খাটো বা বেঁটে ছেলে মেয়েদের মনস্তত্ত্ব

খাটো বা বেঁটে ছেলে মেয়েদের মনস্তত্ত্ব

কাউকে "নেপোলিয়ন" হিসাবে উল্লেখ করা সাধারণত বোঝায় যে ব্যক্তি উচ্চাকাঙ্ক্ষী, দৃঢ়চেতা এবং সম্ভবত স্বৈরাচারী হিসাবে দেখা হয়।

যদি আপনি তরুণ বা তরুণী হন, এখনই সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার। যদি আপনি একটু খাটো ছেলে হন এবং সেইসাথে গ্লানি , সঙ্কোচ বা ভয়ডরহীন হন তবে সমস্ত পৃথিবী আপনার সাথে আছে।

বিপরীত লিঙ্গের অনেকে  আপনার জন্য আকুল হবে কারন মানুষ ব্যক্তিত্বের জন্য আকর্ষিত হয় , উচ্চতার জন্য নয় ( যদিও বিবর্তনকালীন চিন্তাভাবনার জন্য বেশিরভাগ মেয়ে লম্বা ছেলে পছন্দ করে)।


প্রাচীনকালে বিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে পুরুষরাই ছিল রক্ষক, তাই তাদের শারীরিক দিকটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছিল। যারা শক্তিশালী, তাদের পরিবার বা সঙ্গিনীর বিপদ হলে তাদের পরিবারকে রক্ষা করার সম্ভাবনা বেশি ছিল তাদের। খাটো পুরুষরা সুবিধাবঞ্চিত ছিল কারণ তাদের খাটো শরীর তাদের কার্যকারিতা সীমিত করত।

যাইহোক, এই বেঁচে থাকার দক্ষতা আজকের যুগে প্রয়োজনীয় নয়। উপরন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে , খাটো উচ্চতায় পেশীগুলি আরও ভালভাবে তৈরি করতে পারে এবং প্রায়শই আরও ভাল শারীরিক রিফ্লেক্স বা প্রতিফলন দেখায়।



নেপোলিয়নিং কমপ্লেক্স


নেপোলিয়ন কমপ্লেক্সের নামকরণ করা হয়েছে ফরাসিদের প্রথম সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নামে, যিনি অনুমান করা হয়েছিল যে তিনি ৫' ২" লম্বা ছিলেন (), যা প্রায় ১.৬৭ মিটার মাত্র যা ৫' ৬" এর নিচে যেটা উপনিবেশিক কলোনী মানুষের জন্য উপযুক্ত!

মনে করা হয় নেপোলিয়ন ক্ষমতা, যুদ্ধ এবং বিজয়ের মাধ্যমে তার উচ্চতার অভাব পূরণ করেছিলেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি ব্রিটিশদের দ্বারা লালিত এবং উত্সাহিত হয়েছিল, যারা মুদ্রণ এবং শিল্পে তাদের শত্রুকে হ্রাস করার জন্য একটি প্রচার প্রচারণা চালিয়েছিল, তার জীবনকালে এবং তার মৃত্যুর পরে।

১৮০৩ সালে, তাকে একটি স্বল্প-মেজাজ ছোট মানুষ হিসাবে ব্রিটিশ সংবাদপত্রে উপহাস করা হয়েছিল।

এই উপসর্গে ভুগবেন না। খাটো ছেলেরা তাদের উচ্চতার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক বা আধিপত্যবাদী আচরণ করে। অন্য পুরুষদের সাথে অযৌক্তিকভাবে ধাক্কা খাওয়া, এবং কোন কারণ ছাড়াই মারামারি করা খুব সাধারণ।

এর অন্য নাম "শর্ট ম্যান সিনড্রোম" যেখানে একজন মানুষ তার উচ্চতার কারণে অপর্যাপ্ত বোধ করে এবং অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক আচরণের সাথে এটিকে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে



নেপোলিয়ন কমপ্লেক্স থাকার অভিযোগে অনেক রাজনীতিবিদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যেমন জোসেফ স্ট্যালিন, যিনি ছিলেন ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (1.63 মিটার) (১৯০২ পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী) এবং হিটলারের বিখ্যাত তথ্য মন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস, যিনি ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি (1.65 মিটার)

