিকনেস ফান্ডের টাকা খরচ না হলে গ্রাহক ফেরত পায়। সরকারও কোন লাভ করে না। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের জন্য এটি উত্তম ব্যবস্থা। জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ব্রাজিল ইত্যাদি এই নিয়মে হাসপাতালের বিল প্রদান করেন।
- ৩, জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা মডেল (NHI)
বেভেরিজ ও বিসমার্ক বিল সিস্টেমের মিশ্রিত রূপ। প্রতিটি নাগরিক সরকারি স্বাস্থ্য বীমায় বিনিয়োগ করেন, খুব সস্তা ও সহজ পদ্ধতিতে । হাসপাতালের বিল বীমা কোম্পানি হতে প্রদেয় হয় যা গ্রাহকের জন্য সহজলভ্য। কানাডা, কোরিয়া, তাইওয়ানে চলমান।
- ৪, ফ্রি পদ্ধতি
পৃথিবীর চল্লিশটি দেশে কার্যকর পদ্ধতি। একসাথে অসংখ্য দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা । ধনীরা অর্থ খরচ করে প্রাইভেট চিকিৎসা নেয়, দরিদ্ররা যতটুকু সম্ভব ফ্রি স্বাস্থ্য সেবা পায়, মধ্যবিত্তরা স্বার্থে যা কুলোয় ততটুকু সেবা পায়।
ডাক্তার হওয়ার সুবিধা অসুবিধা 💉ডাক্তারের ফি নেয়ার কারণ
মন্তব্যসমূহ