ভারত থেকে বাংলাদেশে গরুপাচার বন্ধ হয়না কেন

 ভারত থেকে বাংলাদেশে গরুপাচার বন্ধ হয়না কেন


ভারত থেকে ছাগল বা ভেড়া বাংলাদেশে পাচার হয় না।  তাই ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৪র্থ। তবু এদেশে মাটনের দাম ভারত থেকে অনেক বেশি। আমার মতো ছোট সংসারী অনেকেই গরুর পরিবর্তে ছাগল কোরবানি দিতে ইচ্ছুক, কিন্তু তুলনামূলক গরুর চেয়ে ছাগলের দাম বেশি, মাংসও হাড্ডিসার । দেশে সত্যি  এত ছাগল উৎপাদন  হলে তার দাম নিশ্চয় কম হত ।

এদেশের কৃষিবিভাগের লোকজন ছাগলের সাথে নিজেদের সংখ্যা যোগ করে পরিসংখ্যান তৈরি করেন সম্ভবত। তাই দেশে এত ছাগল থাকতেও মধ্যবিত্ত খামাকা গরুর পিছনে দৌড়ায় । ছাগলের দাম কম হলে কে যাবে ভারতীয় গরু কিনতে!

অধমের মতে, মূল কারণ খামারিদের কুদৃষ্টিভঙ্গি ও কৃষিবিভাগের কাল্পনিক পরিসংখ্যান। । কম উৎপাদন করে বেশি দামে বিক্রি করবে, লাভও বেশি হবে। যতই পরিসংখ্যান বলুক দেশে কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত গরু আছে, বাস্তবে অসংখ্য মানুষ শেষদিকে হাটে গিয়ে গরু পান না।

শিক্ষার পিছনে পরিবারের বড় বাজেট লাগে। কিন্তু গরু ছাগল পালতে শিক্ষিত হওয়া লাগেনা। এদেশে কোটি কোটি অশিক্ষিত লোক, তবুও লাভজনক এ ব্যবসার চেয়ে গরু পাচার ই উত্তম মনে হয় তাদের কাছে । সীমান্তের ওপারে গিয়ে গুলি খেয়ে মরবে তবু কষ্ট করে গরু ছাগল পালতে রাজি নয় এসব লোক। যাদের নিজের জীবনের দাম নেই তারা ই এসব কাজে যুক্ত হয় । গরুচুরি করতে গিয়ে গুলি খেয়ে মরা লোকজন প্রকৃতপক্ষে "আগাছা-জনসংখ্যা।" এরা সমাজের ও পরিবারের কোন কাজে আসেনা। এসব গরুচোরদের জন্য ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রায়ই খারাপ হয়।  বৃদ্ধ, অসুস্থ গরুগুলোতে দেশের কসাইরা লাভবান হন, জনগন ও খামারীরা বঞ্চিত হোন ।

প্রোটিনের চাহিদা পূরণে মাছের পাশাপাশি জনপ্রতি প্রতিদিন ১২০ গ্রাম হারে মাংস খেলে সেটাকে মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ বলে ধরা হয়। তবে এটা বেড়ে ১৫০ গ্রাম বা ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হলে আমাদের শিশু কিশোররা পর্যাপ্ত প্রোটিন পেতো । এই প্রোটিনের অভাবে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কিন্তু কতজন মধ্যবিত্ত ওই পরিমান মাংসজাতীয় আমিষ খেতে পারবে দেশে! সেজন্য দেশি গরুর দাম ভারতীয় গরুর মানের হলে সীমান্তে পাচার এমনিতেই বন্ধ হয়ে যেত ও জনগণের আমিষের চাহিদাও পূরণ হত।

যতদিন বাংলাদেশে গরুর মাংসের চাহিদা থাকবে ততদিন সীমান্তে গো পাচার চলবেই। গরুচোরদের সাথে বিএসএফ এর সদস্যরাও জড়িত থাকে এই পাচারে , কারন লাভ অনেক বেশি ঝুঁকির অনুপাতে ।

আমাদের দেশে ভারতীয় গরু আসার বৈধ কোনও পথ নেই। কাস্টমসকে গরু প্রতি ৫শ টাকা দিলেই নাকি গরু বৈধ হয়ে যায়।

চিত্র, আপনা মাসে হরিণা বৈরী, কিন্তু গরুর মাংস তার নিজের শত্রু হবে কে জানত!

