প্যাক্সলোভিড, মলনুপিরাভির, করোনার মুখে খাওয়ার ঔষধ

প্যাক্সলোভিড, মলনুপিরাভির, করোনার মুখে খাওয়ার ঔষধ

প্যাক্সলোভির ও মলনুপিরাভির  

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোভিড ১৯ আক্রান্ত হয়ে করোনার মুখে খাওয়ার ঔষধ দ্বারা নিরাময় লাভ করেন, যা সত্যিই গেম চেঞ্জার!



একটি বড়ি রোগীদের  হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়া রুগীর ভিড় থেকে রক্ষা করতে পারে, বিশেষ করে এমন জায়গায় যেখানে টিকা দেওয়ার হার এখনও কম, যেমন অনেক নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ।


সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার করোনা চিকিৎসায়  এই মুখে খাওয়ার ঔষধ দুটি অনুমোদন দিয়েছে। ফলে যেকোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কোভিড১৯ পজিটিভ রুগীকে ঔষধটি তাঁর ব্যবস্থা পত্রে লিখতে পারেন। এর ফলে করোনা রোগ  দ্রুততম সময়ে নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।


এই রোগের চিকিৎসার জন্য শিরায় দেয়া ফ্যাভিরাপির ও রেমসিডিভির দেয়ার জন্য রুগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হত। কিন্তু মুখে খাওয়ার জন্য মলনুপিরাভির ও প্যাক্সলোভির ক্যাপসুল গ্রহণের জন্য রুগীকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।


করোনা রোগী যত বেশি অসুস্থ হয়, রোগের চিকিৎসায় ওষুধ তত কম কার্যকর হয়। কিন্তু সেজন্য তেমন কার্যকর এন্টিভাইরাস ড্রাগ বাজারে নেই, রেমসিডিভির ভাল ঔষুধ হলেও এটি গ্রহণ করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।


আমাদের প্রয়োজন ছিল,  একটি COVID-19 পিল, যার জন্য শুধুমাত্র একটি প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন হবে এবং উপসর্গ দেখা দিলে ফার্মেসিতে পাওয়া যাবে, যা প্রাথমিক চিকিৎসাকে আরও সহজ করে তুলবে।



2002-04 সালে গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সিন্ড্রোম (SARS) মহামারীটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং 2012 সালে মধ্যপ্রাচ্যের রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (MERS) প্রাদুর্ভাব কখনই তেমন ব্যাপক হয়ে ওঠেনি - যার অর্থ এই রোগগুলির বিরুদ্ধে অ্যান্টিভাইরালগুলি বিকাশের জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারকদের খুব কম উৎসাহ ছিল।  নভেল করোনা ভাইরাস কোভিড19 ঔষুধ কোম্পানি গুলোকে সুযোগ করে দিয়েছে কার্যকর এন্টিভাইরাস ওষুধ উদ্ভাবন করার।


বিখ্যাত ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্ম মার্ক গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছে  মলনুপিরাভির মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল সম্পর্কে ।  এটি তৈরি করা একটি অ্যান্টিভাইরাল পিল কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু অর্ধেকে কমিয়ে দিতে পারে। 


মলনুপিরাভির, এফডিএ দ্বারা অনুমোদিত হওয়ায়, এটি হবে কোভিড-১৯-এর প্রথম মৌখিক অ্যান্টিভাইরাল চিকিত্সা।  এখন ফাইজার যুক্ত করল পেক্সলোভিড।


তবে এই ক্লিনিকাল-ট্রায়াল সাফল্যের গল্পটি মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী গেম-চেঞ্জার কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়।  এমনকি যদি নিম্ন-আয়ের দেশগুলি ওষুধের সামর্থ্য রাখে, তবে তাদের অসুস্থতার প্রথম দিকে মলনুপিরাভির, পেক্সলোভিড রোগীদের চিকিত্সা করার জন্য ডায়াগনস্টিক ক্ষমতা নাও থাকতে পারে, যখন ক্লিনিকেল চিকিত্সা একটি পার্থক্য করতে পারে।



করোনার মুখে ওষুধের জন্য সাধনা: 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 1.2 বিলিয়ন মার্কিন ডলারে মলনুপিরাভিরের 1.7 মিলিয়ন কোর্স ক্রয় করতে সম্মত হয়েছে, যা প্রতি 5 দিনের কোর্সে প্রায় $700 পর্যন্ত  খরচ করে অর্থাৎ ৫ দিনের ঔষুধে ষাট হাজার টাকা খরচ ।  এটি রেমডেসিভির বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির দামের চেয়ে অনেক কম, তবে বিশ্বের বেশিরভাগের জন্য এটি এখনও ব্যয়বহুল।  মার্ক, যেটি রিজব্যাকের সাথে কম্পাউন্ডটি সহ-উন্নয়ন করছে, জেনেরিক ওষুধের পাঁচটি ভারতীয় নির্মাতার সাথে লাইসেন্সিং চুক্তি করেছে।  এই চুক্তিগুলি নির্মাতাদের ভারতে এবং অন্যান্য 100টি নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে তাদের নিজস্ব মূল্য নির্ধারণ করার অনুমতি দেয়।


