বাদামের
পুষ্টি গুণ
বাদাম কী
উদ্ভিদবিদ্যার ভাষায়, বাদাম হল একটি বিশেষ ধরনের শুকনো ফল যার একটি বীজ, একটি শক্ত খোসা এবং একটি প্রতিরক্ষামূলক ভুসি রয়েছে। চেস্টনাট, হ্যাজেলনাট, পেকান এবং আখরোট একটি বাদামের প্রকৃত সংজ্ঞার সাথে মানানসই। চিনাবাদাম এবং এলমন্ড প্রকৃত বাদামের বোটানিকাল সংজ্ঞা পূরণ করে না।
বাদাম ইংরেজী কী?
ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ - ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে E, B6, নিয়াসিন ও ফোলেট এবং খনিজগুলির মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, উদ্ভিদ আয়রন, ক্যালসিয়াম, তামা, সেলেনিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম। বাদামের চর্বি ও ভিটামিন ই সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
কাজু এবং চিনাবাদামের পুষ্টি পার্থক্য কী
পুষ্টি উপাদান: কাজু এবং চিনাবাদাম উভয়ই প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। যাইহোক, কাজুতে ক্যালোরি কম এবং এতে বেশি ফাইবার থাকে, অন্যদিকে চিনাবাদামে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এতে আয়রন এবং জিঙ্কের মতো বেশি ভিটামিন ও খনিজ থাকে।
বাদামের ধরণ
নারকেল
কাঠবাদাম
প্রাচীনকালে তিন হাজার বছর আগে কাঠবাদাম ফল হিসাবে খ্যাতি ছিল। কাঠবাদামের ফল দেখতে প্রায় অনেকটা গোলাকার এবং কাঠের মতো শক্ত খোলসের আবরণ দিয়ে ঢাকা। খোলসের অভ্যন্তরে থাকে বাদামের খাবারের অংশটি।
কাঠবাদাম বেটে নিয়ে দুধ বের করা যায় সহজেই। এই দুধ ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এই দুধ সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ, সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়। কাঠ বাদাম কয়েক ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া কাঠ বাদামে থাকা প্রচুর আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে পুষ্টিগুণ রয়েছে-
- এনার্জি (৫৭১ ক্যালরি)
- ফ্যাট (৫০ গ্রাম)
- প্রোটিন (২১.৪৩ গ্রাম)
- কার্বোহাইড্রেট (২১.৪৩ গ্রাম)
- ফাইবার (১০.৭ গ্রাম)
- আয়রন ( ৩.৮৬ মিলিগ্রাম)
- ক্যালসিয়াম (২৮৬ মিলিগ্রাম)
- ম্যাগনেসিয়াম (২৮৬মিলিগ্রাম)
- পটাশিয়াম (৭১৪মিলিগ্রাম)
- কপার (১.০৭ মিলিগ্রাম)
- ম্যাঙ্গানিজ (২ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন বি-২ (০.৯১১ মিলিগ্রাম)
এলমন্ড
আপনার চোখ দেখতে কেমন?
কীভাবে চোখের সৌন্দর্য বাড়ানো যায়?👉
এলমন্ড হল একটি ড্রুপ, যা একটি বাইরের খোসা এবং বীজ সহ একটি শক্ত খোসা নিয়ে গঠিত ফল, যা প্রকৃত বাদাম নয়।
বাদামে প্রচুর স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন ই রয়েছে। বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে রয়েছে নিম্ন রক্তে শর্করার মাত্রা, রক্তচাপ হ্রাস এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কম। তারা ক্ষুধা কমাতে এবং ওজন হ্রাস প্রচার করতে পারে।
চিনাবাদাম বনাম কাঠ বাদাম, কে জয়ী হয়?