ভারত থেকে একটা নির্দেশনা আছে যে, তাদের দেশ থেকে যাতে কোন পশু বাইরে না যায়। এটা আমাদের জন্যও খুবই ভালো। কিন্তু দেশি খামারিরা সেই পরিমাণে গরু উৎপাদন করতে পারছে না , যা তুলনামূলক ভাবে ভারতীয় গরুর চেয়ে লাভজনক হয়। অথচ যথেষ্ট চাহিদা আছে বাজারে। কিন্তু সরকারি উদ্দীপনারও অভাব।

গতকাল এক সাংবাদিক এর মতে, রাজশাহীর সিটিহাটে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির আগে হাটে এখন দেশি গরুর পাশাপাশি আছে প্রচুর ভারতীয় গরুও। সেসব গরুর দাম তুলনামূলক কম।

এখন প্রশ্ন হল, কী করে বোঝা যাচ্ছে কোনটা ভারতের আর কোনটা বাংলাদেশের গরু! বলা হচ্ছে চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাটে পাঠানো ভারতীয় গরুগুলির গায়ে বিশেষ চিহ্ন থাকছে। সেই চিহ্ন থাকা অবস্থাতেই প্রকাশ্যে গরু বিক্রি চলছে। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার জলপথে মূলত চোরাকারবার চলছে।

বলছিলাম চাহিদার কথা । যে জিনিসের ব্যাপক চাহিদা আছে তা ফলাতে এদেশের কৃষক ও খামারিদের খুব অনীহা । এরা ধানটা ফলায় ভালো করে, যেখানে সরকার সার, বীজ , সেচের টাকা প্রভৃতি ভর্তুকি চামুচে করে ব্যাংক বা বিকাশ এ মুখে তুলে দেয়।

ধরুন পেঁয়াজের কথা । ভারতীয় সস্তা পেঁয়াজের ভয়ে বাংলাদেশি চাষিরা পেয়াজ উৎপাদন করতে পারেনা । হাজার মাইল পেরিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ যদি ২০ টাকায় বেচতে পারে তবে এদেশের কৃষক সেটা পারবে না কেন? যদিও কৃষি বিভাগ বলে পেয়াজের ২০% ভারতীয় বাকি ৮০% দেশি। ভারত পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দশগুণ বৃদ্ধি পায় দাম, পেঁয়াজ প্রমাণ করে এদেশের কৃষিবিভাগ সঠিক পথে নেই। কারন এদেশে আলুর যখন বাপ্মার ফলন হয় তখন সেটা তারা বিদেশ রপ্তানি করতে পারেনা।

ফার্মের আর কক মুরগির কারনে মুরগি খামারিরা দেশি মুরগির ডিম বা মাংস উৎপাদন করতে পারেনা। দাম বেশি হলেও বাজারে দেশি মুরগি ও ডিমের ব্যাপক চাহিদা আছে। কিন্তু খামারিরা কেন জানি বাজার জিনিসটাই বোঝে না, লাভ খুব ভালো বোঝে।

হাটে বিক্রির আগে ভারতীয় গরু, মোষের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা থাকছে না। ফলে ঝুঁকিও রয়েছে ভারতীয় গরু আমদানির। অনেক খারাপ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে দেশি গরুর মধ্যে।

গত দুদিন গরুর হাট ঘুরে এসেছি পকেটে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে। কিন্তু চড়া দামের জন্য কিনতে পারিনি, ছাগল সাইজের গরুর দামও আশি হাজার হাঁকছে। আমার মত গরীবের জন্য সস্তা ভারতীয় গরুই প্রয়োজন ।

প্রতিটি টিভি চ্যানেল তোতা পাখির মত বুলি আউড়াচ্ছে এবার খামারিদের লসে গরু বেচতে হবে! কেন লস হবে? খামারিরা নিজে গরু জবাই করে মাংস পাঁচশত টাকা কেজি হিসেবে এলাকায় বিক্রি করলেও লাভ হওয়ার কথা । যারা মৌসুমী ব্যবসায়ী, দুমাস আগে গরু কিনে মোটাতাজা করে দ্বিগুন দামে কোরবানির সময় বেচবেন বলে ঠিক করেছিলেন তারা লস খেতে পারেন।

হাটে ক্রেতা কম । কারন পরিচিত অনেক মানুষ জন ই আর্থিক দুরবস্থায় কোরবানি দিতে পারছেন না।

যেদিন এদেশের খামারিরা ভারতের গরুর কাছাকাছি দামে গরু বিক্রি করতে পারবে, সেদিন গরু পাচার আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে। গরুর মাংসের ব্যাপক চাহিদা আছে সারা বছর। সেটা জানা সত্ত্বেও এদেশের খামারিরা লাভজনক এই ব্যবসা কে নিজেরাই ধ্বংস করছে। চীনের মতো ব্যাপক উৎপাদনে যেতে অক্ষম। অল্প বিনিয়োগে অধিকলাভের সুখস্বপ্নে বিভোর থাকে।   ভারতীয় পেঁয়াজের মত ভারতীয় গরু না থাকলে এদেশের খামারিদের হাতে পড়লে ভবিষ্যতে মধ্যবিত্তকে আর গো মাংস খেতে হবে না, কোরবানি ও দিতে পারবে না।

মন্তব্যসমূহ