উচ্ছে ও করলা কী এক জিনিস!

উচ্ছে আর করলা 

দুটোই কিন্তু একই জিনিষ। সাধারনত ছোটগুলোকে উচ্ছে এবং বড়গুলোকে করলা বলে।


উচ্ছে ও করলা স্বাদে, গন্ধে ও গুণে একই ধরনের সব্জী হলেও, লম্বা জাতের উচ্ছেকে বলা হয় করলা। 

করলা 'র ইংরেজি নাম bitter melon/ তিক্ত তরমুজ - বৈজ্ঞানিক নামMomordica charantia নামেও পরিচিত - এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় লতাজাতীয় (এবং ফলজাতীয়) উদ্ভিদ যা করলা পরিবারের অন্তর্গত এবং এটি কুমড়া ও শসার  সাথে ঘনিষ্ট সব্জী ।

এটি বিশ্বজুড়ে এর ভোজ্য সব্জী হিসেবে চাষ করা হয়, যা এশিয়ান রন্ধনপ্রণালীর মধ্যে প্রধান হিসাবে বিবেচিত হয়।



উচ্ছে ও করলা যারা খেয়েছেন তাঁরা ইতিমধ্যে কিছু স্বাদের পার্থক্য পেয়েছেন । মূল পার্থক্য size বা আকারে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, size does not matter ,,,,. বাস্তবেও উচ্ছে করলার চেয়ে স্বাদ ও ভিটামিনে উন্নত, দামেও তেমনি। আর তাই উচ্ছে VIP দের জন্য VIV (ভেরি ইম্পরটেন্ট ভেজিটেবল)। সব্জী রপ্তানি কারকদের মতে, বাংলাদেশের ছোট উচ্ছে তার স্পেশাল স্বাদ ও আকারের জন্য পৃথিবীতে সেরা!

ভারতীয় হাইব্রিড উচ্ছে, করলার সংমিশ্রন 


অর্থাৎ একেবারে ছোট থেকে ৫-৭ সেন্টিমিটার লম্বাগুলোকে উচ্ছে এবং তার চেয়ে বড়গুলোকে করলা বলে। উভয়ের ক্রোমজম সংখ্যা সমান (2n = 22)। আবার করলার চেয়ে আকারে অনেক ছোট উচ্ছের খাদ্যমান অনেক বেশি।

করলা বা উচ্ছের ভিতর Momordicasoids নামে একটা উপাদান আছে এবং এর উপর নির্ভর করে করলার তিতা (bitterness) ভাব। Momordicasoids বেশী থাকলে তিতা বেশী হয়। আবার যেগুলো সাদাটে সেগুলো কম তিতা আর বেশী সবুজগুলো বেশী তিতা।

করলা বা উচ্ছে রক্ত পরিস্কার করে। করলার রস শরীরের ভিতরের অনুজৈবিক কার্যাবলী (Microbial activities) হ্রাস করে অর্থাৎ শরীরে রোগ হতে বাধার সৃষ্টি করে। করলা রসের এন্টিঅক্সিড্যান্ট ধর্ম রক্তের দুষিত পদার্থ বের করে দেয়, রক্তের যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা রোধ করে। এলার্জি, র‍্যাশসহ যে কোন ধরনের চর্ম রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।

আমাদের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বাড়ায় যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযোগী। তবে করলাতে কিছু উপাদান আমাদের রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে ও প্রদাহ রোধ করে।

কাটাস্থানে করলা বা উচ্ছের বা এর পাতার রস লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

ব্রেস্ট ক্যান্সার এর কোষ উৎপাদনে বাঁধার সৃষ্টি করে। করলা কৃমিনাশক (Nematicides) হিসেবে কাজ করে।

করলার ভিতর ব্রকলির চেয়ে দ্বিগুণ পরিমান বেটা-ক্যারোটিন, পালং শাকের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমান বেশী ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পরিমান বেশী পটাশিয়াম রয়েছে। বিষয়টাকে এভাবে বলা যায় যে, মানুষের খারাপ ব্যবহারেও বিরক্ত হবেন না তার ভিতর ভালো কিছু আছে যা আপনার কাজে লাগতে পারে।

