ব্রয়লার মুরগির হাড় ও ডিম খাওয়া কি ক্ষতিকর?

ব্রয়লার মুরগির হাড় ও ডিম খাওয়া কি ক্ষতিকর?


মুরগী যদি নিজের পায়ে শরীরের ভর দিয়ে হাঁটতে না পারে, তবে বুঝতে হবে সেই হাড়ে আমাদের কোন লাভ হবেনা।

বাণিজ্যিক ব্রয়লার মুরগীকে যদি আলাদাভাবে ভিটামিন -ডি খাওয়ানো হয়, সেক্ষেত্রে মুরগীর হাড় খেয়ে উপকার পেতে পারি আমরা । অনেক দেশের মুরগির খাবার ভিটামিন-ডি-ফর্টিফাইড হয়, সেসব মুরগির হাড়ে  ক্যালসিয়াম পেতে পারেন।  

তবে, হাড়ের প্রান্ত বেশি ফোলা ও নরম থাকলে বুঝতে হবে ওটা অপরিণত হাড়ঁ ( রিকেটস) বা ইনফেকশনও ( অস্টিওমাইয়েলাইটিস) থাকতে পারে সেখানে ।

ব্রয়লার মুরগীর সৃষ্টি হয়েছে মাংসের জন্য।

হাড় এবং মাংসের মাঝে কালো দাগ হাড়ের মজ্জা লিক করে বেরিয়ে আসার চিহ্ন। অর্থাৎ এর হাড় অপরিণত ।


ব্রয়লার মুরগীকে দ্রুত বড় করার জন্য অননুমোদিত মাত্রার হরমোন ও  কখনো এন্টিবায়োটিক মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করা হয়। এই হরমোন ও এন্টিবায়োটিক অস্থিমজ্জায় ও অন্যান্য অঙ্গে জমা হয়। কাজেই মুরগির হাড়, কলিজা, পা, গিলা, এবং চামড়া না খাওয়াই ভাল।

ব্রয়লার মুরগির মাংস দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তার মাঝে সাদা চর্বির স্তর দেখতে পাবেন। ব্রয়লারের মাংসপেশি কম থাকায় এই চর্বির জন্য মাংস নরম হয় ও দ্রুত রান্না বা সিদ্ধ হয়! 

দেশি মুরগি রোদের আলোয় বড় হয় ও প্রাকৃতিক খাবার, ঘাস, পোকামাকড় খায় বিধায় ক্যালসিয়ামের প্রভাবে তাদের হাড়  খুব শক্ত হয় ও মাংসে চর্বি কম থাকায় তা শক্ত হয়ে থাকে ।  

কিছু বিষয় জেনে রাখা ভাল।

1,অপরিপক্ক হাড়ে কোন ক্যালসিয়াম ও খাদ্য উপাদান নেই ।

2, মুরগির শরীরে ইনফেকশন থাকলে মুরগি প্রসেসিং অর্থাৎ কাটাকাটি এর সময় আপনি আক্রান্ত হয়ে যাবেন , রান্না অনেক পরের ব্যাপার ।

3, 200' সে এ রান্না করলে হাড়ের ভিতরে জীবাণু মারা গেলেও তার toxin অক্ষত থাকবে ।

4, কোভিড19, টিবি , বার্ড ফ্লু বা ক্যান্সার ওয়ালা মুরগি হ্যান্ডলিং করা ও বিপদজনক ।

5, আপনার যদি নিজস্ব মুরগির ফার্ম থাকে , অসুস্থ মুরগি  অনুগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করবেন না । মাটিতে পুঁতে ফেলবেন। কারন বিক্রির সময় ওজন করতে গেলে দাড়িপাল্লাসহ আক্রান্ত হয়ে যাবে।


ব্রয়লার মুরগির ইতিহাস



"তাপের প্রত্যক্ষ ক্রিয়ায় (মাংস) রান্না করা " কে broil বলা হত ১৪ শতাব্দীর শেষের দিকে। তারও আগে মাংস "পোড়াতে,"  ফ্রেঞ্চ শব্দ bruller /ব্রুলার শব্দ ব্যবহৃত হত। সেখান থেকে ব্রোয়েল, রোস্ট ইত্যাদি শব্দ আসে এবং এসব মুরগির মাংস মশলা মাখিয়ে ঝলসানো হলে কম সময়ে উত্তম স্বাদের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় বলে একে ব্রয়লার মুরগি বলা হয়। 

