নাস্তা হিসেবে রুটি কতটা স্বাস্থ্যকর!

নাস্তা হিসেবে রুটি কতটা স্বাস্থ্যকর!

স্বাস্থ্যের কথা


যে সকল অফিসের বস খিটখিটে মেজাজের, খোঁজ নিয়ে দেখুন তারা সকালে ভালো নাস্তা করেননি, গ্লুকোজ স্বল্পতায় ভোগেন , অন্যদের উপর অযথা চটপাট করেন।

আমার সদা খিটখিটে বসকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম স্যার কি নাস্তা করেছেন। তিনি মুখ ব্যাজার করে বললেন , ডায়াবেটিসের রুগী, আলু ভাজি দিয়ে দুটো রুটি খেয়ে এসেছি। বেশি খেলেই ত তোমার ভাবি কটমট করে।

আমি বুঝে গেলাম। হাতির মত শরীরে ওই খোরাক ওনার সমস্যা করছে । নিজেরা চাঁদা দিয়ে প্রতিদিন সকাল এগারটায় বাইরে থেকে চিকেন স্যান্ডুইচ আর কফি আনাতাম, নিজেরাও খেতাম, স্যারকে দিতাম। কিছুদিন পর দেখলাম সদা খিটখিটে স্যার বেশ হাসিখুশী।

সকালের ব্যস্ততা ও নাস্তা

সকালে কোন কিছু না খাওয়ার চেয়ে রুটি খাওয়া ভাল। বাদামি ও সম্পূর্ণ গমের রুটি ভালো। যারা গম সহ্য করতে পারেননা তাদের জন্য যব, ভুট্টা বা মিশ্র শস্যের রুটি ভাল। অবশ্যই ময়দা নয়, সেখানে কোন আঁশ থাকেনা। 

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সকালের নাস্তার সাথে এক টুকরো রুটি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য;  কার্বোহাইড্রেট যত জটিল হয় তত ভাল।  শুধু উপলব্ধি করুন যে  সংযমই চাবিকাঠি।  সেই রুটি যদি হয় পুরো শস্যের তবে  কার্বোহাইড্রেট দ্বারা প্রদত্ত শক্তি ব্যবহার করার জন্য আপনার একটি পুরো দিন আছে;  আপনার সকাল শুরু করার আর কি ভালো উপায় হয় এরচেয়ে! 


আদৰ্শ নাস্তা 

আমাদের দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো সকাল। আর সকালের খাবার ভালো না হলে সারাদিন যতই খান সেই ক্লান্তি আপনার পিছু ছাড়বেনা।

একটি আদর্শ সকালের নাস্তা হবে:- 

  1. আঁশযুক্ত যা ভরাট অনুভূতি দেয় (ভাত বা রুটি)
  2. আমিষযুক্ত ,
  3. ভালো চর্বি ও ফল সমৃদ্ধ ।


নাস্তা হিসেবে রুটি

রুটি একটি উত্তম সংরক্ষণযোগ্য খাবার যা আঁটা বা ময়দা এবং পানি দিয়ে তৈরি করা হয়। লবণ, চর্বি, ইস্ট;এবং রান্নার সোডা রুটির সাধারণ উপকরণ হলেও আরও অনেক উপকরণ রুটির সাথে যুক্ত হতে পারে যেমন, দুধ

চিনি, মসলা, ফল, পেঁয়াজ, রসুনবাদাম ইত্যাদি। রুটি অন্যতম একটি প্রাচীন খাবার যা নিওলিথিকযুগেও ব্যবহৃত হত। 


যাইহোক, অনেক পুষ্টিবিদের মতে রুটি আসলে দুটি কারণে একটি অস্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট।  প্রথমত, যেহেতু বেশিরভাগ রুটির ময়দা মিহি, এটি আপনাকে অল্প পুষ্টি এবং সামান্য ফাইবার সরবরাহ করে।  কারণ এতে পরিমার্জিত কার্বোহাইড্রেট বেশি এবং ফাইবার কম, এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব দ্রুত বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

তাই নাস্তায় রুটি খেতে হলে পূর্ন শস্যের বা বাদামি আটার রুটিই উত্তম। 

বিকেলের নাস্তায় পরোটা বা রুটি:

প্রতিটি খাবারের বিশেষ পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ও বিশেষ সময়ও রয়েছে। কিন্তু রুটি বা পরোটার জন্য সুসংবাদটি হল আপনি দিনের যে কোনও সময় এটি খেতে পারেন!

খাদ্য সম্পূর্ণরূপে হজম করতে এবং ডিটক্স করার জন্য তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খাওয়া ভাল। সেটা সন্ধ্যে বেলা হলে মন্দ নয়। ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ রুটি আপনার ডায়াবেটিস, স্থূলতা, করোনারি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অবস্থার ঝুঁকি কমায়।

সন্ধ্যার খাবারে বেশিরভাগ কার্বোহাইড্রেট থাকলে রাতে ক্ষুধার অনুভূতি হ্রাস করে ও ওজন হ্রাসের সম্ভাবনাকে বাড়ায়। 



বাসি খাবার সাধারণত শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর বলেই মনে করা হয়। রান্না করার ১২ ঘণ্টা পর সেই খাবার খেলে ডায়েরিয়া পর্যন্ত হতে পারে বলে জানি আমরা। তা ছাড়া পেট খারাপ, বদহজম তো হয়েই থাকে। বাসি খাবার গরম করে খেলেও ক্ষতি হতে পারে স্বাস্থ্যের। 

কিন্তু সব বাসি খাবার কিন্তু ক্ষতিকারক না। যেমন আটার রুটি। 

যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা, পেট ফাঁপার মতো রোগে ভোগেন, তাঁরা রাতে ঘুমনোর আগে বাসি রুটি ও ঠান্ডা দুধ খান। দারুণ উপকার পাবেন।  

ডায়াবেটিসের মহৌষধ!

রুটির মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী। ফাইবার অনেকটা সময় পেট ভরাট রাখে। গমের তৈরি আটার রুটিতে অবশ্যই ফাইবার রয়েছে এবং তার পরিমাণও বেশ ভাল। ডায়াবেটিসের রোগীরা সকালবেলা জলখাবারে দুটো রুটি ও সবজির তরকারি খেতে পারেন। এছাড়া গমেরপরিবর্তে যব বা ওটস হলে আরো ভাল।
বার্লি ও ছোলার রুটি স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। ভারতের বেশ কিছু জায়গায় আটার বদলে বার্লির তৈরি রুটি বেশি জনপ্রিয়। এই রুটি শরীরে মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে তোলে। এতে ওজন কমে দ্রুত। পাশাপাশি বার্লির তৈরি রুটিতেও বেশ ভাল পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের সমস্যার জন্য ভীষণভাবে উপকারী।
চেষ্টা করুন ময়দার তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে।

মন্তব্যসমূহ