বেল এর উপকারিতা

বেল এর উপকারিতা

বেল বিষয়ক কাব্য


কাঁচা-বেল ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগে ধন্বন্তরী। পাকা বেলের শরবত সুস্বাদু। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান।

অনেকে মনে করেন প্রতিদিন একটি করে বেল পাতা ঘি দিয়ে ভেজে চিনি সহ খেলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। বেল পাতা ত্রিফলক যুগ্মপত্র। অর্থাৎ একটা বোটায় তিনটি করে পাতা থাকে। হিন্দুদের শিবপূজায় ত্রিনয়নের প্রতীক হিসাবে বিল্বপত্র ব্যবহার হয়।
চিত্র, আমার হাসপাতালের প্রবেশ পথের সেই বেল গাছ
বাংলা ভাষায় বেল বিষয়ক প্রবাদবাক্য আছে বেশ কিছু। কেউ ন্যাড়া মাথা হলে "বেল মাথা " উপাধি অবধারিত। এছাড়াও, "বেল পাকলে কাকের কি?"
"ন্যাড়া বেলতলায় দু বার যায় না ।" যদিও পশ্চিমারা হরহামেশা যাচ্ছে কিন্তু বীর বাঙালি স্ত্রী বিহীন অচল, আর বাঙালির জন্য প্রথম স্ত্রী ই যে একমাত্র ও আদৰ্শ নারী সেটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বলে ।
 

বেল এর নামকরণ 

ইংরেজিতে বেলকে ডাকা হয় Wood Apple কারণ এ ফলের খোসা কাঠের মত শক্ত। বাংলায় ফলটির ব্যাপক কদর দেখে ব্রিটিশরা নাম দিয়েছে Bengal quince। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Aegle marmelos Correa ।  বেল রুটাসি (Rutaceae) অর্থাৎ লেবু পরিবারের সদস্য। এর সংস্কৃত নাম বিল্ব। বেলের জন্ম ভারতবর্ষে। কাঁচা ফলের রঙ সবুজ, পাকলে হলদে হয়ে যায়। ভিতরের শাঁসের রঙ হয়ে যায় কমলা বা হলুদ। পাকা বেল থেকে যে সুগন্ধ বের হয় তা অনন্য । পাকা বেল গাছ থেকে ঝরে পড়ে। গাছ যখন ছোট থাকে তখন তাতে অনেক শক্ত ও তীক্ষ্ণ কাঁটা থাকে। গাছ বড় হলে কাঁটা কমে যায়।

বেল এর ধৰ্মীয় গুরুত্ব 


বেলকে বলা হয় শ্রীফল কারণ হিন্দুদের পূজা-অর্চনায় বেলের পাতা ও ফল ব্যবহার করা হয়। হিন্দুদের শিবপূজায় ত্রিনয়নের প্রতীক হিসাবে বিল্বপত্র ব্যবহার হয়।  হিন্দুরা বেল কাঠ পবিত্র জ্ঞান করে বিধায় কখনো বেল কাঠ পুড়িয়ে রান্না করে না।

ফলের খাদ্যগুণ

১০০ গ্রাম বেলের শাঁসে থাকে:
  • জল 54.96-61.5 গ্রাম,
  • আমিষ 1.8-2.62 গ্রাম ;
  • স্নেহপদার্থ 0.2-0.39 গ্রাম ;
  • শর্করা 28.11-31.8 গ্রাম ;
  • ক্যারোটিন 55 মিলিগ্রাম ;
  • থায়ামিন 0.13 মিলিগ্রাম ;
  • রিবোফ্ল্যাবিন ১.১৯ মিলিগ্রাম ;
  • নিয়াসিন ১.১ মিলিগ্রাম ;
  • এসকর্বিক এসিড ৮ - ৬০ মিলিগ্রাম ; এবং
  • টারটারিক এসিড ২.১১ মিলিগ্রাম।


বেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও আমাশয়ে উপকার করে। আধাপাকা সিদ্ধ ফল আমাশয়ে অধিক কার্যকরী। বেলের শরবত হজমশক্তি বাড়ায় এবং তা বলবর্ধক। অনেকে মনে করেন প্রতিদিন একটি করে বেল পাতা ঘি দিয়ে ভেজে চিনি সহ খেলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। বেল পাতা ত্রিফলক যুগ্মপত্র। অর্থাৎ একটা বোটায় তিনটি করে পাতা থাকে।

