ঝিঙা-পোস্ত বাইটস

ঝিঙা-পোস্ত

পোস্ত


নীল, ধূসর এবং সাদা পোস্তদানা জার্মানিতে পেস্ট্রি তৈরিতে ব্যবহার হয়।

বাঙালির খাবারের তালিকায় পোস্তর ভূমিকা অন্যতম। কাঁচা পোস্ত বাটা হোক বা ঝিঙে পোস্ত বাঙালিদের প্রায় সব পোস্তর রান্নাই প্রিয়।

হাড়কে মজবুত করে। কপার এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায়, পোস্ত বীজ হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে। বীজের মধ্যে থাকা ম্যাঙ্গানিজ প্রোটিন কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা হাড়গুলিকে গুরুতর ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

হজম ক্ষমতা উন্নত করে। পোস্ত বীজ অদ্রবণীয় ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং এটি হজম তন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। তার সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে কার্যকরভাবে চিকিৎসা করতে সক্ষম।

ইনসোমনিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। পোস্ত ঘুম প্ররোচিত করতে কার্যকর। এটি একটি শান্ত প্রভাব তৈরি করতে পরিচিত। পোস্তর বীজ মানসিক চাপের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। যেখান থেকে ঘুমও উন্নত হয়।


পোস্তদানা এক মিলিমিটারের কম লম্বা, কিডনির মত দেখতে এবং ছোট ছোট গর্ত বিশিষ্ট বহিরাবরণ যুক্ত হয়ে থাকে।৩,৩০০ টি পোস্তদানায় মাত্র এক গ্রাম ওজন হয় এবং ১ থেকে ২ মিলিয়ন পোস্তদানায় এক পাউন্ড হয়ে থাকে। এর প্রাথমিক গন্ধ যৌগ হলো ২-পেন্টেলফিউরান।

পোস্ত কি


আফিম, আফিম পাতা অথবা উভয়ই উৎপাদনের পাশাপাশি উপজাত হিসেবে পোস্তদানা চাষ করা হয়। অন্যদিকে শুধু পোস্তদানা চাষ করলে উপজাত হিসেবে আফিম পাতা পাওয়া যায়। বীজের শুটি এবং পাতার কথা বিবেচনা করলে বীজগুলো খুবই কম পরিমাণে মাদক ধারণ করে থাকে। প্রচুর পরিমাণে বীজ ধুয়ে আফিমের চা পাওয়া যেতে পারে। মাদকের মাত্রা অনুসারে এটি ৩০০ – ৪০০ গ্রামের মত হতে পারে।
পোস্ত হলো এক ধরনের তৈলবীজ যা আফিম থেকে পাওয়া যায়। হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন সভ্যতার লোকজন এই ছোট বৃক্কের মত দেখতে বীজটি চাষ করে আসছে। এই বীজগুলো আস্ত অথবা গুঁড়ো অবস্থায় বিভিন্ন খাদ্যে একটি মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি পিষে পোস্তদানার তেল তৈরি করা হয়।

পোস্ত শুধুমাত্র জিভের স্বাদই পূরণ করে না। জিভের স্বাদ পূরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও অনেক উপকার করে। পোস্ততে প্রচুর পরিমানে ক্যালশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, জিঙ্ক এবং প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থও রয়েছে।

পোস্তর বীজ কার্যকর ভাবে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। পোস্তর মধ্যে ওলিক অ্যাসিড নামক একটি অপরিহার্য উপাদান রয়েছে যে কারণে এটি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।


কোনো কোনো এলাকায় পোস্তদানা চাষ করার ক্ষেত্রে আফিম চাষ করা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। বীজের শুটি শুকিয়ে যাওয়ার পর যখন পোস্তদানা পেকে যায় তখন সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের পোস্তদানা সংগ্রহ করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে, আফিম সংগ্রহ করা হয় যখন বীজের শুটি সবুজ এবং তার ভেতরে প্রচুর কষ থাকে, কিন্তু সবেমাত্র বীজ জন্মাতে শুরু করেছে এমন সময়।রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

রান্নায় এবং খাবারে ব্যবহার

আস্ত বীজ

আস্ত পোস্তদানা মশলা হিসেবে এবং বিভিন্ন বেক করা খাবারের উপর এবং ভেতর সাজানোর জন্য প্রচুর ব্যবহার করা হয়। উত্তর আমেরিকায় পোস্তদানার মাফিন, কড়কড়ে করে ভাজা পাউরুটির টুকরো, ব্যাগেল (মন্ট্রেলের ব্যাগেলের মত), বিয়েলে এবং স্পঞ্জ কেকের মত কেকের মত খাবারের উপরে এবং ভেতরে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইউরোপে বন রুটি এবং নরম সাদা পাউরুটির উপরে সাদা এবং কালো পোস্তদানা ছিটিয়ে দেয়া হয় (উদাহরণস্বরূপঃ কোজোনাক, কালাচ, কোলাক এবং কোল্যাক্স)।

পোলিশ রান্নার পাশাপাশি বিভিন্ন জার্মান পাউরুটি এবং ফলাহারে পোস্তদানা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তিলের মত পোস্তদানাও কখনো কখনো হ্যামবার্গারের রুটিতে ব্যবহার করা হয়। নিউজিল্যান্ডের আঙ্কেল টবেতে তিন রকমের চিকন করে কাটা পোস্তদানা এবং অল্প শক্ত পনীর দিয়ে লে স্নেক নামের একটি খাবার বানানো হয়।

