শুঁটকি মাছের সুবিধা অসুবিধা। শুঁটকি দিয়ে সবজি–চিংড়ি

শুঁটকি দিয়ে সবজি–চিংড়ি

স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে মাছ

অপুষ্টি এবং লুকানো ক্ষুধা এমন একটি সমস্যা যা বিশ্ব এখন প্রচন্ড মাত্রায় সম্মুখীন। ক্ষুধা রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং সংক্রমণ, এইভাবে, অসুস্থ স্বাস্থ্যের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

উচ্চমানের প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি (ইকোসাপেন্টাইনয়িক অ্যাসিড (ইপিএ) এবং ডোকোসাহেক্সায়েনোয়িক অ্যাসিড (ডিএইচএ) এর মতো দীর্ঘ-চেইন ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড সহ) এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি অনন্য উত্স যেমন শুষ্ক মাছ ক্রমবর্ধমানভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে উঠছে। আয়োডিন, জিঙ্ক, কপার, সেলেনিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার প্রতি শুষ্ক মাছের অবদান সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান মূলত সীমিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে যা অসন্তোষজনক।

অতিরিক্ত শিকার ও মাছের আকাল

মৎস্য খামারগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। নদীতে মাছ নেই। বাজারে মাছের উচ্চ মূল্যের জন্য মাছের আমিষ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় শুকনো মাছ দ্বারা সরবরাহকৃত পুষ্টির পরিমাণ এবং গুণমান সঠিকভাবে করার জন্য একটি ভালো ব্যবস্থার প্রয়োজন।ক্রমবর্ধমান মানব জনসংখ্যার স্বাস্থ্য ও মঙ্গলকে সমর্থন করার জন্য শুকনো মাছের সরবরাহ এবং পুষ্টির চাহিদা অত্যাবশ্যক।

শুঁটকি মাছের পুষ্টি

শুঁটকি মাছে যেসব পুষ্টি উপাদান থাকে।
প্রোটিন: শুঁটকি মাছ উচ্চমানের প্রোটিনের ভালো উৎস। এতে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ প্রোটিন পাওয়া যায়। শুঁটকি মাছের প্রোটিনে যে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, তা প্রায় ডিমের অ্যামিনো অ্যাসিডের সঙ্গে তুলনীয়।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: শুঁটকি মাছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

১০০ গ্রাম শুঁটকি মাছ থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রোটিন এবং ৩০০ ক্যালরি পাওয়া যায়। কিন্তু সমপরিমাণ গরুর মাংস থেকে প্রায় দ্বিগুণ ক্যালরি এবং তুলনামূলক কম প্রোটিন পাওয়া যায়।

শুঁটকির অসুবিধা

শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সময় প্রচুর লবণ দেওয়া হয়। তাই উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। * বাত ও কিডনির রোগীদের বেশি শুঁটকি খাওয়া উচিত নয়। * যাঁদের কিডনিতে ক্যালসিয়াম পাথর হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁরাও শুঁটকি এড়িয়ে চলবেন।

শুঁটকির প্ৰিয় কিছু রেসিপি

সবজিতে শুঁটকিতে স্বাদে একাকার

শখ করে বাসায় রান্না করি শুঁটকির তরকারি। মূলত খাবারে রুচির পরিবর্তন করতে শুঁটকি খাই। বাংলাদেশি হোটেলগুলোতে  শুঁটকি থাকলেও তার আগের সেই স্বাদ হারিয়ে নেই ।  কীটনাশক মেশানো  ভেজাল শুঁটকি ব্যবসায়ীর দাপটে প্রকৃত শুঁটকি ব্যবসায়ীর খুব অভাব ।

কক্সবাজারের শুঁটকি পল্লীর বড় বড় দোকান হতে বড় আলখেল্লা, বড় দাড়ি টুপিওয়ালার শুঁটকি কিনেও ঠকেছি অনেক । 