কেউ লম্বা বলে তার সাথে তুলনা করবেন না বা তাকে এড়িয়ে যাবেন না। কেউ আপনার চেয়ে একফুট উঁচু, একফুট ঈর্ষা দিলে সেটায় সমতা আসবে না। তাতে জটিলতা বাড়বে ও কোনঠাসা হয়ে পড়বেন।

আমরা প্রত্যেকে স্বতন্ত্রভাবে বড় হয়েছি সেখানে উচ্চতা ও বয়স কিছু সংখ্যামাত্র। দিন শেষে সুখী হওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য।

একটু বেশি লম্বা চওড়া, স্বাস্থ্যবান মানুষ কে দৈত্যাকার মনে হবে আপনার কাছে। ভুলেও সেটা ভাববেন না। আপনি তারচেয়ে কিসে উঁচু বরং সেটি ভাবার চেষ্টা করুন, সেটা জ্ঞান , ধন, ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা বা অর্থসম্পদ হতে পারে। আবেগপ্রবণ হবেন না। সকলের সাথে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধা দিতে পারে এমন হীনমন্যতায় ভুগবেন না।

টম ক্রুজ বা মাইকেল জে ফক্স এদের ব্যক্তিত্ব তাদের অসাধারন করেছে। তাদের জীবনী পড়তে পারেন।

গবেষণায় দেখা যায়, শুধু মহিলারা লম্বা পুরুষদের পছন্দ করে না , সমকামী দম্পতিদের মধ্যেও এই লক্ষন লক্ষ্য করা গেছে।



খাটো ছেলেমেয়েদের করণীয়

খাটোদের জন্য সেরা পেশা গুলো কী!

তুলনামূলক যে কোন পেশায় তারা সফলতা পায় একাগ্রতা ও মেধার বিনিময়ে।


সেরা কাজের জন্য খাটো মানুষ কী পেশা নেবে ? নীরভাবনায় অনেক লোক কাজ করার জন্য, বিভিন্ন ধরনের চাকরি/ক্যারিয়ার করে, উদাহরণস্বরূপ; শিক্ষক, প্রশাসক, মনোবিজ্ঞানী, গ্রাহক পরিষেবা, অর্থ কর্মকর্তা, আইটি ইঞ্জিনিয়ার, ডাটা এন্ট্রি, ফ্রী ল্যান্সার এবং আরও অনেক। সঠিক চাকরি খোঁজার সময় চিন্তা করার মতো কিছু থাকতে পারে, যেমন; উপযুক্ত চেয়ার, ধাপ, অ্যাক্সেসযোগ্যতা ইত্যাদি।

খাটো ছেলেমেয়েদের করণীয় কি?



ব্রো, আপনার অনেক কিছুই করার আছে। যেমন, নিজস্ব উচ্চতা নিয়ে খুশি থাকতে হবে। প্রাচীনকালের চিন্তা বাদ দিয়ে আধুনিক মনস্ক হন। লম্বা না হওয়ার জন্য মনে কোন দুঃখ রাখা যাবেনা, তাহলে হেরে যাবেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটার কাম উইকেট কিপার মুশফিকুর রহিম খুবই প্রতিভাবান পুরুষ। বেঁটে খাটো খেলোয়াড় হলেও বদরাগী ও কোচের সিদ্ধান্ত মনঃপুত না হলে অন্যভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়।

সম্প্রতি টিটুয়েন্টিতে উইকেট কিপিংয়ে তাকে অন্যদের সাথে শেয়ারিং করতে বলায় তাঁর ব্যাটিংও খারাপ হচ্ছে। এটাই নেপোলিয়নিং কমপ্লেক্স।

যদি নিজ থেকে শক্তি অর্জন করতে না পারেন তবে একজন অভিজ্ঞ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে কুন্ঠিত হবেন না। একজন পেশাগত মানসিক থেরাপিস্ট আপনার পজিটিভ দিকগুলো বের করে আনবেন ও বদলে দেবেন আপনার চিন্তা ভাবনা।

ধন্যবাদ।

মন্তব্যসমূহ