কচি আম পাতার খাদ্যগুন

আম পাতার খাদ্যগুন

আমের পাতা, উদ্ভিদগতভাবে Mangifera indica হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ, Anacardiaceae পরিবারের এই গাছের চিরসবুজ  পাতা, কচি অবস্থায় সুন্দর খয়েরি রং ও অনন্য ঘ্রানের হয় ।

আম গাছ থেকে আসা মিষ্টি, গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলের সাথে সকলেই পরিচিত, কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে আম গাছের পাতাও দারুন ভোজ্য।  কচি সবুজ আমের পাতা খুব কোমল, তাই অনেক সংস্কৃতিতে সেগুলি রান্না করে খাওয়া হয়। হাজার হাজার বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার হয়ে আসছে। দেখে নেয়া যাক কী এমন খাদ্যগুন আছে সেখানে। 

আম পাতার খাদ্যগুণ

ভিটামিন এ, সি এবং বি এর কল্যাণে ভরপুর; আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে আম পাতার  ব্যবহার বর্ণনা করা হয়েছে। আম পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

১। ডায়াবেটিস নিরাময়ে       

কচি আমের পাতায় ট্যানিন নামক অ্যান্থোসায়ানিডিন থাকে যা প্রারম্ভিক ডায়াবেটিস নিরাময়ে খুবই কার্যকরী।

আম পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে একটি বৈয়মে রেখে দিন। প্রতিদিন ১ চামচ আমপাতার গুঁড়ো গরম পানিতে সিদ্ধ করে চায়ের মত পান করতে পারেন অথবা তাজা পাতা পানিতে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন, সকালে পানিটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। ডায়াবেটিসের সূত্রপাত হয়েছে এমন রোগীদের জন্য আম পাতা অনেক উপকারি। শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ও হাইপারগ্লাইসেমিয়া কমাতে সাহায্য করে কচি আমপাতা।

২। হাইপারটেনশন কমায়

আমের পাতায় পলিফেনল এবং টেরপেনয়েড সহ বেশ কয়েকটি উপকারী উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে।

এগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আপনার কোষগুলিকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল নামক ক্ষতিকারক অণু থেকে রক্ষা করে

আম পাতায় হাইপোট্যান্সিভ উপাদান আছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য তিন সপ্তাহ যাবত প্রতিদিন কয়েকবার আম পাতার চা পান করুন।  

৩। আমাশয় ভালো করে

আম পাতা আমাশয় নিরাময়ে কাজ করে যা ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

রোদ থেকে দূরে ছায়াতে রেখে আম পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে নিয়ে মসৃণ পাউডার তৈরি করা হয়। আন্ত্রিক রোগ নিরাময়ের জন্য দিনে কয়েকবার এই পাউডার খেতে হবে।

৪। আঁচিল নিরাময়ে

পরিপক্ক আম পাতা পুড়িয়ে কালো করে গুঁড়া করে নিন। সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্টের মত তৈরি করে আঁচিলের উপরে লাগালে আঁচিল দূর হবে। আঘাত প্রাপ্ত স্থানে রক্ত বন্ধ করার জন্যও এই পেস্ট ব্যবহার করা যায়।

৫। উদ্বিগ্নতা কমায়

আম পাতা ভেজানো পানি ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে খেলে শান্ত বা স্থির হতে সাহায্য করে।

যেহেতু আম পাতায় রক্ত চাপ কমানোর উপাদান আছে তাই এটি অ্যাংজাইটি দূর করতেও খুব ভালো কাজ করে।

৬। কিডনি ও পিত্তপাথর অপসারণ করে

আম পাতার চা কিডনি ও পিত্তপাথর ভাঙ্গতে ও দেহ থেকে বাহির হয়ে যেতে সাহায্য করে। পাথর অপসারণের জন্য এক গ্লাস পানিতে আম পাতা চূর্ণ মিশিয়ে পান করুন।

৭। মাড়ির সমস্যায়

আম পাতার ছাই দাঁত ব্যথা কমতে সাহায্য করে। আম পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের বিভিন্ন প্রকার সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।    

৮।  চোখের সমস্যায় 

টেরপেনয়েডগুলি সর্বোত্তম দৃষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৯। ম্যাঙ্গিফেরিন,

একটি পলিফেনল যা অনেক গাছে পাওয়া যায় তবে আম এবং আমের পাতায় বিশেষত উচ্চ পরিমাণে পাওয়া যায়, এটি অসংখ্য উপকারের সাথে জমা হয়।

ম্যাঙ্গিফেরিন একটি বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ হিসাবে ঔষধ এবং খাদ্য সম্পূরক প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে এটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, ক্যান্সার, স্থূলতা, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ফেলতে পারে।

১০। বিরোধী প্রদাহজনক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে

ম্যাঙ্গিফেরিন-এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের ফলে আম পাতার অনেক সম্ভাব্য উপকারিতা পাওয়া যায়।

আম পাতা বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যের উপকার করে থাকে। তবে আম পাতার চায়ে আপনার অ্যালার্জির সমস্যা হয় কিনা তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। আম পাতায় আম গাছের আঠা বা কষ আছে কিনা দেখে নিতে হবে, তা না হলে এই কষ শরীরে  প্রবেশ করলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাছাড়া এই কষ ত্বকে লাগলে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।



ভাল আম চিনবো কী করে NEXT»

সূত্রঃ বিডিহেলথ


মন্তব্যসমূহ