বেল এর ক্ষতিকর দিক 

বেল পাতায় aegeline নামক এক প্রকার উপাদান থাকে যা ওজন কমানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। ২০১৪ সালে হওয়ায় দ্বীপে ৯৭ জন মানুষ aegeline দিয়ে তৈরি OxyElitePro ঔষুধ ব্যবহার করে হেপাটাইটিস রোগের শিকার হন। তাদের মধ্যে ৭২ জন aegeline সমৃদ্ধ OxyElite Pro ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেন। এটা ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হার্ট এট্যাক বা হৃদ রোগ ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার মতো সমস্যা হতে পারে । এটি ব্যবহারের ফলে যকৃত বা লিভারের প্রভূত ক্ষতি হয়।


কদ বেল

কৎবেল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Limonia acidissima। এটি রুটেসি গোত্রের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে কৎবেলকে Elephant Apple বা Monkey fruit নামে ডাকা হয়।

কদ বেলের উৎপত্তি

কয়েতবেলের আদি নিবাস ভারত (আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ সহ), বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা। এই প্রজাতিটির চাষ ইন্দোচিন এবং মালয়েশিয়াতেও চালু করা হয়েছে।

আকারে ছোট হলেও স্বাদে অতুলনীয় ফলের নাম কদবেল। এটি টক আর মিষ্টি স্বাদের ফল। এ ফলটি আশ্বিন মাসের শুরু থেকে বাজারে পাওয়া যায়। ওপরে শক্ত আবরণ আর ভেতরে নরম তুলতলে ছোট ছোট বিচি ভর্তি নরম অংশে ভরা। কাঁচা অবস্থায় এ ফল না খাওয়া গেলেও পাকা অবস্থায় এ ফলটি বেশ মুখরোচক। অনেকেই তাই লবণ আর মরিচ গুঁড়ার মিশ্রণ দিয়েও খেতে পছন্দ করেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিনি, লবণ, বিট লবণ, কদবেলের ভেতরের অংশ আর মরিচ মাখিয়ে খেতেই পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী ঝাল মিষ্টির পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে সারা বছর কদবেল সংরক্ষণ করতে কদবেলের আচার বানিয়েও রাখেন। টক স্বাদের কারণে যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তারাও খুব সহজে এ ফলটি খেতে পারেন।

কদ বেলের পুষ্টিগুন

প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি-এর ভান্ডার এ ফলটি তাই টক ।  যাদের মাড়ি ফোলা, কিংবা ভিটামিন সি-এর অপূর্ণতা আছে তারা এ ঋতুতে কদবেল রাখতে পারেন দুপুরের পরে খাবার তালিকায়। এ ছাড়া যাদের মুখের স্বাদের তারতম্য থাকে সব সময় তারাও এ মৌসুমি ফলটি খেতে পারেন। অন্যদিকে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বা রক্তশূন্যতা কমাতে কদবেল খুব উপকারী একটি ফল। পাশাপাশি যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তারা কাঁচা কদবেলের রস মুখে মাখতে পারেন। এতে ব্রণ কিংবা মেছতার দাগ দূর হবে এবং ত্বক তার আগের রূপ ফিরে পাবে। পাকা কদবেলের ভর্তা, কদবেলের আচারের পাশাপাশি অনেকেই কদবেলের শরবতও বানিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিচিসহ এ ফলটি খাওয়া যায় বিধায় অনেকেই কোনো কিছু ছাড়াও কদবেল খেয়ে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে কাসুন্দি মাখিয়েও অনেকে কদবেলের ভর্তা তৈরি করে থাকেন। যাদের কিডনিতে সমস্যা তারাও এ ফলটি খেতে পারেন। এ ছাড়া মৌসুমি ফলে থাকে হাজারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই মৌসুমি ফল আবশ্যক শরীর সুস্থ রাখতে যে কোনো ঋতুতে।

ব্যবহার
কয়েতবেলের শাঁস থেকে ফলের রস তৈরি করা হয়। কয়েতবেলের শাঁস থেকে জ্যাম তৈরি হয়। এই ফলের রসে অ্যাস্ট্রিজেন্ট ধর্ম রয়েছে। পাকা ফলে কেবল সবুজ মরিচ, চিনি এবং লবণ ছড়িয়ে আচার হিসাবে ব্যবহার হয়।

পুষ্টিগুণ
কয়েতবেলে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন, শ্বেতসার, আয়রন, স্নেহ পদার্থ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-বি এবং সি ইত্যাদি রয়েছে।



সূত্র, উইকি 

স্বাস্থ্যের কথা/ বাংলাভাষায় অনলাইন স্বাস্থ্য ম্যাগাজিন

মন্তব্যসমূহ