পেস্ট

পেস্ট্রির ভেতরের পুর মাঝে মাঝে ভালোভাবে গুঁড়া করা পোস্তদানা, মাখন অথবা দুধ এবং চিনির মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করা হয়। পোস্তদানার রোল তৈরিতে এর গুঁড়া ও ক্রয়স্যান্ট ব্যবহার করা হয় এবং মাঝে মাঝে সুগন্ধের জন্য লেবু অথবা কমলালেবু, রাম (মদ্য), কিশমিশ যুক্ত ভ্যানিলা, ঘন ক্রিম, দারুচিনি এবং সমান করে কাটা কাজুবাদাম অথবা আখরোট যোগ করা হয়।

বেক করা মিষ্টিজাতীয় খাবারের জন্য মাঝে মাঝে চিনির পরিবর্তে এক টেবিল চামচ জ্যাম অথবা অন্য কোনো সিরাপ মিষ্টি দ্রব্যের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে ভাল পুরের জন্য পোস্তদানা খুব ভালোভাবে এবং তাজা অবস্থায় গুঁড়া করতে হয়। কারণ এটি পেস্ট্রির পুরের মিশ্রণ এবং স্বাদের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কিছু মোন্সট্রিয়েজেল রেসিপিতে পোস্তদানা দুই ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় অথবা দুধে সিদ্ধ করা হয়। উজবেকিস্তানের একটি পোস্তদানার কেক তৈরির রেসিপিতে পোস্তদানা ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করে, সারা রাত দুধে ভিজিয়ে রাখতে বলা হয়।

রান্নায় ব্যবহার


জার্মান মন্সটোলিন। পোস্তদানা (পাপাভের সোম্নিফেরম) মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন অংশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। পরিপক্ব, চিনিমিশ্রিত গুঁড়ো করা পোস্তদানা পাস্তার সাথে খাওয়া হয় অথবা দুধ দিয়ে সিদ্ধ করে বিভিন্ন পেস্ট্রি বা মিষ্টির পুর বা উপরে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। পরিপক্ব বীজগুলো কারখানায় বা বাড়িতে বের করে নেওয়া হয়। তবে এটি সাধারণত ম্যানুয়াল পোস্তদানার কলেই করা হয়ে থাকে

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রান্নায় পোস্তদানা ব্যবহার করা হয়। ভারত, ইরান এবং তুরস্কে পোস্তদানা ‘খাস-খাস’ বা ‘হাশাস’ নামে পরিচিত এবং এটি প্রচুর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাদা পাউরুটির ময়দা মাখানোর সময় এটি মেশানো হয় এবং গর্ভবতী মহিলা এবং নতুন মা দের এটি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঝিঙে


ঝিঙা একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বর্গ এবং উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় লতাজাতীয় উদ্ভিদ যা শসা কিউকুয়াবিটাশা পরিবারে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। ঝিঙা সাধারণত দুই প্রজাতির হয়, যথা, luffa aegyptiaca এবং luffa acutangula। মূলত সবজি হিসাবে চাষ করা হয়। প্রচুর আঁশ ও বিটা ক্যারোটিন / ভিটামিন এ যুক্ত।

ঝিঙা-পোস্ত বাইটস
রেসিপি

ঝিঙা-পোস্ত বাইটস

সেই একরকম করে আর কত খাওয়া যায় সবজি! পোলাও বা ভাতের সঙ্গে তো বটেই, বিকেলে চায়ের আড্ডায় ঝিঙে-পোস্ত বাইটস আনবে রিফ্রেশিং নতুনত্ব। 

উপকরণ

ঝিঙা-পোস্ত বাইটস

ঝিঙা ৪টি
ছোলার ডালের বেসন ১ কাপ
ময়দা ১ টেবিল চামচ
ধনেগুঁড়া ১/২ চা-চামচ
জিরাবাটা ১/৩ চা-চামচ
আদাবাটা ১/২ চা-চামচ
রসুনবাটা ১/২ চা-চামচ
বেকিং পাউডার ১/৪ চা-চামচ
কর্ন ফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ
মরিচগুঁড়া ১/২ চা-চামচ
হলুদগুঁড়া ১/২ চা-চামচ
লবণ পরিমাণমতো
পানি পরিমাণমতো
ডিম ১টা
তেল পরিমাণমতো

ঝিঙে পোস্ত বাইট প্রণালি

ঝিঙা-পোস্ত বাইটস
ঝিঙা বাইটস তৈরির প্রায় আধঘণ্টা আগে বেসনের মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। প্রথমে বাটিতে বেসন নিয়ে ঝিঙা, পানি, ডিম ও তেল ছাড়া সব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার পরিমাণমতো পানি দিয়ে মিশ্রণটি থকথকে করে গুলিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণে ডিম ভেঙে দিতে হবে। মিশ্রণটি ২০ থেকে ৩০ মিনিট ঢেকে রেখে দিতে হবে।

এরপর ঝিঙাগুলো ধুয়ে খোসা ছিলে নিয়ে ছবির মতো করে চাইনিজ ফ্যান শেপে কেটে নিতে হবে। সামান্য লবণ, হলুদ আর মরিচের গুঁড়া মাখিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। কাটার সময় অবশ্যই দেখে নিতে হবে কোনো ঝিঙে তিতা কি না। তিতা হলে ফেলে দিতে হবে।

এবার ভাজার জন্য কড়াইতে তেল গরম করতে হবে। তেল গরম হলে ঝিঙার পিসগুলো ভালোভাবে বেসনের মিশ্রণে চুবিয়ে সাবধানে ডুবো তেলে বাদামি করে ভাজতে হবে। মাঝারি আঁচে সময় নিয়ে ভাজতে হবে। মচমচে হলে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর গরম গরম পরিবেশনের পালা।



রেসিপি ও চমৎকার ছবিগুলো দিয়েছেন সেলিনা শিল্পী।

মন্তব্যসমূহ