ওষুধের নামকরণ করা হয় কিভাবে?

ওষুধের নামকরণ

নামকরণ

নবজাতকের সুন্দর নাম রাখার মতোই একটি নতুন ঔষধের নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিগুলোর কাছে। কি নাম রাখলে ডাক্তার ও রুগী উভয়ের পছন্দ হবে?

Nomenclature বা নামকরণ হল কোন ব্যক্তি বা বস্তুর নাম দেওয়ার প্রক্রিয়া। ব্যক্তির নামকরণ একটি আচার বা অনুষ্ঠান যেখানে একজন ব্যক্তির নাম দেওয়া বা ঘোষণা করা হয়। অন্য ক্ষেত্রে নামকরণ একটি নির্দিষ্ট পেশা বা ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা জিনিসগুলির নাম দেওয়ার একটি ব্যবস্থা। ঔষধ শিল্পে নামকরণ হল ওষুধের পদ্ধতিগত নাম, বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধ। এই নামকরণ প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির মধ্যে একটি হল নামের অর্থ এবং কাজ গুলির সাথে সম্পর্কিত। এই ক্ষেত্রে শব্দের অর্থ সাধারণ ক্ষেত্রে তার থেকে আমূলভাবে ভিন্ন, যেখানে " নামের অর্থ" হল তাদের একটি শ্রেণীর সত্তার রেফারেন্সে ব্যবহার করার ক্ষমতা, তাদের বোঝানো বা মনোনীত করা নাম ।

ঔষধের নামকরণের জন্য প্রতিটি কোম্পানির নিজস্ব 'নামকরণ' টিম থাকে। আমাদের দেশের কোম্পানিগুলোর ও আছে, তা সত্ত্বেও তারা বেশিরভাগ ঔষধের বিদেশী নাম নকল করে। হয়তো মৌলিক যে কোন কিছুই বাঙালি হিসেবে আমরা অপছন্দ করি, নয়তো চাকরিজীবী মাত্রই ফাঁকিবাজ।

একটি বাজারজাতকৃত ওষুধের তিনটি নাম রয়েছে:

  1. একটি রাসায়নিক নাম,
  2. একটি জেনেরিক নাম এবং
  3. একটি ব্র্যান্ড নাম।

একটি রাসায়নিক নাম দেওয়া হয় যখন একটি নতুন রাসায়নিক সত্তা (NCE) তৈরি হয়।

ঔষধ লেবেলিং এর মূলনীতি:


লেবেলে প্রস্তুতকারক, প্যাকার বা পরিবেশকের নাম এবং ঠিকানা সম্পর্কে তথ্য থাকতে হবে। এছাড়াও, ঔষধ এর শর্ত এবং উদ্দেশ্য, ওষুধের ডোজ, সময় এবং প্রশাসনের পথ সহ ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত দিকনির্দেশ ধারণ করবে।

ঔষধের বোতল সেটা পিল বা বড়ির জন্য, সিরাপ বা সাসপেন্সন বা পাউডার ঔষধের জন্য ব্যবহৃত হয়।

কীভাবে ঔষধ কাজ করে জানতে হলে "ড্রাগ ফ্যাক্টস" জানতে হবে। সেটা যেসকল বিষয়ের উপর নির্ভর করে তা নিচে উল্লেখ করলাম।

১, ঔষধের সক্রিয় উপাদান - এই বিভাগটি ওষুধের সেই অংশ যা মূল কাজ করে।
২, ঔষধ টির উদ্দেশ্য - এই বিভাগটি সক্রিয় উপাদান বিভাগের পাশে বা নিচে পাওয়া যায়। যে উদ্দেশ্যে ঔষধ টি ব্যবহৃত হয়।
৩, ব্যবহার
৪, সতর্কতা,
৫, নির্দেশাবলী
৬, অন্যান্য তথ্য
৭, নিষ্ক্রিয় উপাদান

ব্র্যান্ড নাম

ব্রান্ড নামগুলো কোনো না কোনোভাবে কারো প্রতিনিধি হিসেবেই বোঝানো হয়েছে। “এগুলি বিমূর্ত ধারণা, টোনালিটি, শক্তিশালী শব্দ বা মৃদু শব্দ হতে পারে।

একটি ব্র্যান্ড হল একটি নাম, শব্দ, নকশা, প্রতীক বা অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য যা একজন বিক্রেতার ভালোগুণ বা পরিষেবাকে অন্য বিক্রেতাদের থেকে আলাদা করে। ব্র্যান্ডগুলি ব্যবসায়, বিপণন ও বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয় স্বীকৃতির জন্য এবং, গুরুত্বপূর্ণভাবে, ব্র্যান্ডের গ্রাহক, এর মালিক, শেয়ারহোল্ডারদের সুবিধার জন্য। চিহ্নিত বস্তুর জন্য ব্র্যান্ড ইক্যুইটি মান তৈরি এবং সংরক্ষণ করে । ব্র্যান্ডের নামগুলি কখনও কখনও জেনেরিক বা স্টোর ব্র্যান্ড থেকে আলাদা করা হয়।