করলা ও ডায়াবেটিস 

তিক্ত করলা একটি পরিপূরক বা বিকল্প ঔষধ হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো অবস্থার চিকিৎসার জন্য খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দ্বারা ব্যবহার অনুমোদিত নয়। ইউনানি চিকিৎসায় এর রস ডায়াবেটিক রুগীদের জন্য ভাল বলা হয়েছে। 

গবেষণা মতে, তিক্ত করলা শরীরের রক্তে শর্করা কমানোর সাথে যুক্ত। কারণ এর এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ইনসুলিনের মতো কাজ করে, যা শক্তির জন্য কোষে গ্লুকোজ আনতে সাহায্য করে।


করলার রস: 


আমরা কি প্রতিদিন করলার রস পান করতে পারি? যদি কোনও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিকার হিসাবে রসটি গ্রহণ করেন তবে সর্বাধিক করলার রসের সুবিধার জন্য এটি সপ্তাহে দুবার খাওয়া ভাল। ডায়াবেটিস রোগীদের রোগের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে 30-50 মিলি করলার রস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

করলার পুষ্টিগুন

এক কাপ ( ১০০ গ্রাম ) কাঁচা তেতো করলা সরবরাহ করে :

  •  ক্যালোরি: 20
  •  কার্বোহাইড্রেট: 4 গ্রাম
  •  ফাইবার: 2 গ্রাম
  •  ভিটামিন সি: রেফারেন্স দৈনিক গ্রহণের 93% (RDI)
  •  ভিটামিন এ: RDI এর 44%
  •  ফোলেট: RDI এর 17%
  •  পটাসিয়াম: RDI এর 8%
  •  জিঙ্ক: RDI এর 5%
  •  আয়রন: RDI এর 4%


উচ্ছে : 

গরম ভাতের সঙ্গে প্রথম পাতে অল্প তেলে ভাজা উচ্ছে। বাঙালিদের অতি পরিচিত পদ। বহু বাঙালি বাড়িতেই সারা বছর উচ্ছে খাওয়ার চল রয়েছে। যাঁরা রোজ উচ্ছে খান, তাঁদের ডায়াবিটিসের আশঙ্কা কমে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাঁদের পেটের অম্বল বা গ্যাসের সমস্যা থাকলে, তা কমিয়ে দেয়।

উচ্ছে তে খুব কম ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে। তাই এটি ওষুধ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। করলাতে উপস্থিত ওলিওনিক অ্যাসিড গ্লুকোসাইড চিনিকে রক্তে দ্রবীভূত হতে বাধা দেয়। 

কৃমির জন্য উচ্ছে খেলে কমে যেতে পারে এই সমস্যা।

সতর্কতা :
  • করলার রস অতিরিক্ত সেবনে পেটব্যথা, ডায়রিয়া হতে পারে।
  • ডায়াবিটিস রোগী এবং যে কোনও ওষুধ সেবনকারীরা করলার রস বা উচ্ছে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • আয়ুর্বেদ অনুসারে, করলার রস অতিরিক্ত সেবনে শুক্রাণুর গুণমান হ্রাস পায়। তাই আপনি যদি সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা ভাবেন, তাহলে এই রস না খাওয়াই ভালো।
  • গর্ভবতী মহিলা এবং হৃদরোগীদের করলার রস খাওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।



উপসংহার : তিক্ত করলা,  ফ্রুক্টোসামিন এবং হিমোগ্লোবিন A1c এর মাত্রা সহ দীর্ঘমেয়াদী রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণের বেশ কয়েকটি চিহ্নিতকারীকে উন্নত করতে দেখানো হয়েছে। এখনও, আরো উচ্চ মানের গবেষণা প্রয়োজন.


সূত্রঃ হেলথ কার্ট, 


মন্তব্যসমূহ