বাংলাদেশের বাংলা কি আরবিকৃত বাংলা ভাষা?

বাংলাদেশের বাংলা কি আরবিকৃত বাংলা ভাষা?

বাংলাদেশের বাংলা কি আরবিকৃত বাংলা ভাষা?

"মতলবটা কি ?" মতলব, আরবি শব্দ  অর্থাৎ মানে বা অর্থ। সেটা বাংলায়  হয়ে দাঁড়িয়েছে 'দুরভিসন্ধি'। বাংলাভাষায় বিদেশি শব্দের মজাই অন্য রকম। এক বিদেশি শব্দ "মোক্ষম ধরেছেন মশাই।"
এখানে মোক্ষম (অব্যর্থ) শব্দটি এসেছে আরবি মহ্কম থেকে। শব্দের অর্থান্তর হয় নি, শুধু রূপান্তর ঘটেছে। 

আরবিকৃত বাংলা ( নাকি আরো বিকৃত বাংলা)! এতো বিরাট প্রশংসা। পান্তা খেয়েছি, তেহরী খেয়েছি, বিরিয়ানি খেয়েছি, এবার গুলশানের শুহুর পার্টিগুলিতে "খবসা" খুব জনপ্রিয় খাবার দেখলাম, খেলাম, সারাদিন আর ক্ষুধা লাগেনি। বিরিয়ানি সেতো ডালভাত হয়ে গেছে বাঙালির কাছে । এবার খাবসা, বার্কভা টেস্ট করার সময় এসে গেছে ।

বাংলা ভাষার উৎপত্তি

বাংলা ভাষা ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে উৎপত্তি ইন্দো -ইউরোপীয় ভাষা পরিবারে। অনেকে ধারণা করেন যে এটি সংস্কৃত থেকে জন্ম নিয়েছে। কিন্তু অনেক পণ্ডিত এবং ভাষাবিদরা বিশ্বাস করেন যে এটি মাগধী প্রাকৃত এবং পালির মতো ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে এসেছে। আমিও মনে করি তৎকালীন "সাংস্কৃতিক" ব্যক্তিগণ বাংলাকে যবনের (ম্লেচ্ছজাতি, অহিন্দু) ভাষা মনে করতেন। যবনের যৌবন দেখে তার ভাষায় কথা বলা কে ভয় পেতেন অনেকে। উইকিপিডিয়া মতে, বাংলা ভাষার পূর্বপুরুষ হচ্ছে প্রোটো-গৌড়-বাংলা, যা এসেছিল প্রোটো-গৌড়-কামরূপ ভাষা থেকে, সেটি আবার এসেছিল প্রত্ন-মাগধী ভাষা বা মাগধী প্রাকৃত থেকে।

এটি ছিল প্রাচীন মগধ রাজ্যের ভাষা। গৌতম বুদ্ধ এই ভাষাতে কথা বলতেন। মাগধী বা মগহী ভাষা ভারতের বিহার অঙ্গরাজ্যে প্রচলিত একটি ভাষা। ভাষাটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখার ইন্দো-আর্য উপশাখার পূর্ব দলের উপদলের অন্তর্গত একটি ভাষা। মাগধী ভাষাটি মাগধী প্রাকৃত নামক মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে উৎপন্ন হয়েছে।

মাগাধি প্রাকৃত বা মাগধি ভাষা থেকে উৎপন্ন হয়েছে ভোজপুরি, মৈথিলি, ওড়িয়া, বাংলা এবং অসমীয়া। ভারতের অঞ্চলের বিচারে এই পাঁচটি ভাষার আদি রূপ হিসেবে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর পশ্চিমাঞ্চলের প্রাকৃতকে বলা হয় 'পশ্চিম-মাগধি'। আর পূর্বাঞ্চলের মাগধিকে বলা হয় পূর্বাঞ্চলীয় মাগধি। মাগধী প্রাকৃত থেকেই বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে" এবং "মাগধী প্রাকৃতে"র পূর্বতর রূপ হচ্ছে "গৌড় প্রাকৃত"। ড. শহীদুল্লাহর মতে: "গৌড়ীয় প্রাকৃত হতেই গৌড়ীয় অপভ্রংশের মাধ্যমে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে "।

বাংলা ভাষা একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা

বাংলাভাষার বিকাশ

বাংলাভাষার বিবর্তনকে তিনটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে বিভক্ত করা হয় :