তবে দরিদ্র দেশগুলি যদি ওষুধটি বহন করতে পারে তবে তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য ডায়াগনস্টিক ক্ষমতা নাও থাকতে পারে।  যদি উপসর্গ শুরু হওয়ার প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে মলনুপিরাভির দেওয়ার প্রয়োজন হয়।  এর জন্য প্রয়োজন যে দ্রুত লোকেদের রোগটি নির্ণয় করতে সক্ষম হওয়া। অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য  - "এটি আসলে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ"।



প্যাক্সলোভিডঃ

প্যাক্সলোভিড হলো করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত মুখে খাওয়ার ওষুধ আরেকটি ঔষধ । গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় পাঁচ দিনের প্যাক্সলোভিড কোর্স সম্পন্ন করে সুস্থ হওয়ার দুই থেকে আট দিন পর অল্পসংখ্যক মানুষ নতুন করে করোনা পজিটিভ হতে পারেন। তবে চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।


যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ফাইজারের তৈরি মুখে খাওয়ার পিল ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)।  এই অনুমোদনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো করোনা চিকিৎসায় কোনো অ্যান্টিভাইরাল পিল গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগে বাড়িতে বসে গ্রহণ করা যাবে। 


উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যাদের বয়স ১২ বা তার বেশি এবং যাদের ওজন ৮৮ পাউন্ডস তারা ডাক্তারের পরামর্শে এই পিল ব্যবহার করতে পারবেন।


করোনা শনাক্ত হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব এবং উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে পিলটি গ্রহণ করা উচিত।



প্যাক্সলোভিড হলো নিরম্যাট্রেলভির নামের নতুন অ্যান্টিভাইরাল ও রিটোন্যাভির নামের পুরাতন ওষুধের কম্বিনেশনে তৈরি পিল যা দৈনিক দুইবার তিনটি করে পাঁচ দিন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। 



ফাইজারের কোভিড ট্যাবলেট প্যাক্সলোভিড তৈরি হবে আরও ৯৫টি দেশে। এই ৯৫টি দেশের মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ওষুধটি বিক্রিতে রয়্যালটি নেবে না ফাইজার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে বেশ কম দামে ওষুধটি মিলতে পারে।



চুক্তির আওতায় অন্য দেশগুলোও ততদিন রয়্যালটি ছাড় পাবে, কোভিড যতদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ঘোষণা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘জনস্বাস্থ্য জরুরি’ পরিস্থিতি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত থাকবে।


যে সমস্ত কোভিড রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৮৯ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে ফাইজারের তৈরি প্যাক্সলোভিড।

ইতিমধ্যেই ফাইজার কর্তৃপক্ষ তাঁদের তৈরি ‘অ্যান্টিভাইরাল কোভিড ট্য়াবলেট প্যাক্সলোভিড ৯৫টি কম আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশে তৈরির অনুমতি দিয়েছে। ওই দেশগুলিতে কম দামে প্যাক্সলোভিড বিক্রির করার কথাও জানিয়েছে আমেরিকার ওষুধ প্রস্তুতিকারী সংস্থাটি। তাদের দাবি, এর ফলে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৫৩ শতাংশ উপকৃত হবেন।


এদিকে ফাইজারের ৯৫টি দেশের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ব্রাজিল, চীন, আর্জেন্টিনার মতো দেশ। রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ, সাব-সাহারার আফ্রিকান দেশগুলি। মূলত প্যাক্সলোভিড ট্যাবলেটের জেনেরিক সংস্করণ এই সব দেশে তৈরি করা হবে। যা কম দামে বিক্রি করা হবে এই দেশগুলিতে। ৯৫টি দেশের মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ওষুধটি বিক্রিতে রয়্যালটি নেবে না ফাইজার। সেক্ষেত্রে ভারত বা বাংলাদেশের মতো দেশগুলিতে বেশ কম দামে ওষুধটি মিলতে পারে।

সত্যিই কি গেম চেঞ্জার?

বাংলাদেশে প্যাক্সলোভিড ও মলনুপিরাভিরঃ

ফাইজারের প্যাক্সলোভিড বাজারে আসলে তা হবে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার দ্বিতীয় ওষুধ। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রথম ওষুধ ‘মলনুপিরাভির’ বাজারে এসেছে।

বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ড নামে ‘মলনুপিরাভির’ পাওয়া যাচ্ছে।


বাংলাদেশে এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের মুখে খাওয়ার ওষুধ ‘মলনুপিরাভির’ তৈরি করা শুরু করেছে স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারীরা।

স্কয়ার, বেক্সিমকো ও এসকেএফ তিনটি ভিন্ন ব্রান্ড নামে ওষুধটি বাজারে ছেড়েছে। ২০০ মিলিগ্রামের প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ঠিক করা হয়েছে ৫০ টাকা। একজন রোগীকে ৫ দিনে ৫০টি ক্যাপসুল খেতে হবে।

সূত্রঃ  নেচারসয়েন্স। 



মন্তব্যসমূহ