ফুড পয়জনিং , কারণ ও প্রতিকার

ফুড পয়জনিং

ফুড পয়জনিং


বাসী মুরগি,কাটা পেঁয়াজ, পঁচা সবজি,ফল এবং ভালোভাবে না ধোয়া পাতাযুক্ত শাকগুলি আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে এমন খাবারের তালিকার শীর্ষে এসেছে।

প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশে প্রতি বছর সালমোনেলা, লিস্টেরিয়া এবং ই,কোলাই ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা দূষিত খাবার থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বেশিরভাগই কিছু অপ্রীতিকর কষ্টের পরে নিজেরাই পুনরুদ্ধার হয়, কিন্তু প্রায় ১৫০,০০০ হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ৩০০০ বার্ষিক খাদ্যজনিত অসুস্থতায় মারা যায়।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মহিলারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে কারণ তাদের দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।

প্রাদুর্ভাব প্রায়শই E.coli, listeria এবং স্যালমোনেলা, ব্যাকটেরিয়া যা প্রায়ই প্রাণীদের অন্ত্রে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা দূষিত সেচের পানি বা খাদ্য কারখানায় যন্ত্রপাতির মাধ্যমে খাদ্যে প্রবেশ করতে পারে।

ফুড পয়জনিং এবং পেটের ফ্লু পার্থক্য কী?

খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং পেটের ফ্লু একই রকম উপসর্গের সাথে আসতে পারে, যেমন বমি বমি ভাব এবং বমি, কিন্তু সেগুলো ভিন্ন অবস্থার। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইট বা টক্সিন দ্বারা দূষিত খাবারের কারণে ফুড পয়জনিং হয়। পেটের ফ্লু সাধারণত নরোভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়।

কিভাবে আপনার খাদ্য বিষক্রিয়া হতে পারে?

  • ভালো করে রান্না বা পুনরায় গরম করা হয় না।
  • সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি - উদাহরণস্বরূপ, এটি হিমায়িত বা ঠাণ্ডা করা হয়নি।
  • খুব দীর্ঘ সময় জন্য খোলা আছে।
  • অসুস্থ বা হাত ধোয়নি এমন একজনের দ্বারা নাড়াচাড়া।
  • এর 'ব্যবহার' তারিখের পরে খাওয়া হয়।
  • রান্না করা খাবার ভালোভাবে গরম না করা।

খাদ্যে দ্রুততম বিষক্রিয়ার কারণ কী?

স্ট্যাফ, auriyas এবং ব্যাসিলাস সেরিয়াসের মতো ব্যাকটেরিয়া আপনাকে ১ থেকে ৭ ঘন্টার মধ্যে দ্রুত অসুস্থ করে তুলতে পারে।

এই ব্যাকটেরিয়া খাবারে দ্রুত-কার্যকরী টক্সিন তৈরি করে (যেমন স্টাফের জন্য মাংস বা দুগ্ধজাত খাবার এবং বি. সেরিয়াসের জন্য ভাতের মতো স্টার্চযুক্ত খাবার)।

এই জাতীয় খাবারগুলিকে ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার নিচের ঠাণ্ডায় ফ্রিজে রাখা এই ব্যাকটেরিয়াগুলির বৃদ্ধিকে ধীর বা বন্ধ করতে সাহায্য করে।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এসওএসর চিকিৎসাবিষয়ক আঞ্চলিক অফিসের তথ্য অনযায়ী ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবীসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর অনুজীবমিশ্রিত দূষিত খাবার বা পানি খেলে সাধারণত ফুড পয়জনিং হয়ে থাকে। দূষিত, বাসি বা অস্বাস্থ্যকর খাবারেই সাধারণত এগুলো থাকে। দেখা দেয় বমি বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা।

বেড়াতে গেলে ফুড পয়জনিং বেশি হয় কেন?