পুরাতন বাংলা (900/1000-1350), 

  • মধ্যযুগীয় বাংলা (1350-1800) এবং 
  • আধুনিক বাংলা (1800-)।
  • আধুনিক বাংলা পর্বে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাস বাংলার ইতিহাস৷ হিন্দু বাঙালিরা যে প্রথমটির তুলনায় দ্বিতীয়টিকেই পছন্দ করেছেন, তা-ও বোধগম্য৷ যা বোধগম্য নয়, তা হলো টেকচাঁদ ঠাকুর, কালীপ্রসন্ন সিংহ থেকে শুরু করে বঙ্কিমচন্দ্র, গিরীশচন্দ্র অবধি মুসলমানদের সম্পর্কে নানা তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য৷

    ডেটলাইন : ১৯১১ সাল;বঙ্গভঙ্গ রদ (বঙ্গভঙ্গ রড!) কলকাতা আর ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী, বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার দ্বিতীয় শহর রইল না৷ কলকাতায় বাংলাভাষা প্রান্তিক হয়ে পড়ল।

    সেই হিসেবে আরবিকৃত বাংলাভাষার বিবর্তন হয়ে গেছে, এটা অনেক স্মার্ট, সুবহানাল্লাহ! মাশাল্লাহ। সত্যি বলছি খেয়েছিনু , গিয়েছিনু, অনেক সয়েছিনু, ,,,,,প্রেম করেছিনু, আর তো প্রাণে সয় না।

    সংস্কৃত, মাগধি, প্রাকৃত, এখন আরবিকৃত, (নাকি অরবিকৃত!) । দারুন বিবর্তন। সংস্কৃত, আরবি এ দুটোও বাংলার মত সুপ্রাচীন মহান ভাষা। সংস্কৃত হারিয়ে গেছ , বাংলা আরবি টিকে আছে। তাই কিছু মিথ্সক্রিয়া হতেই পারে।

    আমি ত আতংকিত ছিলাম হিন্দির আগ্রসন নিয়ে, কিন্তূ পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা আর হিন্দি রোমান্টিক গান খায়না, তারচে ফিউশন বাউল, পল্লী, লালন গীতি, কাঁচা বাদাম, গোলি বয়, মুর্শীদ গো, বেশি জনপ্রিয়।


    তবে মজার বিষয় হচ্ছে বাংলা ভাষা সংস্কৃত থেকে জন্ম নেয়নি। সংস্কৃত ছিল শাস্ত্রীয় ভাষা। সাধারণ মানুষ একধরনের ভাষায় কথা বলত যাকে প্রাকৃত ভাষা বলা হয়। মাগধী অথবা গৌড়ী প্রাকৃত থেকেই বাংলা ভাষা ক্রমে বিকাশ লাভ করে। আরও মজার বিষয় হচ্ছে এই ভাষায় সাহিত্য চর্চায় সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা দেখিয়েছেন ফারসি ভাষী যবন শাসকরাই। মূলত তাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি লাভ ঘটে এবং এটি একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে কাঠামোগত রূপ পায়।
    কিন্তূ সংস্কৃত ক, খ এসব অনেকটা বাংলার মতোই মনে হয়, তাই না? এর কারণ হল, লিখিত ভাষা। সরাসরি সংস্কৃত থেকেই যে বাঙলা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে, এমন কথা মেনে নেওয়া চলে না। তবে 'প্রাচীন ভারতীয় আর্য' তথা সংস্কৃত ভাষাই যে ক্রমবিবর্তিত হায়ে 'মধ্যভারতীয় আর্য' তথা প্রাকৃতের মধ্য দিয়ে কালক্রমে বিবিধ নব্যভারতীয় আর্যভাষায় তথা বাঙলা, হিন্দী প্রভৃতি আঞ্চলিক ভাষায় পরিণত হয়েছে, এই বিজ্ঞানসম্মত অভিমতটিই সর্বজনমান্যতা লাভ করেছে।

    বাংলা ভাষার বিবর্তন; 

    বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে বাংলা ভাষা। তবে বাংলা ভাষার এ সৌভাগ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সেনরা একাদশ শতাব্দীতে পালদের পরাজিত করে সেন রাজত্ব কায়েম করে সেখানে জাতিভেদ প্রথা প্রতিষ্ঠা করে সংস্কৃত ভাষাকে রাজভাষা ঘোষণা করে। সরকারি কাজকর্মে সংস্কৃতি ভাষা চালু করার সঙ্গে সঙ্গে মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের প্রতি নিরুৎসাহিত করা শুরু হয়।