তবে ফিশারি ঘাটের থেকে কেনা শুঁটকিতে আমি পাই খাঁটি ঘ্রাণ। যেদিন স্ত্রী শুঁটকি রাঁধে সেদিন শুধু শুঁটকি দিয়েই খেয়ে ওঠার চেষ্টা করি‌। তাই তাকে বললাম, ‘রান্নাটা তুমি আমাকে শিখিয়ে দাও। সে বলল, এটা তো একদম সহজ। চলো  হাতে-কলমে শিখিয়ে দিই। কম তেলে কয়েক প্রকার সবজি আর চিংড়ি মাছ দিয়ে আজকে আমরা রান্না করব শোল মাছের শুঁটকি।

শুঁটকি দিয়ে সবজি–চিংড়ি রান্নার উপকরণ:


আড়াই চামচ তেল। লবণ। কিছু পেঁয়াজকুচি। হাফ চামচ হলুদের গুঁড়া, দেড় চামচ লাল মরিচের গুঁড়া, আধা চামচ ধনেগুঁড়া ও আধা চামচ রসুনবাটা। ১০০ গ্রাম শোল মাছের শুঁটকি, দুটি চেপা শুঁটকি ও ৫টি মাঝারি আকৃতির চিংড়ি মাছ।
২০০ গ্রাম পরিমাণ দুটো লাল আলু। একই পরিমাণ লম্বা আকৃতির বেগুন, সিম ও কচুর মুখি। কয়েকটি লম্বা করে কাটা কাঁচা মরিচ। সবগুলো ধুয়ে শুঁটকির সমান আকৃতির করে কাটতে হবে।

দুই পদের শুঁটকি সাথে চিংড়ি মাছ
প্রথমে তেলটা কড়াইয়ে দিয়ে লবণ দিয়ে দিতে হবে। গরম হওয়ার পর পেঁয়াজ আর রসুনবাটা দিতে হবে। শুঁটকির তরকারিতে সব সময় যত কম তেল দেওয়া হয়, তত স্বাদ হয়। তারপর একে একে সব মসলা দিয়ে অল্প আঁচে কষাতে হবে। যদি কড়াইয়ের তলায় মসলা লেগে যাওয়ার উপক্রম হয় ,  একটু জল দেবেন। মসলা কষানো হতে হতে আলাদা একটি তাওয়াতে শুঁটকি ও চেপা শুঁটকি হালকা করে ভেজে নেবেন। মসলা কষানো হলে প্রথমে দুটি চেপা শুঁটকি আর সামান্য জল দিয়ে নাড়তে হবে। চেপা শুঁটকিকে অনেকে সিদল বলে। চেপা শুঁটকি দেওয়া হচ্ছে মূলত ঘ্রাণের জন্য।

‘এখন তো হাতে-কলমে শিখিয়ে দিচ্ছি,  নিজেই রান্না করতে পারবে পাহাড়ে গিয়ে '। আবার রেসিপিতে যাই। চেপা শুঁটকির পর দিয়ে দেবেন শোল মাছের শুঁটকি আর চিংড়ি।
‘কম আগুনে কিছু সময় মসলা ও শুঁটকি জ্বাল দেওয়ার পর দিয়ে দেবেন লাল আলু। খানিক পর অন্যান্য সবজি দিয়ে আরেকটু সময় কষাবেন‌। এখন দেখবেন সবকিছু একটু মাখা মাখা হয়ে আসছে। তখন জল ঢেলে দেবেন। ১৫ মিনিট ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। তারপর কাঁচা মরিচগুলো ছেড়ে দিন। আবার ঢাকনা দিয়ে দিন। যাতে কাঁচা মরিচসহ সব ঘ্রাণ রান্নার ভেতর থাকে। আরও ১০ মিনিট জ্বাল দিয়ে নামিয়ে ফেলতে পারেন।’


এই তরকারি গরম ভাত দিয়ে খেলে খুব মজা।

‘রান্নাটা আসলে রেসিপি আর মসলার সঙ্গে আপনি কতটা মন দিয়ে করছেন, সেটির ওপরও স্বাদ নির্ভর করে।  শুঁটকির তরকারি আমি লেবু আর কাঁচা মরিচ দিয়ে খাই। আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন।’

মন্তব্যসমূহ