দেশে ও দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলেই আমাদের ফুড পয়জনিং হয় বেশি। এর কারণ, ‘যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন, সে জায়গাটি যেমন আপনার কাছে নতুন, একইভাবে সেখানকার খাবার ও পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়াও আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার কাছে নতুন। এই নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে আমাদের শরীর।



খাদ্যে বিষক্রিয়ার উপসর্গ ও লক্ষণ

  • অসুস্থ বোধ করা (বমি বমি ভাব)
  • অসুস্থ হওয়া (বমি)
  • ডায়রিয়া, যাতে রক্ত বা শ্লেষ্মা থাকতে পারে।
  • পেটে ব্যথা এবং পেটে মোচড়।
  • শক্তির অভাব এবং দুর্বলতা।
  • ক্ষুধামান্দ্য।
  • ৩৮⁰C বা তার বেশি তাপমাত্রা (জ্বর)।
  • পেশী ব্যথা।

অরুচি ও ক্ষুধামান্দ্য
বিষয় আশয় 👉


ফুড পয়জনিং এর ঘরোয়া চিকিৎসা

সাধারণ বিশ্রাম হল আপনার শরীরকে খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে নিরাময় করতে সাহায্য করার এক উপায়। যতক্ষণ না আপনি ভাল বোধ করছেন ততক্ষণ এটি সহজভাবে নিন। উপরন্তু, উপসর্গ শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে খাবেন না বা পান করবেন না। একবার আপনি আবার খাওয়া-দাওয়া শুরু করলে, মৃদু এবং মসৃণ খাবার, যেমন ক্র্যাকার এবং স্পোর্টস ড্রিঙ্কস ব্যবহার করে দেখুন।

ফুড পয়জনিং হলে যা করবেন

বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিজেকে ফুড পয়জনিংয়ের হাত থেকে নিস্তার দিতে পারেন। সেগুলো হলো—

  • বেশি বেশি পানি:বেড়াতে গিয়ে ফুড পয়জনিংয়ের শিকার হলে বেশি বেশি পানি খেয়ে শরীরকে আর্দ্র রাখুন। শরীরের ইলেকট্রোলাইটের চাহিদা পূরণ করুন। পানি খেতে গিয়ে যদি বমি আসে, তবে ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে পানি খেতে পারেন।
  • নরম খাবার:ফুড পয়জনিং হলে নরম খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার খেতে যাবেন না। কাঁচকলা ভর্তা দিয়ে ভাত খান। পারলে ‘ব্রাট ডায়েট’ অনুসরণ করে দেখতে পারেন।
  • ব্রাট ডায়েট: কলা, ভাত, আপেলসস ও টোস্ট—এই চার ধরনের খাবার নিয়ে করা একধরনের ডায়েট। ডায়রিয়া হলে সাধারণত এ ধরনের ডায়েট করা হয়। নরম খাবারের সঙ্গে সঙ্গে লবনযুক্ত বিস্কুট (সল্টেজ বিস্কুট) খেতে পারেন। তবে, যা–ই খান, তা হতে হবে পরিমিত।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন; কম খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হাঁটাচলা করবেন না। ফুড পয়জনিং হলে দিনের বেশ ভালো একটা সময় টয়লেটেই কেটে যায়। তাই টয়লেটের বাইরে থাকার সময়টা যতটা পারা যায় বিছানায় থেকে বিশ্রাম নিতে চেষ্টা করবেন। আর শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে কি না, খেয়াল রাখুন।
  • লক্ষণ পর্যবেক্ষণ:সংক্রমণের উৎসের ওপর ভিত্তি করে ফুড পয়জনিংয়ের লক্ষণ হতে পারে নানা রকম। ফুড পয়জনিং হলে সাধারণত তলপেটের মাংসপেশিতে ব্যথা করে। বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, জ্বর ও ক্ষুধামান্দ্য—এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষণের যেমন অস্থিসন্ধির ব্যথা কিছু কিছু খাদ্যবাহিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, তলপেটের তীব্র ব্যথা ও পানিশূন্যতা—এই লক্ষণগুলো থাকলে রোগীকে চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিই।

সাবস্ক্রাইব করুন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্ন, উত্তর বা উপদেশ পেতে শুধু হোয়াটস্যাপ +৮৮০১৮১৩৬৮০৮৮৬ এ মেসেজ দিন।

মন্তব্যসমূহ