    শুধু নিরুৎসাহিত করা নয়, বাংলা সাহিত্য ও বাংলাভাষীদের হত্যা ও ধ্বংসের চেষ্টা হয়েছিল বিধায়, পাল রাজারা চর্যাপদ রক্ষার জন্য তা সুদূর নেপাল নিয়ে গিয়েছিলো লুকিয়ে রাখতে।

    ১২০৩ সালে তুর্কি মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী বঙ্গ বিজয়ের মাধ্যমে এ দেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।  ‘হীরা কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া যেমন জহুরির আগমনের প্রতীক্ষা করে, শুক্তির ভিতর মুক্তা লুকাইয়া থাকিয়া যেরূপ ডুবুরির অপেক্ষা করিয়া থাকে, বাংলা ভাষা তেমনি কোনো শুভ দিন, শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতে ছিল, মুসলিম বিজয় বাংলা ভাষার সেই শুভ দিন শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল। ’ (বাংলা ভাষার ওপর মুসলমানের প্রভাব, শ্রী দীনেশ চন্দ্র সেন)

    উর্দু ও হিন্দি ভাষার উৎপত্তি

    মুসলিম শাসনামলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সাহিত্যসেবীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। মুসলিম শাসনের পতনের যুগে উত্তর ভারতের মুসলিম শিক্ষিত সমাজের উদ্যোগে আরবি হরফ, আরবি-ফারসি শব্দভাণ্ডারে এবং হিন্দি উচ্চারণকে কেন্দ্র করে ‘উর্দু’ নামে একটি ভাষার উদ্ভব হয় এবং তা অল্প দিনের মধ্যে উত্তর ভারতের সংস্কৃতবহুল হিন্দুদের ব্যবহৃত হিন্দি রূপ নেয়। ১৭৫৭ সালে পলাশী বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশে ইংরেজ শাসনের সূত্রপাত ঘটে। উনিশ শতকের শুরুতেই ইংরেজ শাসকরা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ব্রাহ্মণ সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদের সহায়তায় বাংলা ভাষা থেকে মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত আরবি-ফারসি শব্দ বাদ দিয়ে সংস্কৃত বাংলা ভাষা গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়।


    সংস্কৃতের ‘টঙ্ক’ শব্দটি অনেক যুগ আগে মুদ্র্রা অর্থে বাংলার মানুষের কাছে হয়ে গেছে টাকা। এ টাকা শুধুই যে বিনিময়ের মাধ্যম, তা কিন্তু নয়। টাকা হচ্ছে একটি দেশের ঐতিহ্যের অংশ। ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি। যে কোনো দেশের টাকা সে দেশের ভাষা এবং সংস্কৃতির কথা বলে। বাংলা ভূখণ্ডে খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ/৫ম শতাব্দী থেকেই মুদ্রার প্রচলন থাকলেও সেগুলোতে কোনো লিপি বা অক্ষর ছিল না। পরবর্তীকালে বাংলাদেশে রাজত্বকারী স্বদেশি রাজাদের দ্বারা খ্রিষ্টীয় বিভিন্ন শতকে জারি করা মুদ্রায় ব্রাহ্মী ভাষার উপস্থিতি লক্ষণীয়।  বাংলার সুলতানেরা স্ব-স্বনামে মুদ্রা প্রচলন করেন প্রথম ।

    ২০০ বৎসরের ব্রিটিশ শাসন মানে বাঙলায় হিন্দু জমিদারি শাসন ও শোষণ । বাংলাভাষা এই সময় যথেষ্ট উন্নতি সাধন করে এইসব শোষক গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায়। তবে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পুর্ব বাংলা বা বাংলাদেশ এ জমিদারদের প্রভাবমুক্ত বাংলাভাষা চালু হয় এমনকি ১৯৭১ এর পর থেকে আমাদের ভাষায় আঞ্চলিকতার প্রভাব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে কোলকাতা কেন্দ্রীক জমিদারদের ভাষা পশ্চিম বাংলার ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের ভাষা মাটির মানুষের ভাষা, আমাদের কৃষ্টি নদী, মাটির আর সবুজ ফসলের দেশ। আমাদের ভাষা এই কৃষ্টিকে অনুসরণ করলেই এই ভাষার যথেষ্ট উন্নতি হবে।

