রান্না নিয়ে মজার কিছু সত্য

রান্না নিয়ে মজার কিছু সত্য

রান্না নিয়ে  মজার কিছু সত্য

রাধুনী ও বাবুর্চি বা শেফ এর পার্থক্য কি


একজন রাঁধুনি /cooker হল 'এমন ব্যক্তি যিনি ভালোবেসে খাবার তৈরি করেন এবং রান্নাও করেন', অন্যদিকে একজন শেফ হলেন 'একজন দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত রাধুনী যিনি সম্মানীর বিনিময়ে হোটেল বা রেস্তোরাঁয় রান্না করেন'।


বিয়ের কুড়ি দিনের মাথায় বউকে শহর থেকে কর্মস্থল রাঙামাটি নিয়ে এসেছিলাম সংসারধর্ম পালন করতে। বউ টুকটাক রান্না পারে আর আমিও পেটুক নয় । তাতে দুজনের বেশ চলে যাচ্ছিল। কিন্তু শীতের শুরুতে দলবল নিয়ে পর্যটক বেশে আত্নীয়স্বজন আসতে শুরু করল, দেখলাম বউয়ের রান্নার ভয়।

একদিন বড় ভাবীর দল আসলো বেড়াতে, সেদিন পোলাও খেতে গিয়ে দেখলাম স্টিকি রাইস খাচ্ছে সবাই। দৌড়ে হোটেল থেকে সাদা ভাত কিনে আনলাম।

ব্যাচেলর থাকতে ভাবীর নিকট কিছু রান্না শিখেছিলাম, তাই রান্নাঘরে গিয়ে বউকে জিজ্ঞেস করতেই সে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো। পোলাওয়ের চাল বেশিক্ষন ভিজিয়ে রাখায় এই সমস্যা। ভাবি এসে পরিস্থিতি সামাল দিলেন।

বাজার থেকে কাপ্তাই হ্রদের জ্যান্ত বাইম বা শোল মাছ কিনে আনলে দেখতাম , মাছ লাফাতে দেখে সে ভয়ে রান্নাঘর ছেড়ে পালিয়েছে। শহরের মেয়েরা এসব না দেখে বড় হয় জানি। জানি বাজার হতে সবাই মাছ কাটিয়েই আনে। আমার অত সময় নেই। তাই রাতের বেলা নিজেই মাছ কাটতে বসি। দুজন মিলে ছাই, বটি, ছুরি, রামদা দিয়ে আজব সব পিস তৈরি করে রান্না করে খেয়েছি দুজন।

বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতেই মেহমানদের আনাগোনা বেড়ে গেল। বউ বুঝতে পারত না কি রান্না করবে। কখনো মাছের তিন পদ রান্না করেছে, একপদ মাংস। শহরের টিনএজ ছেলেমেয়ের দল কেউ মাছ খায় না, ফার্মের মুরগি খেয়ে বড় হয়। তাই খেতে গিয়ে দেখলাম মাংসে টান পড়েছে, মাছ সব রয়ে গেছে পাতে।

একদিন ঢাকা থেকে বড়লোক আত্নীয়র দল এসেছে বেড়াতে। ব্রিগেডিয়ার স্বামী, ডাক্তার স্ত্রী, হস্তীবত দুটো সন্তান । খেতে বসেছে দেখলাম, মুরগি, মাটন না ধরে (ওসব নাকি রোজ খায় তারা !) , বেগুন চিংড়ির চচ্চড়িটাই চেটেপুটে খেয়ে শেষ করেছে। তাদের খাওয়া দেখে বউয়ের মাথা ঘোরে। যা প্রাণ দিয়ে রাঁধলো, তা কেউ চেখেও দেখল না!

