সবার করোনা সংক্রমণ হয়নি কেন?


স্বাস্থ্যের কথা


আপনার কি করোনা সংক্রমন হয়েছিল?


# করোনার কখনও একটি একক উপসর্গ নেই, কিন্তু উপসর্গের একটি গুচ্ছ ছিল।

লং কোভিডের তিনটি উপসর্গের বিভাগ রয়েছে - শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণ, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ থেকে উপসর্গ (যেমন বিপাকীয়, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল, স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্যান্য) এবং একটি সূচক হিসাবে জীবনের মান সাধারণভাবে খারাপ হওয়া, দীর্ঘ ক্লান্তি, ইত্যাদি।

অনেক লোক মনে করে যে তারা ডিসেম্বর ২০১৯ এবং ফেব্রুয়ারী ২০২০ এর মধ্যে কোভিড পেয়েছিল যখন একটি অদ্ভুত ফ্লু ঘোরাফেরা করছিল, এবং তখনও প্রমাণগুলি নেতিবাচক নির্দেশ করে — তাদের কোনও অ্যান্টিবডি নেই এবং কর্তৃপক্ষ বলে যে এটি করোনা ছিল না।

অনেক বেশি লোকের জীবন লম্বা কোভিডের সাথে শেষ হয়েছে যারা নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার আগে তীব্র অসুস্থতার সংস্পর্শে এসেছিল, ভুগেছিল এবং 2020 সালের শীত থেকে আমরা ক্লাসিক বলে মনে করি এমন কয়েকটি লক্ষণ থেকে ভুগেছে।

যদি আপনি স্বাদ এবং গন্ধের ক্ষতি, ক্রমাগত ক্লান্তি, হৃদস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, গুঞ্জন, মাথাব্যথা, ব্যায়াম করতে অক্ষমতা এবং ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে এক বা দুই মাস ধরে নিম্ন গ্রেডের জ্বরে ভুগছেন, এমনকি একটি হালকা, আপনার সম্ভবত কোভিড ছিল এমনকি যদি আপনি এটির জন্য ইতিবাচক পরীক্ষা না করেন।

সবার করোনা সংক্রমন হয়নি কেন?


# কোভিড -19 বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকট ৬০ লক্ষেরও বেশি মৃত্যুর কারণ হয়েছে।

যদিও আমরা জানি যে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, ধূমপান এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলি কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মারাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে, সম্ভবত তারাই করোনা জটিলতায় বেশি ভুগেছে।

বাচ্চাদের কোভিড সংক্রমণ খারাপ হয়নি কেন?


Covid-19 মহামারীর একটি স্থায়ী রহস্য হল যে শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাস থেকে রেহাই পেয়েছে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অসুস্থতার তীব্রতার কাছাকাছি কোথাও অনুভব করেনি।

কেন বেশিরভাগ শিশু কোভিড থেকে খারাপভাবে ভোগে না তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও কাজ করছেন।

অনেকগুলি তত্ত্বের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অধিক কার্যকর সহজাত ইমিউন রেসপন্স, গুরুতর কোভিডের মতো ইমিউন অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার কম ঝুঁকি, কম অন্তর্নিহিত সহ-অসুস্থতা এবং সম্ভবত উপরের শ্বাসযন্ত্রের এপিথেলিয়ামে কম ACE-2 রিসেপ্টর - রিসেপ্টর যা SARS-CoV-2 [কোভিড] আবদ্ধ করে।

কেন কিছু লোক অসুস্থ হয় নি?

ধরা যাক, স্বামী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। স্ত্রী সার্বক্ষণিক তাঁর পাশে থেকেও দিব্যি সুস্থ রয়েছেন। আবার এমন দম্পতি আছেন, স্বামী কঠোর আইসোলেশন মেনে চলেছেন, স্ত্রী ধারেকাছেও যাননি, তারপরও স্বামী করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।

কর্মস্থলে মাস্ক, স্যানিটাইজারের মতো সব স্বাস্থ্যবিধি মেনেও অনেক কর্মী একাধিকবার করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। আবার স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেও কিছু কর্মী সুস্থ রয়েছেন। চারপাশের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হলেও তাঁদের মাঝে থেকেও দিব্যি সুস্থ আছেন তাঁরা।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন এ ভাইরাসে। তবে এর মধ্যেও কিছু মানুষ তুলনামূলক স্বস্তিতে রয়েছেন। সংক্রমিত হওয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি থাকার পরও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন না। আর তাঁদের নিয়েই এবার গবেষণা।

গবেষকেরা বলছেন, এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। শরীরে রোগ প্রতিরোধী বিশেষ কোষ, বিশেষ জিন বেশি থাকা বা একই ধরনের ভাইরাসে যাঁরা আগে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের কাবু করতে পারে না করোনাভাইরাস।

তবে গবেষণার এ পর্যায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে নারাজ গবেষকেরা। এ ধরনের ব্যক্তিদের নিয়ে আরও গবেষণা চালাচ্ছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা। কিছু সম্ভাব্য কারণ হল:

১,দ্রুত ইমিউন প্রতিক্রিয়া:

এটি ব্যাপকভাবে বোঝা যায় যে কোভিড থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের ঝুঁকি বয়সের সাথে বেড়ে যায় কারণ আমাদের ইমিউন সিস্টেমগুলি সাড়া দিতে ধীর হয়ে যায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কম কার্যকর হয়।

