বিপ্রতীপ কোণ
২০১৬ সালে চালু হওয়ার পর থেকে, অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম TikTok আশ্চর্যজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যাপটি এক বিলিয়নেরও বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে এবং সারা বিশ্বে ৭০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ (তাদের বেশিরভাগই তরুণ) প্রতিদিন এটি ব্যবহার করে।
প্ল্যাটফর্মটির উল্কা বৃদ্ধির ব্যাখ্যার মনের বিজ্ঞানের মধ্যে থাকতে পারে - বিশেষ করে, আমরা যখন অন্য ব্যক্তির গতিবিধি অনুকরণ করি তখন কী ঘটে তার বিজ্ঞান।
প্রায়শই একটি নাচের রুটিন ভাইরাল হিট হয়ে যায় এবং প্ল্যাটফর্মের অন্যান্য ব্যবহারকারীরা মূল ব্যবহারকারীকে অনুলিপি করে তাদের নিজস্ব সংস্করণ পোস্ট করে। অনুকরণ, এবং বিশেষ করে ভঙ্গি এবং নড়াচড়ার অনুকরণ, মানুষ কীভাবে একে অপরের কাছ থেকে শিখে এবং সংযুক্ত হয় তার হৃদয়ে একটি প্রাচীন আচরণ।
অনুকরণ এত শক্তিশালী কেন?
এটি জীবদের আচরণের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে "মিরর নিউরন" এর একটি সিস্টেমের মাধ্যমে অনুকরণ কাজ করে যা সমস্ত প্রাইমেটের মস্তিষ্কে বিদ্যমান বলে মনে করা হয়। আমরা যখন অন্য একজনকে একটি ক্রিয়া সম্পাদন করতে দেখি, তখন মিরর নিউরনগুলি মোটর কর্টেক্স জুড়ে আমাদের নিজস্ব দেহের উপর সেই আন্দোলনকে ম্যাপ করতে আগুন দেয়। যখনই আমরা মানুষের গতিবিধি দেখি (বা শুনি) তখনই এটি ঘটে, তা সে অ্যাক্রোব্যাট হোক, যোগব্যায়াম শিক্ষক হোক বা TikTok-এ নাচ করা কিশোর। (যদিও মিরর নিউরন প্রভাব দুর্বল বলে মনে হয় যখন আমরা একজন ব্যক্তির নড়াচড়ার ভিডিও দেখি, এটি রক্তমাংসে না দেখে, এটি এখনও মস্তিষ্কে উপস্থিত রয়েছে।)
কলার খোসায় বা পিচ্ছিল স্থানে কেউ পড়ে যাচ্ছে দেখলে আমাদের অনেকের খুব হাসি পায়। আমরা কেউ খারাপ মানুষ নই তবে কেউ পড়ে গেলে হাসতে হবে তা যেন সর্বজনীন! কিন্তু উচ্চ ছাদ থেকে কেউ পড়ে যাচ্ছে দেখলে তেমনটি হয় না, বরং আতঙ্কিত হই। কিংবা নিজ সন্তানকে পিছলে পড়তে দেখলে তার মায়েরও হাসি পায় না।
সবচেয়ে নার্ভাস জিনিসটি ইতিবাচক কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করা। আপনি যখনই বুঝতে পারেননা, নার্ভাস হাসতে শুরু করেন বা স্নায়বিক হাসি ফুটে উঠতে অনুভব করেন, তার পরিবর্তে এই আচরণগুলির মধ্যে একটি চেষ্টা করুন: একটি ধীর ট্রিপল নড / ধীরে মাথা ঝাঁকান ৩ বার বা মাথা কাত করুন।
কেউ কোন পিচ্ছিল জায়গায় পড়লে হাসি আসে কেন?
কেন আমরা অন্যের দুঃখে হাসি বা কাঁদি?
