হোমিকর্সিন, বিশ্বকে নতুন এন্টিবায়োটিক দিলো বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা

হোমিকর্সিন, বিশ্বকে নতুন এন্টিবায়োটিক দিলো বাংলাদেশি বিজ্ঞানী

হোমিকর্সিন

ব্যাকটেরিয়া হল শক্তিশালী জীবাণু। তারা পরিবেশে এবং আমাদের শরীরের ভিতরে ও বাইরের সমস্ত জায়গায় বাস করে। অ্যান্টিবায়োটিক হল এমন ওষুধ যা মানুষ এবং প্রাণীদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে হয় ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে বা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ও সংখ্যাবৃদ্ধি কঠিন করে তোলে।

ব্যাকটেরিয়ার মতো জীবাণু যখন তাদের হত্যা করার জন্য ডিজাইন করা ওষুধগুলিকে পরাস্ত করার ক্ষমতা বিকাশ করে তখন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ঘটে। তার মানে জীবাণু মারা যায় না এবং বাড়তে থাকে। জীবাণু প্রতিরোধী সংক্রমণের চিকিত্সা করা কঠিন এবং কখনও কখনও অসম্ভব হতে পারে।

বর্তমান বিশ্বে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধের জন্য ঔষধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা সুপার বাগ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে।


হোমিকর্সিন
নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারে গবেষণা দলের সদস্যরা।

এন্টি বায়োটিক রেজিস্টান্স এর গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হল:

  1. মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস (MRSA)
  2. ভ্যানকোমাইসিন-প্রতিরোধী এন্টেরোকক্কাস (VRE)
  3. মাল্টি-ড্রাগ-প্রতিরোধী মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস (MDR-TB)

উদ্ভাবনী ওষুধগুলি প্রায়শই রোগীদের জন্য নতুন চিকিত্সার বিকল্প এবং জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্যসেবাতে অগ্রগতি বোঝায়। নতুন ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহৃত বিজ্ঞান জানা, পরীক্ষা ও উত্পাদন পদ্ধতি এবং নতুন ঔষধ গুলি চিকিত্সা করার জন্য ডিজাইন করা রোগ এবং জনস্বাস্থ্যর জন্য মানব সভ্যতার অবদান।

পাটের আঁশ হতে এন্টিবায়োটিক 

🎋পাট হতে নতুন এন্টিবায়োটিক

পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। এই পাটই আমাদের দিচ্ছে পলিথিনের বিকল্প। পাটজাত দ্রব্য আনছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও। এবার এই পাট থেকেই একদল বিজ্ঞানী একেবারে নতুন ধরনের একটি অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছেন।

পাট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিশ্বকে নতুন এক এন্টিবায়োটিকের খোঁজ দিলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। যা বেশ কয়েকটি শক্তিশালি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ভাল কাজ করছে। 

হোমিকরসিন নামের নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করে ইতিহাস গড়েছেন বিজ্ঞানীরা।  পাটের বীজে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া থেকে তারা এই অসামান্য অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন, যা শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং অনেক রোগীর জীবন বাঁচাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের দু’জন অধ্যাপক হাসিনা খান ও রিয়াজুল ইসলাম এবং জীন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে গবেষক দল এই এন্টিবায়োটিকের আবিস্কার করেছেন। 

হোমিকরসিন আবিষ্কার নিয়ে বিজ্ঞান গবেষণার বিখ্যাত জার্নাল ‘ন্যাচারে’ সেই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 

বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাট নিয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান। পাটের জীবন রহস্য বের করতে গিয়ে তিনি এর বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের অনুজীবের সন্ধান পান। 

সেই সব অণুজীবের প্রকার আর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কি হতে পারে তা জানার আগ্রহ থেকেই একই বিভাগের অণুজীব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিয়াজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে শুরু হয় নতুন গবষেণা। 

রিয়াজুল ইসলাম দেখতে পান পাটের তন্তুর খাজে খাজে ৫০ এরও বেশির অণুজীব বা ব্যাকরিয়া বাস করে। সেসব ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া খুজে পাওয়া যায়; যা তার শরীর থেকে এমন কিছু তৈরি করে যাতে আবার অন্য ব্যাকটেরিয়া মারা যায়।

তাহলে কি আছে সেই ব্যাকরিয়ার মধ্যে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কাজটুকু শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন। 

আর তাতে করেই বেরিয়ে আসে নতুন এক এন্টিবায়োটিকের খোঁজ যা বাঁচিয়ে দিতে পারে এন্টিবায়োটিক রেজিটেন্স হওয়া অনেক রোগীকে। 

তিন বছর ধরে চলা এই গবেষনায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ তাদের পাশে ছিলেন। গবেষক দলে বিসিএসআই এর প্রতিনিধি সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। 

'স্ট্যাফাইলোকক্কাস হোমিনিস' নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার ইতিমধ্যেই একটি সমকক্ষ-পর্যালোচিত জার্নাল নেচার রিসার্চ-এ স্বীকৃত হয়েছে, যার শিরোনাম "A plant endophyte staphylococcus hominis strain MBL_AB63 একটি অভিনব এনটিবায়োটিক, হোমিকরসিন এবং একটি পজিশন ওয়ান ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করে।"


হোমিকর্সিন নামকরণ:

বিজ্ঞান গবেষণার বিখ্যাত জার্নাল ন্যাচারে তাদের নতুন এন্টিবায়োটিক পাবার গবেষণা পত্রটি প্রকাশ পেয়েছে। যে ব্যাকটেরিয়া থেকে এই এন্টিবায়োটিকটি আবিস্কার হয়েছে তার নাম স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস (Staphylococcus Hominis MBL-AB63) আর পাটের বৈজ্ঞানিক নাম (Corcorus Olitorius) করকোরাস ওলিটোরিয়াস। তাই ব্যাকটেরিয়া আর পাটের সাথে মিলিয়ে এই নতুন এন্টিবায়োটিকটির নাম দেয়া হয়েছে (Homicorcin) হোমিকরসিন।  

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত বেশির ভাগ এন্টিবায়োটিকের সাথে এখন অনেক জীবাণু খাপ খাইয়ে ফেলেছে। হাসপাতালে থেকেই অনেকে সুপার বাগ হিসেবে পরিচত এমন কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হচ্ছেন যা প্রচলিত কোন এন্টিবায়োটিকে নিরাময় করা যাচ্ছে না। 

সেই রকম ব্যাকটেরিয়াও এই নতুন এন্টিবায়োটিকে ধংস হচ্ছে। আর নুতন আবিস্কৃত এই হোমিকরসিনের ৫টি ধরন পাওয়া গেয়ে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারে। আর সেই ইতিহাসে লেখা থাকবে বাংলাদেশের নাম। 

বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর ডায়াবেটিসের নতুন কারন আবিষ্কার 

মন্তব্যসমূহ