ঘাস হতে গরু কিভাবে দুধ তৈরি করে!

ঘাস হতে গরু কিভাবে দুধ তৈরি করে !

যে গাভী শুধুমাত্র ঘাস খায় সে দিনে প্রায় ৫০ গ্লাস দুধ দিতে পারে। একটি গরু যে ঘাস, ভুট্টা, খড় এবং মিশ্র ফিড খায় সে দিনে প্রায় ১০০ গ্লাস দুধ উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু কিভাবে?

গরু শুধু ঘাস খেয়ে কীভাবে শক্তি পায়?

গবাদি পশু সেলুলোজ হজম করতে পারে কারণ তাদের রুমেনে রুমিনোকোকাস নামক সেলুলোজ-হজমকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি সেলুলেজ নামক একটি এনজাইম তৈরি করে যা সেলুলোজকে গ্লুকোজে ভেঙে দিতে পারে। বিস্তারিত নীচের লিংকে।




গরু শুধু ঘাস খেয়ে কীভাবে শক্ত পায় !!!👉


ঘাস হতে গরুর দুধ তৈরির প্রক্রিয়া!

গরু ঘাস খাওয়ার জন্য তাজা চারণভূমিতে থাকতে পছন্দ করে। তাজা ঘাস এবং খড় খাওয়া গরু থেকে পাওয়া জৈব দুগ্ধের চেয়ে ভাল আর কিছুই নেই। তাই ভবিষ্যতে ঘাস হতে সরাসরি 'জৈব-দুধ' তৈরি কৃষির পরবর্তী বিবর্তন বা বিপ্লব হতে পারে।

"ঘাস থেকে গ্লাসে " দুধের যাত্রা।

গরু প্রতিদিন প্রায় ৯০ পাউন্ড বা ৪১ কেজি পুষ্টিকর খাবার খায়; ৪১ কেজি খাবার প্রায় ২১০ বেকড বা সেদ্ধ আলুর সমান।

গরুর সামনে দিয়ে ঘাস খাওয়াবেন, আর পেছন থেকে সাথে সাথে তার দুধ তৈরি হবে এমনটি নয়। ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ পেতেও একটি সময় অপেক্ষা করতে হয়।

দুগ্ধজাত গাভীকে অবশ্যই দুধ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বছরে একটি বাছুর জন্ম দিতে হবে। তবে বিদেশের বাণিজ্যিক দুধের খামারে অপেক্ষা বলে কোন শব্দ নেই। তারা চায় লাভ।  সাধারণত জন্ম দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে তাদের কৃত্রিমভাবে প্রজনন করা হয়। বাছুর জন্মানোর সাথে সাথে তা সরিয়ে অন্য কোথাও রাখা হয়। অতপর কসাইখানা হয়ত, তবে সেজন্য কিছু আইন সম্প্রতি হয়েছে।



দুধে রেটিনল (একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) এবং ভিটামিন ডি রয়েছে যা আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। দুধের মর্যাদা বুঝলে সুন্দরীরা কসমেটিকে বিনিয়োগকৃত টাকা দিয়ে দুধ খেতো।

শুধু দুধ উৎপাদনের জন্য গরু পালা হলে , এক্ষেত্রে গরুকে একটি প্রাণী না ভেবে milking machine ভাবতে হবে। কৃষিজীবী বাঙালি হিসেবে আমরা machine এর মর্যাদা বুঝলে ইউরোপের অনেক আগেই সে শিল্প বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলতে পারতাম।

machine অকেজো হলে তা ফেলে দিতে হয় কিন্তু গরু দুধ দিতে অক্ষম হলে তাকে কসাইখানায় ভালো দামে বেঁচে দেয়া যায়। তা সত্ত্বেও, এত উপকারী জন্তু গরু , এত চাহিদা তার দুধ ও মাংসের , তবুও এদেশে খাঁটি দুধ ও ভালো গরুর মাংসের আকাল।

আমরা কৃষিজীবী সমাজ হওয়া সত্বেও সারাবছর দুধের জন্য ডানো আর মাংসের জন্য ভারতীয় গরুর উপর নির্ভর করে থাকতে হয় আমাদের। দেশি দুধ মিল্কভিটার উপর আস্থা নেই বলে আমাদের বাচ্চারা নিডো, রেডকাউ খেয়ে বড় হয়।


যাহোক, আসল কথায় আসি। গরু ঘাস খাওয়ার পর পাকস্থলীতে কাজ শুরু হয়ে যায় সেটাকে দুধে পরিণত করতে।

সেজন্য গরুর হজম প্রক্রিয়াটা একটু বুঝতে হবে।

গরু একটি জাবর-কাটা প্রাণী। এসকল প্রাণীর পাকস্থলীর চারটি চেম্বার থাকে। রুমেন, রেটিকুলাম, অমাসম ও এবোমাসম নাম এসব চেম্বারের।