ব্র্যান্ডিংয়ের ইতিহাস

জেনেরিক নামটি কোন দেশের, একটি অফিসিয়াল সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয় - যেমন ইউনাইটেড স্টেটস অ্যাডপ্টেড নেমস (ইউএসএএন) কাউন্সিল। ব্র্যান্ড নামটি ওষুধের জন্য অনুমোদনের অনুরোধ করে কোম্পানি দ্বারা তৈরি করা হয় এবং এটিকে সেই কোম্পানির একচেটিয়া সম্পত্তি হিসাবে চিহ্নিত করে।

ব্র্যান্ডিং-এর অনুশীলন - মূল আক্ষরিক অর্থে বার্ন /burn করে চিহ্নিত করার প্রথা - প্রাচীন মিশরীয়দের মাঝে শুরু হয়েছিল , যারা ২৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পশুসম্পদ ব্র্যান্ডিংয়ের সাথে জড়িত বলে পরিচিত। গরম ব্র্যান্ডিং লোহা দিয়ে পশুর চামড়ায় পোড়ানো একটি 'স্বতন্ত্র প্রতীকে' র মাধ্যমে একজনের গবাদি পশুকে অন্যের থেকে আলাদা করতে ব্যবহৃত হত। যদি একজন ব্যক্তি কোন গবাদি পশু চুরি করে থাকে, তবে প্রতীকটি দেখে যে কেউ প্রকৃত মালিককে অনুমান করতে পারে।

ব্রান্ড শব্দটি একটি পণ্য বা কোম্পানির জন্য একটি কৌশলগত ব্যক্তিত্ব বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে "ব্র্যান্ড" এখন সেই মূল্যবোধ এবং প্রতিশ্রুতি দেয় যা একজন ভোক্তা উপলব্ধি করতে পারে এবং কিনতে পারে। এটি ব্যবসায়ের ভয়েস এবং মান অন্তর্ভুক্ত করে। সময়ের সাথে সাথে, পণ্যের ব্র্যান্ডিং করার অনুশীলনটি তেল, মদ, প্রসাধনী ও ফিশ সস সহ বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত প্যাকেজিং এবং পণ্যগুলির একটি বিস্তৃত পরিসরে প্রসারিত হয়েছে এবং 21 শতকে, পরিষেবাগুলিতে (যেমন আইনী, আর্থিক এবং চিকিৎসার মতো) আরও প্রসারিত হয়েছে ), রাজনৈতিক দল এবং মানুষও (যেমন লেডি গাগা, কেটি পেরি, বাংলাদেশী ইভ্যালীর তাহসান )।

 ফ্লি মার্কেটে চিহ্ন বা রং দিয়ে গরু আঁকার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিংকে প্রথার প্রাচীনতম রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হত।

বর্তমান কালে ধরুন, বেক্সিমকো ফার্মার "নাপা" (প্যারাসিটামল ) নামে জ্বরের যে ঔষুধ টি বাজারে পাওয়া যায়, সেটির সক্রিয় উপাদান এসিটামিনোফান। এর জেনেরিক নাম ও তাই।  



নাপা নাম রাখার কারন সম্ভবত ' রাশিয়ার তৈরী এই ঔষধটি "নাপা" নামেই ইউরোপে বিখ্যাত।

বেক্সিমকো বাংলাদেশ এর বিখ্যাত নাপা ঔষধটির কয়েকটি শক্তির আছে। জেনে বুঝে গ্রহণ করতে হয়। আমার মতে সিম্পল ট্যাবলেট নাপা ৫০০ মিগ্র্যা ভাল। 

নাপা, এই লিংকটি রাশিয়ার তৈরী ঔষধটি সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে । 

আগেই বলেছি, আমাদের দেশের অধিকাংশ ঔষধের নাম অন্য দেশের থেকে নকল। যদিও উক্ত কোম্পানির প্রতিনিধি বলে থাকেন, 'নান পাইরেটিক ' (non pyretic ) এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো নাপা ।

'লসেক' losec নামের ওমেপ্রাজোল ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতে পাওয়া যায় , সেটার নাম কিছু বদলিয়ে লসেকটিল/ losectil নামে বাংলাদেশে বেশ চলছে ।


ইউরোপের তৈরী লসেক।

বাংলাদেশ এর লসেকটিল! 

একটি ভাল কোম্পানির এন্টিবায়োটিকের  নাম হল , furocef যার জেনেরিক নাম cefuroxim axetil । এক্ষেত্রে ফিউরোসেফ নামের ব্যাখ্যা হলো, "furious for germ, safe for humen" থেকে furecef নামের উৎপত্তি (দারুন, তাইনা!) ।

তেমনিভাবে, ' cef3' এন্টিবায়োটিক যা '3rd generation cephalosporin' cefixime এই জেনেরিক নামের থেকে একটি উদ্ভুত নাম ।


কিভাবে ঔষধের লেবেল পড়তে হয়

জানতে লিংকটি দেখার অনুরোধ রইল।

সূত্র,

মন্তব্যসমূহ