যে কোন হাসি শ্রেষ্ঠত্ব এর অনুভূতি। একটি জায়গা থেকে কারো দুর্ভাগ্যকে সরাসরি অনুসরণ করে হাসির বিস্ফোরণ হল 'হঠাৎ গৌরব' অনুভব করার একটি বর্ধিত কারন। জনসমক্ষে কেউ নিজেকে বোকা বানাচ্ছে এমন কাউকে দেখে হাসি বোধ করার একটি সহজ উপায় হতে পারে কারণ সেই মুহুর্তে আপনি তাদের ছোট করছেন।
এর কারণ বেশ জটিল ও কৌতূহলদ্দীপক। এর সাথে আমাদের সভ্যতা ভব্যতাও জড়িত। মানসিক রোগের উৎপত্তি ও এর সাথে জড়িত। অনেকের হাসি পেলেও মানসিকভাবে অসম্পূর্ণ ব্যক্তিরা প্রচন্ড ভাবে হাসবেন। ব্যাপারটা তার জন্য ভীষণ আনন্দ ও কৌতুক। এটি তাকে ছোটবেলার water kingdom কিংবা শিশুপার্ক এর সেই উপর থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ার sliding খেলার মত অনুভূতি দেবে।
আমাদের সকলেরই sense of humour আছে তবে তার স্বাদ ভিন্ন। ভানু বন্ধ্যুপাধ্যায় আর হুমায়ুন আহমেদ এর লোক হাসাবার ধরনও তাই ভিন্ন ।
এর জন্য মস্তিষ্কের মিরর নিউরন দায়ী।
এটি বাচ্চাদের প্লে ফ্রেম খেলার অনুভূতি! যা বড় হওয়ার পরও মস্তিষ্কে রয়ে যায়। কারণ কিন্ডারগার্টেনের আগে আমাদের মস্তিষ্কের ৯০% বৃদ্ধি ঘটে এটি ৩ বছর বয়সের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের আকারের প্রায় ৮০% এবং - ৫ বছর বয়সের মধ্যে প্রায় ৯০% । বাকিটা ১০% পূর্ণ বয়স্ক - পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ মস্তিষ্ক হল মানবদেহের কমান্ড সেন্টার৷
মিরর নিউরন
ডাস্টবিনে ময়লা না ফেলে রাস্তার পাশে ময়লা ফেলছেন যিনি তিনি কিন্তু দেখেছেন তার আগের জনও তাই করেছেন। একে বলে পুনরাবৃত্তি মূলক কাজ। আমরাও এটা শিখেছি আমাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে।'দেখে দেখেই শিখেছি'
গত দশকের neuroscience এর আলোকিত আবিষ্কার মিরর নিউরন । যখন কেউ নিজে কোন কাজ কল্পনা করেন ও অপরকে সেটা করতে দেখেন , মস্তিষ্কে দৃষ্টি স্থানিক বিভ্রম ঘটে। তার মগজের mirror neuron উদ্দীপিত হয় ও তিনি সেভাবেই সেই কাজটি করতে প্রবৃত্ত হন। তাদের মস্তিষ্কের স্বাধীন চিন্তা করার শক্তির অভাব থাকে।
'গুজবে কাউকে দুচারজন মিলে মারতে দেখে অন্যরাও এগিয়ে গিয়ে মারেন এই কারনেই। সেখানে কেউই নিজের বিচার বুদ্ধি ব্যবহার করেন না। এতে বোঝা যায় আমরা যতোই উন্নত হইনা কেন, সমাজের বেশিরভাগ মানুষ এখনো অসম্পূর্ণ মস্তিষ্কের বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। এটাই ওই সভ্যতার পরিচায়ক যেখানে পাশের লোকদের বা পূর্বপুরুষদের দেখেই সবাই শিখে, নিজেদের জ্ঞান ও বিবেক ব্যবহার করেনা কেউ ।
We learn through human interactions.
মিরর নিউরন নিয়ে আরো কিছু তত্ব।মিরর নিউরনের কাজ বানরের মত কাজ নামেও পরিচিত।
এই ধরনের নিউরন সরাসরি মানুষের এবং প্রাইমেট প্রজাতি ও পাখিদের মধ্যেও দেখা গেছে।
- মিরর নিউরন কি জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
মিরর নিউরনগুলি পর্যবেক্ষণমূলক শিক্ষাকে সমর্থন করে এবং অনুকরণকে উন্নীত করে বলে মনে করা হয়। মানুষের মধ্যে যা প্রধানত কথা বার্তা উপলব্ধি এবং উত্পাদনের সাথে জড়িত।
- মিরর নিউরন ছাড়া কি হবে?
মস্তিষ্কের এই অংশটিকে মানুষকে তাদের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করে বা তাদের আচরণ অনুকরণ করে অন্য মানুষের উদ্দেশ্য বুঝতে দেয়। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, এটি কথা বলা ও বোঝায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।
- সাইকোপ্যাথদের কি মিরর নিউরন আছে?
সাইকোপ্যাথদের একটি প্রতিবন্ধী মিরর নিউরন সিস্টেম থাকতে পারে - অর্থাৎ, একটি সুস্থ মস্তিষ্কে, যখন অন্য কেউ একটি ক্রিয়া করছে এবং যখন তারা নিজেরাই একই ক্রিয়া করে। তখন উভয়ই সক্রিয় করে তোলে নিউরনগুলির সাথে সমস্যা।
- শিশুদের কি মিরর নিউরন আছে?
জন্মের ৭২ ঘন্টার মধ্যে, মস্তিষ্কের মিরর নিউরন শিশুদের তাদের মুখের অভিব্যক্তি অনুকরণ করতে প্ররোচিত করে। ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে শিশুরা চাক্ষুষ তীক্ষ্ণতা বোঝে এবং মস্তিষ্কের বিকাশের সংমিশ্রণ তৈরি করে একটি সত্যিকারের "হাসি উপহার দেয় ।" সামাজিক হাসি হল শিশুর চারপাশের জগতের প্রতি তার প্রতিক্রিয়া।
- আমরা মিরর নিউরন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি ?
বিজ্ঞানীরা বলছেন যে আমরা মিরর নিউরনকে প্রশিক্ষণ দিতে পারব না। আপনি আপনার মানসিক সহানুভূতি (অন্যের আবেগ অনুভব করার ক্ষমতা), বা আরও সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে পারব না এবং কীভাবে মানসিক সহানুভূতি উন্নত করতে হয় তা আমরা এখনো জানি না।
সূত্র, scientific american https://www.google.com/amp/s/www.indiatimes.com/amp/lifestyle/why-we-laugh-when-someone-falls-down-375281.html
https://www.forbes.com/sites/nickmorgan/2014/11/20/are-mirror-neurons-a-myth-and-what-are-they-anyway/?sh=7340f46046e8
https://www.firstthingsfirst.org/early-childhood-matters/brain-development/
মন্তব্যসমূহ