ছোলা
এর উচ্চ পটাসিয়াম-কম সোডিয়াম সামগ্রীর সাথে, বেঙ্গল গ্রাম আপনার রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, আপনার হৃদয়ের চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং কার্ডিয়াক স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
কম গ্লাইসেমিক সূচকের সাথে, বেঙ্গল গ্রাম আমাদের শরীরে আরও ধীরে ধীরে বিপাক হয় এবং ইনসুলিন স্পাইক প্রতিরোধ করে।
ছোলা বা চানা একটি ডালজাতীয় খাদ্যশস্য, বৈজ্ঞানিক নাম Cicer arietinum। ছোলার ডাল হল এর শুঁটি বা লেগুম Fabaceae পরিবারের উদ্ভিদ। শুঁটি বা legume বলতে এর গাছ বোঝায় যাতে এর পাতা, ডালপালা এবং বীজ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
একটি ডাল হল একটি শুঁটি গাছের ভোজ্য বীজ। উদাহরণস্বরূপ, একটি মটর শুঁটি একটি শিম, কিন্তু শুঁটির ভিতরের মটর হল ডাল।
ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। এতে আমিষ মাংস বা মাছের পরিমাণের প্রায় সমান। তাই খাদ্যতালিকায় ছোলা থাকলে মাছ মাংসের প্রয়োজন পরে না। কাঁচা ছোলা ভীষণ উপকারী। তবে ঘুঘনি , ছোলে ভাতুরে (!) বা ছোলার ডালের তৈরি ভাজা-পোড়া খাবার এত উপকারী নয়।
ছোলার প্রকারভেদ
বিশ্বব্যাপী ছোলা মূলত দুই ধরনের - দেশী ছোলা এবং কাবুলি ছোলা।
দেশী ছোলা বা Garbanzo ভারতীয় উপমহাদেশ, ইথিওপিয়া, ইরান ও মেক্সিকোতে চাষ হয়। এগুলি গাঢ় রঙের ও ত্বক অমসৃণ। দেশী ছোলাতে আঁশের পরিমাণ বেশি।
কাবুলি ছানা বা chickpea বা ছোলার মটর হল ফ্যাবেসি পরিবারের একটি বার্ষিক ডাল শস্য, সাবফ্যামিলি ফ্যাবোইডিয়া। কাবুলি ছোলা হালকা রঙের, মসৃণ ত্বকবিশিষ্ট। এগুলি আফগানিস্তান, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপ, ও চিলিতে চাষ হয়। বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশেও এর চাষ হয়।
কাবুলি চানার গুঁড়া অর্থাৎ বেসন দিয়ে অনেক ধরনের খাবার তৈরি করা হয়, যেমন পিঁয়াজি, বেগুনী, পাকোড়া, ইত্যাদি।
ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। খাওয়ার পর খুব তাড়াতাড়িই হজম হয়ে গ্লুকোজ হয়ে রক্তে চলে যায় না; বেশ সময় নেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল।
ছোলার ফ্যাট বা তেলের বেশির ভাগই পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।
এগুলি ডাল জাতীয় উদ্ভিজ প্রোটিনের সবচেয়ে ধনী উৎস। এক মুঠো বাংলা ছোলা খাবারের জন্য পর্যাপ্ত ফাইবার এবং ফলিক অ্যাসিড দেয়।
স্প্রাউটেড বা অঙ্কুরিত বেঙ্গল ছোলা সালাদ, তরকারি এবং স্ন্যাকসে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছোলার পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম রান্না ছোলা (চানা) এর মধ্যে রয়েছে প্রায়:
- শক্তি: ১৬৪ kCal
- প্রোটিন: ৮.৮৬ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ২৭.৪ গ্রাম
- ফাইবার: ৭.৬ গ্রাম
- চর্বি: ০.৫ গ্রাম
- ফোলেট: ১৭২ এমসিজি
- আয়রন: ২.৮৯ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম: ২৪৮ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: ৪৮ মিগ্রা
- ফসফরাস: ১৬৪ মিলিগ্রাম
ছোলার ডাল
ছোলার ডাল হল ভূমধ্যসাগরীয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের রান্নার একটি প্রধান উপাদান, যা হুমাসে ব্যবহৃত হয় এবং ভেষজ ও মশলা দিয়ে মোটা করে ভেজানো হলে প্যাটি এবং ভাজা, ফ্যালাফেল তৈরি করা হয়।
ভারতীয় রন্ধনশৈলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে, এটি সালাদ, স্যুপ এবং স্টু এবং তরকারিতে, চানা মসলায় এবং অন্যান্য খাদ্য পণ্যগুলিতে ব্যবহার করা হয় যাতে চনা (ছোলা) থাকে।
২০১৯ সালে, ভারত বিশ্বব্যাপী ছোলা উৎপাদনের ৭০% জন্য দায়ী ছিল।
চানার ডাল কি ভিজিয়ে রাখা দরকার?