দুধ তৈরির প্রক্রিয়া


গরু কিভাবে ঘাস খেয়ে দুধ উৎপাদন করে? একটি গরুর বিশেষ চার প্রকোষ্ঠের পেট ঘাস ভেঙ্গে ফেলে যা সে খায় যা তাকে পুষ্ট করে এবং দুধ উৎপন্ন করে। প্রথম চেম্বারটি চিবানো উদ্ভিদের উপাদানকে নরম করে, যা গাভী বার বার চিবিয়ে খায়।

পরবর্তী চেম্বারে, অণুজীবগুলি উদ্ভিদের উপাদানগুলিকে খায়, শক্তি এবং প্রোটিন তৈরি করে। উপাদানটি অন্যান্য প্রকোষ্ঠের মধ্য দিয়ে এবং ছোট অন্ত্রে চলে যাওয়ার সাথে সাথে, পুষ্টি এবং অতিরিক্ত জল রক্ত প্রবাহে শোষিত হয় এবং তারপর তলপেটে থাকা স্তন্য গ্রন্থিতে সঞ্চালিত হয়।সেখানে, বিশেষ কোষগুলি দুধ তৈরি করতে গরুর লিভার থেকে শর্করার সাথে পুষ্টিগুলিকে একত্রিত করে।


দুধ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় অর্ধ-চর্বিত ঘাস রুমেনে প্রবেশ করার সাথে সাথে। ঘাস পানিতে মিশ্রিত হয়, পাকস্থলীর জারক রস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ভেঙে দ্রবীভূত হয়ে যায়। তারপর রেটিকুলাম এ প্রবেশ করে। সেখানে তা ছোট বলের মতো কাডস হয়।

বিশ্রামের সময় কাডস আবার মুখে নিয়ে আসে ও প্রায় এক মিনিটের মতো পুনর্বার চর্বিত হয়। তারপর সেগুলো অমাসাম চেম্বারে যায় ও পানি নিষ্কাশিত হয়। এরপর চতুর্থ চেম্বারে প্রবেশ করে ও হজম প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেখান থেকে ক্ষুদ্রান্তে গেলে যাবতীয় পুষ্টিকনা গরুর শরীরে শোষিত হয়।

রক্তের পুষ্টি উপাদানগুলি থেকে থলিতে দুধ তৈরি হয় যা রক্তনালীর (টিউব) মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। গরুর বাট দিয়ে রক্তের পরিমাণ যত বেশি হবে দুধের পরিমাণ তত বেশি। বাট কয়েক হাজার alveoli দিয়ে তৈরি যা ছোট মাংসপেশি দ্বারা আবৃত। মাংসপেশি  চুষে বা চেপে দিলে দুধ বের হয়।

ঘাস থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিকনা সমূহ দুধে পরিণত হয় ও চারটি দুগ্ধ্য গ্রন্থিতে পৌঁছায়। সেখান থেকে দুধের বাটে যেতে ২ বা ৩ দিন সময় নেয়।

পেছনের দুটি দুধের বাটে ৬০ ভাগ দুধ আসে। বাট থেকে জীবাণুমুক্ত উপায়ে দোহন করে নিন । আমার ফ্রিজিয়ান গরুটিকে কাঁচা ঘাস খাওয়ানো গেলে দিনে দুবার ও দুধ পাওয়া যেত, শীতকালে ঘাসের অভাবে দিনে একবার দুধ পেতাম।

ঘাস খাওয়া গরুর দুধ কি স্বাস্থ্যকর?


ঘাস খাওয়ানো এবং নিয়মিত দুধে সমান পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালসিয়ামের সাথে তুলনামূলক ক্যালোরি এবং চর্বিযুক্ত উপাদান রয়েছে। প্রধান পুষ্টি পার্থক্য হল যে ঘাস খাওয়া দুধে নিয়মিত দুধের চেয়ে বেশি ওমেগা -3 রয়েছে, যা হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো খাদ্য-সম্পর্কিত দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

দুগ্ধভোগীরা "ঘাসদুধ"কে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন এবং গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি। ঘাস খাওয়ানো দুগ্ধ এবং জৈব দুগ্ধজাত গাভীগুলি উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিডগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি এবং ওমেগা -6 কম দুধ সরবরাহ করে। কৃষকরা গরুকে ঘাস এবং বীজ -ভিত্তিক খাদ্যে পরিবর্তন করে উৎপাদন খরচ ও কমাতে পারে।

কিন্তু মানুষের গরুর দুধ খাওয়ার নিয়মাবলী জানা উচিত।



দুধ খাওয়ার নিয়মাবলী 👉




ধন্যবাদ।







স্বাস্থ্যের কথা/ বাংলাভাষায় অনলাইন স্বাস্থ্য ম্যাগাজিন

মন্তব্যসমূহ