সে যাক, বছর দশেক হল, সেই বউ এখন মাস্টার শেফ, একাই ঈদের সময় গোটা গরু কাটাকুটি, বিলি বন্টন, রান্নাবান্না দেখাশোনা করে। মেহমান আসলে সে একাই সামাল দেয়, আমি অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকি, জানতেও পারিনা সেসব ।

একদিন কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম," কি করে এত মেহমান সামাল দিচ্ছ? আগে ত ভয়ে কাঁদতে "। সে বলল ," এখন খুব সোজা হিসেব, যেসব মেহমান বাঘ, সিংহের মত তাদের জন্য গরু খাসি রাঁধি, যারা বেড়ালের মত শান্ত তাদের জন্য মাছ আর যারা শেয়াল মামার ভক্ত তাদের জন্য মুরগিই উত্তম খাবার ।"

আমি ঢোক গিলে বললাম, " আর আমি যে শুধু আলু পটল খাই, আমি কি ! " তার সরল উত্তর " তুমি ব্ল্যাক বেঙ্গল , তোমার জন্য কে সারাদিন লতাপাতা রাঁধতে যাবে আমার মত মেয়ে ছাড়া ?" ভয়ে আর কথা বাড়াই না।

রান্না বান্না নিয়ে সব দম্পতির ই মনে হয় প্রথম জীবনের অভিজ্ঞতা এমনি।

যাহোক , রান্না নিয়ে কিছু মজার বিষয় আলোচনা করি।

  • রান্না একই সাথে একটি আর্ট, সায়েন্স ও কমার্স এর বিষয়।
  • রান্নার রেসিপি এর কোন কপিরাইট বা সর্বস্বত্ব আইন নেই। চাইলে অন্যের রেসিপি দেখে আপনি নিজেও বই লিখিয়ে হতে পারেন।
  • বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক ও মুখরোচক রেসিপি হল পটকা মাছ । এই মাছ খেতে গিয়ে এর বিষে প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছেন। তবুও এই 'ফুগু' জাপানের জনপ্রিয় খাবার। সেখানে এর আইটেম বানাতে পারে কেবল বিশেষ লাইসেন্সধারী বাবুর্চিরাই।

  • পটকা মাছ খাওয়ার নিয়ম » না মেনে বাঙালিরা একে খেতে গিয়ে প্রায় মারা যায়।

  • পটকা মূলত সামুদ্রিক মাছ, বাংলাদেশের নদী ও খালে এই মজার দামি মাছটি কি করে আসে তা প্রাণীবিদ্যের বিস্ময়।
  • পটকার কাঁচা মাংস, ফুগু শাসিমি উইথ সস বা ব্লোফিশ সাশীমি জাপানে সম্মানিত, এবং খুব ব্যয়বহুল। একটি পূর্ণ খাবার প্রায় $200 US ডলার (USD) বা তার বেশি খরচ হতে পারে।


  • পৃথিবীর প্রথম রান্নার বই ইয়েল ট্যাবলেটস। খ্রিস্ট জন্মের ১৭০০ বছর আগে মেসোপটেমিয়ার প্রস্তরখন্ডে লিখিত। তাতে রাজাদের জন্য ২৫ পদের মাংসের স্ট্যু , কিছু সবজি ও একটি পেস্ট্রির রেসিপিও পাওয়া গেছে। কিন্তু ingrediends দেয়া থাকলেও রন্ধন প্রণালী ছিল না।
  • মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন রেসিপির ট্যাবলেট

     
  • পৃথিবীর প্রাচীনতম স্যুপ এর রেসিপি খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ সালের। সেগুলো ছিল চড়ুই পাখি আর হিপোপটমাস এর মাংসের স্যুপ
  • রান্না করতে কিছুটা ভয় পান অনেকে। এটা একটা মৃদু রোগ নাম ম্যাগেইরোকোফোবিয়া।
  • অষ্টদশ শতকে ইউরোপে পাউন্ড কেক তৈরির প্রকৃত রেসিপির জন্য ময়দা, ঘি, ডিম ও চিনি প্রতিটি এক পাউন্ড করেই লাগত তাই একটি প্রকৃত পাউন্ড কেক এর ওজন ৪ পাউন্ড বা প্রায় ২ কেজি।
  • আসল পাউন্ড কেক ৪ পাউন্ড বা ১.৮ কেজির সমান প্রায়।