চিনাবাদাম বনাম এলমণ্ড বা কাঠ বাদাম: চূড়ান্ত রায়: চিনাবাদাম প্রোটিন সামগ্রী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যে নেতৃত্ব দেয়, যখন কাঠ বাদাম উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ই নিয়ে গর্ব করে। শেষ পর্যন্ত, এই দুটি পুষ্টিকর বাদামের মধ্যে পছন্দ ব্যক্তিগত পছন্দ, খাদ্যতালিকাগত চাহিদা এবং যেকোনো সম্ভাব্য অ্যালার্জির উপর নির্ভর করে।
আখরোট
আখরোট একপ্রকার বাদাম জাতীয় ফল। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর যাতে প্রচুর আমিষ এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি আসিড আছে। এই ফলটি গোলাকার এবং ভেতরে একটি বীজ থাকে। পাকা ফলের বাইরের খোসা ফেলে দিলে ভেতরের শক্ত খোলসযুক্ত বীজটি পাওয়া যায়; এই খোলসের ভেতরে থাকে দুইভাগে বিভক্ত বাদাম যাতে বাদামি রঙের আবরন থাকে যা এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
পেকান বনাম আখরোটের পুষ্টি পার্থক্য কী?
এক নজরে আখরোটের পুষ্টির উপাদান প্রতি পরিমাণ ১০০ g;
- Calories (kcal) 654
- লিপিড ৬৫ g
- সম্পৃক্ত চর্বি ৬ g
- কোলেস্টেরল ০ mg
- সোডিয়াম ২ mg
- পটাশিয়াম ৪৪১ mg
- শর্করা ১৪ g
- খাদ্য আঁশ ৭ g
- প্রোটিন ১৫ g
- ভিটামিন সি ১.৩ mg
- ক্যালসিয়াম ৯৮ mg
- লোহা ২.৯ mg
- ভিটামিন ডি ০ IU
- পাইরিডক্সিন ০.৫ mg
- সায়ানোকোবালেমিন ০ µg
- ম্যাগনেসিয়াম ১৫৮ mg
কোন বাদামে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে?
মোট অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সর্বাধিক সামগ্রী সহ খাদ্যতালিকাগত উদ্ভিদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাদাম রয়েছে। গাছের বাদাম, আখরোট, পেকান এবং চেস্টনাটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ সর্বাধিক। আখরোটে প্রতি ১০০ গ্রাম ২০ mmol অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, বেশিরভাগই আখরোটের পেলিকেলে।
ORAC (অক্সিজেন রেডিকাল শোষণ ক্ষমতা) নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা ২৭৭টি বিভিন্ন খাবার বিশ্লেষণ করেছেন এবং দেখেছেন যে পেকানগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতায় সমস্ত বাদামের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ১৭,৯৮০ ORAC ইউনিট সহ, অন্যান্য আটটি সাধারণ গাছের বাদামের তুলনায় পেকানগুলির সর্বোচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা ছিল।¹
আখরোট কি চিনাবাদামের চেয়ে ভালো?
আখরোটে ক্যালোরি এবং চর্বি বেশি, যেখানে চিনাবাদাম ফাইবার সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন B1, B3, B9 এবং E এর দৈনিক মূল্যের একটি বড় শতাংশ প্রদান করে।
পেস্তা বাদাম
এই বাদাম যদি আপনার পছন্দের তালিকায় থাকে তবে যে কোনো রান্নার পদেই তা যোগ করা সম্ভব।
পুষ্টিগুণের দিক দিয়েও পেস্তা বাদাম অনন্য।
পুষ্টির উপাদান
পেস্তা বাদাম :
- Calories (kcal) ৫৬২
- লিপিড ৪৫ g
- সম্পৃক্ত চর্বি ৬ g
- ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ ০ g
- কোলেস্টেরল ০ g
- সোডিয়াম ১ mg
- পটাশিয়াম ১,০২৫ mg