বয়স্ক ডাল ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন কারণ সেগুলি রান্না করতে অনেক সময় নেয় এবং ভাল স্বাদও দেয় না। সম্ভব হলে পালিশ না করা ছানার ডাল ব্যবহার করুন।
চানার ডাল ভিজিয়ে রাখা: এটি সবসময় ভিজিয়ে রাখতে সাহায্য করে কারণ তারা দ্রুত রান্না হয় এবং স্বাদও ভালো হয়। কষ্টকাঠিন্য কম হয়।
অঙ্কুরিত ছোলা
ছোলা কিভাবে অঙ্কুরিত করবেন
- কোন ময়লা বা পাথর নেই তা নিশ্চিত করতে ছোলা বা কালা চানা বাছাই করুন।
- সমস্ত ময়লা উপাদান মুছে ফেলা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে তাদের কয়েকবার ধুয়ে ফেলুন।
- এগুলি একটি পাত্রে ২ কাপ জলে ভিজিয়ে রাখুন।
- ১২ ঘন্টা পরে, বেঙ্গল ছোলা বা কালা চানা একটু ফুলে উঠবে।
- এবার একটি ভেজা ও পাতলা রান্নাঘরের কাপড়ে রাখুন।
- এটি পাত্রের ভিতরে রাখুন এবং বেঙ্গল ছোলার উপর কাপড়টি ভাঁজ করুন। উপরে আলগাভাবে ঢাকনা রাখুন।
- তাদের কিছু বায়ু প্রবাহ পাওয়া উচিত এবং একই সময়ে আর্দ্র থাকা উচিত।
- এগুলিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে রাখবেন না কারণ তাদের বাড়ার জন্যও জায়গা দরকার।
- গ্রীষ্মকালে, আপনি পরবর্তী ১২ ঘন্টার মধ্যে কিছু স্প্রাউট দেখতে পাবেন। তাদের সম্পূর্ণরূপে ফুটতে আরও ২৪ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।
- আপনি যদি স্প্রাউটগুলি দীর্ঘ করতে চান তবে সেগুলিকে আরও কিছু সময়ের জন্য রাখুন তবে এই সময়ে সেগুলি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
স্প্রাউট বা অঙ্কুরিত ছোলার উপকারিতা:
অঙ্কুরিত প্রক্রিয়া পুষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি করে। প্রোটিন, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন সি এবং কে অ-অঙ্কুরিত উদ্ভিদের তুলনায় দ্বিগুন।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অঙ্কুরোদগম প্রোটিন বাড়িয়ে সহায়তা করে। স্প্রাউটগুলিতে উপকারী অ্যামিনো অ্যাসিড ভালোই রয়েছে এবং সেগুলো 30% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, স্প্রাউটে থাকা প্রোটিনগুলি হজম করা সহজ। এটি সম্ভবত অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ার কারণে।
সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা:
আমাদের কি খোসার সাথে ভাজা ছানা খাওয়া উচিত?
অক্ষত বাইরের স্তরের সাথে সর্বোত্তমভাবে খাওয়া উচিত যাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন থাকে, যা হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ রাখে।
আপনি যদি এই অতিরিক্ত কিলো নিয়ে লড়াই করে থাকেন, তাহলে ওজন কমানোর জন্য ভাজা ছানা বেছে নেওয়া জরুরি কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফাইবার রয়েছে।
তবে যারা আঁশ হজম করতে পারেন না, যাদের আইবিএস ডি বা ডায়রিয়া জনিত ব্যাধি তারা খোসা ছাড়িয়ে খেতে পারেন।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে:
অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছেন যে খাবারে ছোলা যুক্ত করলে টোটাল কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমে যায়।
ছোলাতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনের খাদ্য আঁশ আছে যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। আঁশ, পটাসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন বি-৬ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
এর ডাল আঁশসমৃদ্ধ যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৪০৬৯ মিলিগ্রাম ছোলা খায়, হৃদরোগ থেকে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৯% কমে যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:
আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখানো হয় যে, যে সকল অল্পবয়সীরা বেশি পরিমাণে ফলিক এসিডযুক্ত খাবার খান তাদের হাইপারটেনশন এর প্রবণতা কমে যায়।
রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে :
অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন ১/২ কাপ ছোলা, শিম এবং মটর খায় তাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। তাছাড়া ছোলায় অবস্থিত আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্টারির কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
ক্যান্সার রোধে:
কোরিয়ান গবেষকরা তাদের গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে বেশি পরিমাণ ফলিক এসিড খাবারের সাথে গ্রহণের মাধ্যমে কোলন ক্যান্সার এবং রেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকে নিজিদেরকে মুক্ত রাখতে পারেন।
এছাড়া ফলিক এসিড রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে এ্যজমার প্রকোপও কমিয়ে দেয়।
কোলেস্টেরল:
ছোলা শরীরের অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। ছোলার ফ্যাট বা তেলের বেশির ভাগ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
ডায়াবেটিসে উপকারী:
১০০ গ্রাম ছোলায় আছে: প্রায় ১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল।
ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল।
বেসন
৪ ধরণের ডাল দিয়ে বেসন হয়, যেমন, ছোলার ডাল, খেসারী ডাল, অরহের ডাল।
ছোলার ডালের বেসন সর্বোত্তম। প্রথমে প্রয়োজন অনুযায়ী বুটের ডাল নিয়ে ভলো করে ধুয়ে রোদে দিয়ে চুলায় প্যান বসিয়ে, তাতে ১০-১৫ মিনিটের মতো ভাজুন। তখন বুটের ডালটা হালকা আঘতেই ভেঙে যাবে।
এবার ব্লেন্ডারে নিয়ে সবটা বুটের ডাল গুড়া করে নিন। তারপর একটা বড় ছাঁকনি দিয়ে সবটা ছাঁকুন। এতে করে মিহি গুঁড়া হওয়া অংশ আলাদা হয়ে যাবে।
বাকিটা প্রয়োজনে আবারো ব্লেন্ডার করুন। আবারো ছেঁকে, এবার গুঁড়া করা মিহি অংশ আরো একদিন রোদে দিন। এটি ডায়াবেটিক আটা হিসেবে উত্তম।
মন্তব্যসমূহ