  • রান্নায় এলকোহল ব্যবহারকারীরা মনে করেন এর সবটুকুই পুড়ে যায়। বাস্তবে ৮৫% ই অক্ষত থাকে।
  • অনেকেই গ্রিল করা মাংস কে ক্যান্সার উপাদানকারী মনে করে থাকেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা সরাসরি এর কোন কারন খুঁজে পাননি। কারন গ্রিলিং মিট হলো ভাজা মাংস পুড়ে যাওয়ার ঠিক আগের অবস্থা, যখন ঠিক সময়ে সেটা উল্টে দেয়া না হয়।
  • আস্ত প্রাণীর রোস্ট এর তালিকায় গিনেস বুকে এখন পর্যন্ত "উটের রোস্ট" ই বৃহত্তম। এতে গোটা ডিম আর মাছ স্টাফ করা হয় ভেড়ার পেটে, তারপর ভেড়াকে রোস্ট করে স্টাফ করা হয় উটের পেটে। অতঃপর আস্ত উটটি কে রোস্ট করা হয়। (ভাগ্যিস আস্ত হাতি বা আস্ত তিমির রোস্ট মানুষ খায়না!)।
    উনি ট্রেভর জেমস,ফুড রেঞ্জার চ্যানেলের দারুন উপস্থাপক, দুবাইতে আস্ত উটের রোস্ট তৈরিতে সহায়তা করছেন । এই কানাডিয়ান ভদ্রলোক পৃথিবীর নানা প্রান্তে শুধু খাওয়া চেখে দেখেই বিখ্যাত হয়েছেন। তাকে দেখে বাংলাদেশের হিল্লোলের মত অনেকেই একাজে নেমেছেন)

    রাক্ষুসে বা হেডোনিস্টিক খাওয়া কি?
     হেডোনিক ক্ষুধা শুধুমাত্র আনন্দের জন্য খাদ্য গ্রহণকে বোঝায় এবং শক্তি হোমিওস্টেসিস বজায় রাখার জন্য নয়। এই অবস্থায়, স্বল্প-মেয়াদী শক্তি হ্রাসের অবস্থায় না থাকা অবস্থায়ও তারা খায়, এবং খাবারটি তার স্বাদযুক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে অন্যদের বঞ্চিত করে খাওয়া হয়।

     
  • রাক্ষস হিন্দু ও বৌদ্ধ পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী একপ্রকার মানুষরূপী মাংসভুক প্রাণী। রাক্ষসরা মানুষের মাঝেই থাকে, এরা আপনার আশেপাশেই আছে, এদের খাওয়া দেখে চিনতে পারবেন। অন্যদের বঞ্চিত করে খেতে এরা সুখ পায়।
  • Over boiled বা বেশি সেদ্ধ ডিমের কুসুম ও সাদা অংশের মাঝে সবুজাভ একটি লেয়ার পড়ে। কুসুমের চারপাশে থাকা আয়রন সালফাইড গলে এ সবুজ রং সৃষ্টি হয়।
  • ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে খাঁটি রুটি কেনার জন্য দাঙ্গা পর্যন্ত হত। সেজন্য রুটি কারখানাগুলোয় পুলিশি পাহারা বসানো হত। ফ্রান্সে এখনো রুটিই প্রধান খাদ্য।
  • স্যান্ডুইচ এর আবিস্কারক ইংল্যান্ডের কেন্ট এর স্যান্ডুইচ শহরের ৪র্থ শাসক জন মন্টাগ ১৮৬২ সালে। তিনি এত বেশি জুয়া খেলায় মত্ত থাকতেন যে খাওয়ার সময়ই পেতেন না। বাবুর্চিকে বলতেন এমন খাবার বানাতে যা জুয়ার টেবিলেই খাওয়া যায়। তার জন্যই স্যান্ডুইচ বিখ্যাত হয়।
  • শেফদের মাথায় ব্যবহৃত টুপিটির নাম 'টক তোক । শব্দটি রেজি hat এর আরবি প্রতিশব্দ।
  • টেলিভিশন এ রান্নার রেসিপি সবচেয়ে বেশি দেখেন মার্কিনিরা, যদিও সবচেয়ে কম রান্না করেন তারাই। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টেই খান।
  • লাল তিনটি পুং কেশর হল জাফরান।


    পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রান্নার আইটেম হল জাফরান যার দাম স্বর্ণের চেয়েও বেশি। ইরানে এর অধিকাংশ উৎপাদিত হয়। প্রতিটি জাফরান ফুলে ৩ টি পুং কেশর থাকে, যা কেবল হাত দিয়েই আলাদা করা যায়। ১৫০ টি ফুল থেকে পাওয়া যায় মাত্র ১ গ্রাম জাফরান। আর প্রতি কেজির বাজারমূল্য ৩০০০ ডলার
  • ট্রাফল! রান্নায় দিলে বাজিমাত!

     
    আর একটি দামি ফুড আইটেম হল ট্রাফল । দুর্লভ এলবা হোয়াইট ইতালিয়ান ট্রাফল এর দাম প্রতি কেজি ২৫০০ ডলার। তবে এটি কোনভাবেই চাষ করা সম্ভব হয়নি, কেবলমাত্র উত্তর ইতালির পাহাড়েই বিশেষ ঋতুতে পাওয়া যায়।
  • রান্নাঘরে সবসময় ধারালো ছুরি ব্যবহার করা উচিত। এতে ব্যবহারকারী সচেতন থাকেন ও দুর্ঘটনা কম হয়। তাছাড়া ভোঁতা ছুরি স্লিপ কাটে বেশি, তাই দুর্ঘটনা বেশি হয়।
  • ফুড চ্যানেলগুলো মানুষকে মজাদার খাবার খেতেই উৎসাহিত করে । রেসিপি দেখে খুব কম লোকই রান্নায় হাত দেয়।
  • চপস্টিক আবিষ্কার হয়েছিল খাবারকে নাড়তে, খেতে নয় ।


  • তিনি লিখেছেন, তিনি কীভাবে রান্না করতে হয় তা শিখিয়েছিলেন এবং তিনি মানুষকে পুষ্টিকর খাবার রান্না করতে এবং খেতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি আমাদের প্রিয় সিদ্দিকা।বিভিন্ন কঠিন রেসিপি প্রকাশ করে দেয়াতে বান্ধবীরা তাকে তিরস্কার করেছিলেন।

  • প্রকৃত রন্ধন পটু মেয়েদের BMI অন্যদের চেয়ে বেশি। মেটাবলিজম বেশি হওয়ার ফলে শরীরে ফ্যাটও কম হয় তাদের ( শ্রদ্ধেয়া সিদ্দিকা কবির দ্রষ্টব্য), খুব স্থূল শেফরা রান্নাঘরে কম ঢোকেন।
  • মেক্সিকানরা খাদ্যে সবচেয়ে বেশি ভেষজ ব্যবহার করেন। এতে egg, bean ও অন্য খাবার হতে পেটের গ্যাস (পাদ) কম হয় বলে তারা মনে করেন।
  •  
    এদুটো সবচেয়ে বেশি গ্যাস সৃষ্টিকারী খাদ্য »

  • মিষ্টি আলুকে ৫৭-৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ রান্না করলে এর শর্করা গলে ম্যাল্টজ হয়, ফলে এর স্বাদ আরো মিষ্টি হয়ে যায়। তাই মিষ্টি আলুর ফ্রাই বা চিপস বানিয়ে খাওয়াই উত্তম।
  • রান্নার সময় মাংস কুঁকড়ে যাওয়া ঠেকাতে, একে রান্নার আগে কিছুক্ষন কোন ফ্লাট সারফেসের উপর রাখুন। খেয়াল রাখুন এর কোনাগুলো যেন উঠে না থাকে।


ধন্যবাদ সূত্র,

28 Fun and Interesting Kitchen Facts

মন্তব্যসমূহ