বিশেষ করে, তাদের ৫০-এর দশকের লোকেদের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ৬০, ৭0 এবং ৮০-এর দশকের জন্য আবার বৃদ্ধি পায়, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র বলছে, ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সের লোকেরা খুব অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিছু অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার কারণেও প্রাপ্তবয়স্কদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে।

tojo

কোভিডের প্রতি প্রাপ্তবয়স্কদের এবং শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্যের দিকে লক্ষ্য করে বেশ কিছু সাম্প্রতিক গবেষণা হয়েছে, এবং এই দুটির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য পাওয়া গেছে এবং পরবর্তীতে আরও শক্তিশালী এবং "সহজাত" প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।

ওয়েলকাম স্যাঞ্জার ইনস্টিটিউট এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন দ্বারা পরিচালিত গবেষণা, এবং ডিসেম্বরে নেচার জার্নালে প্রকাশিত, শিশুদের শ্বাসনালীতে একটি শক্তিশালী "জন্মজাত" ইমিউন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, যা ইন্টারফেরনের দ্রুত স্থাপনার দ্বারা চিহ্নিত করা হয় - যা উপস্থিতিতে মুক্তি পায়। ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া হুমকির এবং ভাইরাল প্রতিলিপিকে প্রথম দিকে সীমাবদ্ধ করতে সহায়তা করে।

ইতিমধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, গবেষকরা একটি কম দ্রুত প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখেছেন যার অর্থ ভাইরাসটি "শরীরের অন্যান্য অংশে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিল যেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল।

২,‘টি সেল’ বেশি থাকাঃ


ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনের রোগ প্রতিরোধবিজ্ঞান-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড্যানি অল্টম্যান সিএনবিসিকে বলেন, যাঁদের শরীরে টি সেলের (রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন একধরনের কোষ) মাত্রা বেশি থাকে, তাঁদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

ইমপিরিয়ালসের ন্যাশনাল হার্ট ও লাংস ইনস্টিটিউটের গবেষক রিয়া কুণ্ডু বলেন, দেখা গেছে, ঠান্ডা-সর্দিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আগে থেকেই শরীরে উচ্চমাত্রায় টি সেল থাকলে করোনার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।


চিত্র, টি সেল কীভাবে ভাইরাস কে ধ্বংস করছে!

করোনা থেকে কিছু ব্যক্তির সুরক্ষিত থাকার পেছনে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ। তবে সুরক্ষা পেতে এটিই একমাত্র কারণ নয়। এমনটা ভাবার সময় এখনো আসেনি যে যাঁরা সর্দি-জ্বরে বেশি আক্রান্ত হন বা যাঁদের টি সেল বেশি, তাঁদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। করোনা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায় হলো দুই ডোজ ও বুস্টার টিকা নেওয়া।

ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার অনকোলজি বিভাগের শিক্ষক স্কট গটলিয়েব লরেন্স ইয়ং গত বুধবার সিএনবিসিকে বলেন, করোনার অমিক্রন ধরনে একবার আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতিরোধক্ষমতা খুব বেশি দিন কার্যকর থাকবে না।

তবে যাঁরা পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে বারবার করোনায় সংক্রমিতের সংস্পর্শে এসেছেন অথচ কখনোই করোনায় আক্রান্ত হননি, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে গবেষণা চলছে। তাঁদের মধ্যে হয়তো ২০ শতাংশের সাধারণ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তবে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকেও সংক্রমিত না হওয়ার পেছনে টিকার বড় ভূমিকা রয়েছে।

৩,টিকার ভূমিকাঃ


করোনার দুই ডোজ টিকা ও বুস্টার ডোজে হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। তবে টিকা করোনার সংক্রমণ থেকে ১০০ শতাংশ সুরক্ষা দেয় না।

কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুলের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু ফ্রিডম্যান সিএনবিসিকে জানান, কিছু ব্যক্তির করোনায় আক্রান্ত হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি টিকা নেওয়া বা আগে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, অনেকে দুই ডোজ টিকা ও বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরও অমিক্রনে সংক্রমিত হচ্ছেন। তবে তারপরও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে টিকা এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।’

ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ং অবশ্য বলছেন, সাধারণ সর্দি-জ্বরের কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও টিকা থেকে পাওয়া সুরক্ষা দুই মিলে কিছু মানুষের করোনায় আবার সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

কীভাবে করোনা ভ্যাক্সিন শরীরে কাজ করে »

৪,বিশেষ জিনের প্রভাবঃ


উপসর্গ নিয়ে করোনা সুস্থ বা উপসর্গবিহীন করোনার বিষয়টি নির্ভর করে জিনের সক্ষমতার উপর।

করোনার সংক্রমণ রোধে জিনগত বিষয়গুলোও ভূমিকা রাখতে পারে। ধরা যাক, দুজন ব্যক্তি করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অনেক বেশি উপসর্গ থাকতে পারে। আবার একজন উপসর্গবিহীন হতে পারেন। জিনের বৈশিষ্ট্যের কারণে এমনটা ঘটতে পারে।

ওই গবেষণায় এইচএলএ (মানবশরীরের শ্বেতকণিকার অ্যান্টিজেন) জিনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ জিনের সঙ্গে উপসর্গযুক্ত বা উপসর্গবিহীন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জড়িত। অল্টম্যান আরও বলেন, এইচএলএ-ডিআরবিওয়ান ১৩০২ জিন বেশি থাকলে উপসর্গজনিত করোনা রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

আবার ও কি করোনার মত মহামারী হতে পারে?


রোগের পূর্বাভাসকারীরা নিশ্চিত যে ১০ বছরের মধ্যে আরেকটি কোভিড-এর মতো মহামারী হওয়ার সম্ভাবনা ২৭% আছে

ডিজিজ এক্স
নতুন মহামারী কবে আসছে⁉️
▶️

সুত্র ঃ নেচার সায়েন্স

মন্তব্যসমূহ