ব্রয়লার হল যে কোন মুরগি (Gallus gallus domesticus) যা মাংস উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে প্রজনন ও লালন-পালন করা হয়। বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্রয়লার চার থেকে ছয় সপ্তাহ বয়সের মধ্যে কাংক্ষিত ওজনে পৌঁছায়, যদিও ধীরে ধীরে বর্ধনশীল দেশি মুরগি জাতগুলি প্রায় ১৪ সপ্তাহ বয়সে সেই ওজনে পৌঁছায়।

বড় রোস্টার বা মোরগের তুলনায় ব্রয়লার  ২ কিলোগ্রাম বা অন্য (সাড়ে ৪ পাউন্ড) কম বয়সী মুরগির জন্যও ব্রয়লার শব্দ টি ব্যবহার করা হয়।

1920-1930 এর দশকে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন শুরু হয়। মুরগির মাংস উৎপাদন, পূর্বে ডিম শিল্পের একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান ছিল।  শুধু মাংসের জন্য ব্রয়লারের বা ছোট বাচ্চা মুরগির বিকাশের সাথে এই মুরগির উৎপাদন শুরু হয়েছিল - এটি একটি মুরগি বিশেষভাবে এর মাংসের জন্য উত্পাদিত হয়। ব্রয়লার উৎপাদন শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ডেলমারভা উপদ্বীপ, জর্জিয়া, আরকানসাস এবং নিউ ইংল্যান্ডের মতো জায়গায়। ডেলাওয়্যারের সাসেক্স কাউন্টির মিসেস উইলমার স্টিলকে প্রায়শই বাণিজ্যিক ব্রয়লার শিল্পের পথপ্রদর্শক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯২৩ সালে, তিনি মাংসের জন্য বিক্রি করার উদ্দেশ্যে ৫০০টি ছানার একটি পাল তুলেছিলেন। তার ব্যবসা এতটাই লাভজনক ছিল যে ১৯২৬ সাল নাগাদ তিনি ১০,০০০টি ব্রয়লার ঘর তৈরি করতে সক্ষম হন।




ব্রয়লার মুরগির ডিম



ব্রয়লার মুরগি ডিম দিতে পারে। এসব প্যারেন্ট মুরগি স্টক ব্রিডার বা ব্রয়লার ব্রিডার নামে  পরিচিত।ব্রয়লার ফার্মের জন্য  তারা ডিমের জন্ম দেয় এবং এটি পোল্ট্রি শিল্পের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে ঐ পর্যন্ত!!! এসব ডিম বেশিরভাগ নিষিক্ত হয়না, এসব ডিম হতে তাই ছানা উৎপাদন অসম্ভব। 


একমাত্র ভাল ব্রয়লার ব্রিডার নিষিক্ত ডিম দেয় । ডিম পাড়ার শতাংশ যা নিষিক্ত হয়, পোল্ট্রি উৎপাদনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ডিম নিষিক্ত না হয়, তবে অবশ্যই, এতে ভ্রূণ থাকবে না এবং ডিম ফুটবে না।


"কেন মুরগি নিষিক্ত না হয়েও ডিম দেয়?"


কারণটি হ'ল যে কোন প্রাণীর ডিম নিষিক্ত হওয়ার আগে বিকশিত হয়।  ডিমটি নিষিক্ত হবে কি না তা মুরগি বা প্রাণীটি আগে থেকে জানতে পারে না, তাই তাকে শুধু ডিমটি নিষিক্ত হওয়ার আশায় এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

মোরগ থাকুক বা না থাকুক সুস্থ মুরগি ছয় মাস হতে ডিম দিতে সক্ষম।


ব্রয়লার মুরগির ডিমের পুষ্টি 


ব্রয়লার মুরগির ডিমের পুষ্টি তার খাদ্যের উপর নির্ভর করে। সাধারণত অন্যান্য ডিমের পুষ্টি মতো এগুলি সম্পূর্ণ প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উত্স (সমস্ত প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সহ প্রোটিন) কুসুমে অত্যাবশ্যক চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন A, E D, K রয়েছে। তবে ডিমের খোসা দুর্বল বা ভঙ্গুর হলে সেই ডিমে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি কম, ধরে নিতে পারেন। 

ধন্যবাদ। 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোষ্ট সমূহ

দুধ🍼খাওয়ার নিয়মাবলী

ব্রণ! সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলো কি?

চিকন স্বাস্থ্য মোটা করার খাবার

কোন ধরনের ডিমে ⚪️ ক্যালোরি বেশি।

ভাতঘুম কেন ক্ষতিকারক?

হাঁপানি সম্পর্কিত প্রশ্নত্তর গুলো

প্রথমবার ভায়াগ্রা নিচ্ছেন?

খুশকির স্থায়ী চিকিৎসা কি!

ত্বকে মেলানিন কমাতে চান?

উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, আমিষের অন্যতম উৎস