- শর্করা ২৮ g
- খাদ্য আঁশ ১০ g
- প্রোটিন ২০ g
- ভিটামিন সি ৫.৬ mg
- ক্যালসিয়াম ১০৫ mg
- লোহা ৩.৯ mg
- ভিটামিন ডি ০ IU
- পাইরিডক্সিন ১.৭ mg
- সায়ানোকোবালেমিন ০ µg
- ম্যাগনেসিয়াম ১২১ mg
কাজু বাদাম
কাজু বাদাম একটি নাট বা বাদাম জাতীয় ফল। বৃক্ষ জাতীয় ফসলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজু বাদামের স্থান তৃতীয়।
কাজু বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল।
- ৩০.১৯ গ্রাম শর্করা,
- ১৮.২২ গ্রাম আমিষ
- ৪৩.৮৫ গ্রাম চর্বি।
- এ ছাড়া ভিটামিন এ বি বি২, বি৩, বি৫, বি৬ বি৯, বি১২ প্রভৃতি ভিটামিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক প্রভৃতি খনিজ উপাদান।
চেস্টনাট বাদাম
চেস্টনাট, বিচ পরিবারে সাত প্রজাতির পর্ণমোচী গাছের বংশ (ফ্যাগাসি), উত্তর গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে স্থানীয়।
হ্যাজেলনাট বাদাম
আমরা বাদাম হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা অনেক বাদাম আসলে বোটানিক্যালি ড্রুপ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। হ্যাজেলনাট, তবে, সত্যিকারের গাছের বাদাম, বিশেষ করে হ্যাজেল গাছের বাদাম। তাদের শক্ত বাহ্যিক খোলসের ভিতরে রয়েছে একটি পুষ্টিকর ক্রিমি সাদা অভ্যন্তর যার পাতলা কাগজি বাদামী চামড়া রয়েছে।
পুষ্টির উপাদান : প্রতি পরিমাণ
১০০ g
- Calories (kcal) ৬২৮
- লিপিড ৬১ g
- সম্পৃক্ত চর্বি ৪.৫ g
- কোলেস্টেরল ০ mg
- সোডিয়াম ০ mg
- পটাশিয়াম ৬৮০ mg
- শর্করা ১৭ g
- খাদ্য আঁশ ১০ g
- প্রোটিন ১৫ g
- ভিটামিন সি ৬.৩ mg
- ক্যালসিয়াম ১১৪ mg
- লোহা ৪.৭ mg
- ভিটামিন ডি ০ IU
- পাইরিডক্সিন ০.৬ mg
- সায়ানোকোবালেমিন ০ µg
- ম্যাগনেসিয়াম ১৬৩ mg
ডায়াবেটিস রুগীদের জন্য সেরা বাদাম কোনটি
আপনার ডায়াবেটিস হলে সেরা বাদাম বেছে নেওয়ার জন্য, এখানে চারটি বিকল্প রয়েছে, মোটামুটিভাবে সুস্থতার ক্রম অনুসারে সম ক্যালোরি দেয়:
চীনা বাদাম
চীনা বাদাম মূলত ডাল জাতীয় শস্য যা ছোট গুল্ম জাতীয় গাছের শিকড়ে হয়। অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও রান্নার ব্যবহার নিয়ে এর বিশেষত্ব আলাদা। পৃষ্ঠাটি দেখার অনুরোধ রইল।
🥜কাঁচা না ভাজা বাদাম কোনটা বেশী উপকারী ⁉️ 👉
হানি নাটস
মধু ও বাদাম দুটিই পুষ্টিকর বলে একসঙ্গে খেলে উপকারিতা মেলে বেশি। কিন্তু চটকদার বিজ্ঞাপনে না ভুলে খেতে হবে পরিমাণমতো।
কিডনি ও হৃৎপিণ্ডের রোগ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যা, অ্যালার্জিসহ বেশ কিছু রোগ না থাকলে একজন দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০-৬০ গ্রামের মতো হানি নাটস খেতে পারেন।
মধুতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি, বিষয়টি মাথায় রেখে হানি নাটস খেতে হবে। অতিরিক্ত খেলে হজমে বিপাক, অ্যালার্জি, রক্তের চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি, রক্তের চিনির মাত্রা বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি, কিডনির সমস্যা, অতিরিক্ত গরম লাগাসহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
মন্তব্যসমূহ