আমরা কেন বাঘ বাঁচিয়ে রাখতে চাই? বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেলে কী হবে?

আমরা কেন বাঘ বাঁচিয়ে রাখতে চাই? বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেলে কী হবে?

আমরা কেন বাঘ বাঁচিয়ে রাখতে চাই? বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেলে কী হবে?

ছোটবেলায় যখন কেউ জিজ্ঞেস করতো বাঘ কি করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, তখন ভাবতাম বাঘের ভয়ে মানুষ বনে যাইতো না। ফলে বনের পরিবেশ ঠিক থাকতো। বড় হয়ে জানলাম, মানুষ বাঘের চেয়েও ভয়ংকর প্রাণী।

মরিশাসে ডোডো পাখির একমাত্র শিকারি ছিল মানুষ । জার্মান সাম্রাজ্যবাদীদের খুব পছন্দের খাবার ছিল টার্কির মত দেখতে এই পাখি।

কোন শিকারি সেই দ্বীপে না থাকায় এরা পেঙ্গুইনের মত বেশি উড়ার কসরত করেনি । ফলে 1600–1662 সালের মধ্যেই জার্মান অভিবাসীরা এই পাখি সব খেয়ে শেষ করে ফেলে। মরিশাসে যখন ডোডো পাখী বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন বাবলা গাছের কিছু প্রজাতি পুরোপুরি পুনর্জন্ম বন্ধ করে দেয়। এর ফলে বাবলা গাছের ওই প্রজাতির অভাবে তার ফল, ফুলের উপর নির্ভরশীল পশুপাখির সংখ্যাও মারাত্মক কমে গেছে।

সুতরাং যখন একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন এটি একটি দাগ রেখে যায়, যা পুরো বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। বাঘকে বাঁচানোর আরেকটি কারণ হল আমাদের বনগুলি জলাবদ্ধ এলাকা যা জলের আধার । বাঘ হল শীর্ষ শিকারী, বাঘের অভাবে চিতা বাঘ, বন্য শুকর, শিয়াল ইত্যাদি প্রাণী বৃদ্ধি পায়, যা কৃষকের ফসল ও প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে। মানুষই সাইবেরিয়ান টাইগারদের বাসভূমি ধ্বংস করেছে।

বাঘের বেঁচে থাকার প্রধান হুমকি হচ্ছে মানুষ কর্তৃক শিকার, আবাসস্থল ধ্বংস এবং অবৈধভাবে হরিণ শিকার করা, যা বাঘের প্রধান শিকার। বনের ভেতর সড়ক, নৌপথ, বন ধ্বংসের অন্যতম । কারণ তারা চোরা শিকারীদের প্রবেশাধিকার বাড়ায়, তাই রাস্তাগুলি বাঘের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি।

অতএব, বাঘ রক্ষা , এটি কেবল একটি সুন্দর প্রাণীকে বাঁচানো নয়। এটা নিশ্চিত করার জন্য যে আমরা একটু বেশি দিন বাঁচি কারণ বনগুলি আমাদের পরিবেশগত পরিষেবা দেয় যেমন পরিষ্কার বায়ু, জল, পরাগায়ন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি প্রদান করে। বন্য বাঘ গ্রহের এইসকল বাস্তুতন্ত্রের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তৃণভোজী প্রাণীদের শিকার করে বাঘ তৃণভোজী প্রাণী এবং বনভূমির গাছপালার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যেখানে বাঘ হঠাৎ কমে গেছে, তৃণভোজী এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে বন জঙ্গল উজাড় হয়ে গেছে। এর ফলে পৃথিবীর কার্বনের পরিমান বেড়ে জলবায়ু উষ্ণ হয়েছে। এতে দেশে দেশে বন্যার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।

ডোডো পাখির একমাত্র শিকারি ছিল মানুষ, তেমনি বাঘেরও একমাত্র শিকারি মানুষ। হাতি বা বুনো মোষ দ্বারা বাঘ নিশ্চিহ্ন হবে না, বাঘ নিশ্চিহ্ন হলে মানুষের দ্বারাই হবে। সারা পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা মাত্র 4000 এর কাছাকাছি নেমে এসেছে। বাঘের অভাবে সাইবেরিয়া, জাভা, সুমাত্রা, কম্বোডিয়ার বনগুলো উজাড় হওয়ার পথে। হরিণ কিংবা বন্য শুকরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এরা লোকালয়ে চলে আসছে, প্রতি বছর কৃষকদের বিপুল সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।

আর তাই বাঘকে রক্ষা করতে হবে। দিতে হবে আবাস স্থল। কম্বোডিয়ার সরকার তাদের বনভূমিগুলি রক্ষা করতে ভারতের কাছে কিছু বাঘ উপহার চেয়েছে সেজন্য।

মন্তব্যসমূহ