    'সংস্কৃত' ভাষা কোথা থেকে এলো

    আনুঃ খ্রীঃ পূঃ পঞ্চদশ শতকের দিকে আর্য-ভাষাভাষী জনগােষ্ঠীর ভারত আগমন শুরু হয়। এই আর্যভাষাভাষী জনগােষ্ঠী তথা ভারতে আগত আর্যগণ যে ভাষায় কথা বলতেন, তাকে ভাষাবিজ্ঞানীরা 'প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা' (Old Indo-Aryan, O.I.A.) নামে অভিহিত করে থাকেন। এই ভাষারই একটা শিষ্টজনসম্মত সাহিত্যিক রূপ'বৈদিক সাহিত্যে'। সপ্তসিন্ধুর কূলেই প্রথম আর্য-উপনিবেশ গড়ে উঠলেও কালক্রমে আর্যরা গঙ্গা-যমুনার দুই কুল ধরে অগ্রসর হয়ে আনুঃ খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ শতকের দিকে গােটা মধ্যভারত পর্যন্ত অধিকার করে ক্রমশই পূর্বদিকেই সরে আসছিলেন। এই দীর্ঘকাল তাঁরা বিভিন্ন অনার্য জাতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশার ফলে তাঁদের ভাষায় দেখা দিয়েছিল বিরাট পরিবর্তন। তখন তারা এই ভাষার সংস্কার সাধন করেন-ফলতঃ সংস্কারকৃত এই ভাষার নাম হয় 'সংস্কৃত'। এই ভাষায় বিভিন্ন লােকায়ত সাহিত্য রচিত হয়েছিল তাই এটিকে সাধারণভাবে 'লৌকিক সংস্কৃত' নামে আখ্যায়িত করা হয়।

    প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা তাই অবিচ্ছিন্ন প্রবাহে মধ্য ভারতীয় আর্যভাষায় যখন রূপান্তরিত হলাে, কালের বিচারে সে সময়টা আনুঃ খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ শতক, নামের বিচারে তাকে বলা হয় 'প্রাকৃত'। এই মধ্য ভারতীয় আর্যভাষাও সুদীর্ঘকালে বিবর্তিত হতে হতে প্রায় দেড় হাজার বৎসর পর বাঙলা আদি নব্য ভারতীয় ভাষায় পরিণতি লাভ করে।

     বাংলাদেশ ও  বাংলাভাষা 

    বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছর পুরনো। চর্যাপদ এ ভাষার আদি নিদর্শন। বাংলা ভাষার লিপি হল বাংলা লিপি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত ও উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলার নবজাগরণে ও বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে  বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে তথা বাংলাদেশ গঠনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব বাংলায় সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

    ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেদিন বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপিত হলেও হিন্দু অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ থেকে অদ্যাবধি বাংলাকে ভারতের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার কোনো দাবি উত্থাপিত হয়নি।

    ভারতে একটি ভাষা চলে যায় নাম হিংলিশ ( হিন্দি + ইংলিশ) । দুটি অসম্পর্কিত ভাষা কে মিশিয়ে দেওয়া । একই রূপ( আরবি +বাংলা ) = আং‌লা ভাষা যা বাংলাদেশ এ চলে ।

    মজার গল্প পাকিস্তানের পাঞ্জাবে , পাঞ্জাবী ভাষা প্রায় মৃত, হিন্দি নয়  উর্দুর দাপটে । বাংলাদেশ এর বাংলার ভবিষ্যৎ কি 40 থেকে 50 বছর পর বোঝা যাবে । কে জেতে আরবী না বাংলা , তবে দুটি ক্ষেত্রেই জয় বাংলাদেশ এরই হবে ।

     বাংলা ভারতবর্ষ এ এখনো দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা। বাংলাভাষায় আরবি, ফার্ষির সংমিশ্রন যা হবার তা মোঘল আমলেই হয়ে গেছে । আরবি, উর্দুর সাথে সংমিশ্রনের সম্ভাবনা আর নেই, যতদিন মাঝে ভারত পর্বতসম দাঁড়িয়ে থাকবে। আর সংস্কৃত বা আরবি, আমরা একই জিনিস বারবার খাই না।

    তাই, বাংলা ভাষা এখন স্বাধীনভাবেই বিকশিত হচ্ছে বাংলাদেশে।

    সুত্র, https://www.millioncontent.com/2021/04/blog-post_6.htmlউইকি, 
    https://www.samakal.com/todays-print-edition/tp-islam-society/article/17093444
    https://www.jugantor.com/todays-paper/visibility/

    মন্তব্যসমূহ