কচুশাকের 🌿🌿 উপ ও অপকারিতা

কচুশাকের 🌿🌿 উপ ও অপকারিতা

কচুশাক🍃


কচু পাতা হ'ল এর উদ্ভিদের হৃদয় আকৃতির পাতা (কোলোকেসিয়া এসকুলেন্টা), সাধারণত উপক্রান্তীয় এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মে। যদিও সাধারণত এর ভোজ্য, স্টার্চ মূলের জন্য পরিচিত, তরো গাছের পাতা বিভিন্ন দেশের রান্নায় প্রধান খাদ্য হিসেবেও কাজ করে।

শহরে না হলেও উপশহর বা গ্রামে কচুশাক সহজলভ্য সবজি। বিদেশে দেখেছি কচু পাতাগুলিকে স্যুপ, স্ট্যু, প্যানকেক বানিয়ে খেতে। মুম্বাইতে কঁচুশাকের পাতুড়ি একটি বিখ্যাত রেসিপি।


কচুর বিখ্যাত রেসিপিগুলো ⁉️👉


এটি একটি বহুমুখী সবজি। আমাদের দেশে কচুপাতা ভর্তা ও তরকারি বেশ জনপ্রিয়। ইলিশ, চিংড়ি, ছোট মাছ বা শুঁটকি মাছ দিয়ে কচুশাকের তরকারি বাংলাদেশের আইকন ফুড বলা যায়।

বিভিন্ন জাতের কচু 👉 আছে যা বেশ মজাদার। কিন্তু কচুশাককে অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না।

তবে আপনি জানেন কি কচুশাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে? এই কচুশাকই আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে।


কচুশাকের স্পেশাল পুষ্টি


চিত্র, কচু পাতার পাতুড়ি।

কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদানসমূহ। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে থাকে- ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, শূন্য দশমিক ২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), শূন্য দশমিক ২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি


কচুশাক কেন খাবেন

কচু পাতা কি খেতে ভালো?এই পাতা একটি কম-ক্যালোরি সবুজ সবজি যা পটাসিয়াম, ফোলেট, ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ। কম ক্যালোরি সামগ্রী এবং উচ্চ ফাইবার সহ, এই পাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি সুষম খাদ্যের জন্য পুষ্টিকর সম্পূরক হিসেবে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

রাতাকানা রোগ

কচুশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উৎস। রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগপ্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কচুশাকে ভিটামিন-এ থাকে, যা আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।

হিমোগ্লোবিন

কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে এর সমাদর অনেক বেশি। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে সব ডাক্তারই কচুশাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বললেই চলে।

মুখ ও ত্বকের রোগ

ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বিভিটামিন সি। তাই মুখ ও ত্বকের রোগপ্রতিরোধেও কচুশাক সমান ভূমিকা রাখে।

হৃদরোগ ও স্ট্রোক

কচুশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়। তা ছাড়া কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা কচুশাক খেতে পারেন।

শরীরে ক্ষত

কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তা ছাড়া ভিটামিন-সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কচুশাক খাওয়ানো উচিত।

অক্সিজেন সরবরাহ

আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে কচুশাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এ শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

দাঁত ও হাড়ের গঠন

কচুশাকের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন ও ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচুশাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবতী নারী

কচুশাকে বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচুশাক সহজলভ্য, তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী নারীরা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু বা কচুশাক খেতে পারেন।


সতর্কতা

সাধারণভাবে অ্যালার্জিযুক্ত খাবার শনাক্ত করার কোনো সুনির্দিষ্ট উপায় নেই, তবে সাধারণ অর্থে আমরা কিছু খাবার জানি যেগুলি মানবদেহে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং কিছু খাবার সকলের জন্য অ্যালার্জি সৃষ্টি করে না তবে কারো কারো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। এটি মানুষের শরীরের উপর নির্ভর করে। এখানে এমন কিছু খাবারের নাম দেওয়া হল যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে-

কচু শাক, মিষ্টি কুমরা, গরুর মাংস, বেগুন ইত্যাদি।

শাক সবজি ও ফলের এলার্জিগুলো কখনো বিব্রত করতে পারে আমাদের। যাদের কচু শাকে এলার্জি আছে তারা অল্প করে খেয়ে দেখতে পারেন, সেটা সহ্য সীমার মধ্যে কিনা।

কচুশাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ এতে অক্সলেট নামক উপাদান থাকে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। নিচের রান্নার পদ্ধতি দেয়া হলো। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের কচু বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো।

কচুর কাঁচাপাতা খাওয়ার একটি প্রধান সতর্কতা রয়েছে - কাঁচা খাওয়ার সময় এর বিষাক্ততা বেশি হয়।

এই পাতায় উচ্চ অক্সালেট উপাদান থাকে, যা অনেক গাছে পাওয়া যায় এমন একটি প্রাকৃতিক যৌগ।

যদিও অনেক খাবারে অক্সালেট থাকে, যেমন পালং শাক, মটরশুটি, সয়া পণ্য এবং বিট, তবে এর পরিমাণ খুব কম যে কোনো বিষাক্ত প্রভাব নেই।

এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে কিছু লোক কাঁচা পাতাগুলি নাড়াচাড়া করার সময় চুলকানির অনুভূতি অনুভব করে, তাই গ্লাভস পরার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।

কচু পাতায় থাকা বিষাক্ত অক্সালেটগুলি নিষ্ক্রিয় করতে, সেগুলি নরম না হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে যা ফুটানোর সময় মাত্র কয়েক মিনিট বা বেক করার সময় ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা সময় নেয়।

এই পাতা থেকে ক্ষতিকারক অক্সালেট অপসারণের আরেকটি পদ্ধতি হল ৩০ মিনিট থেকে পুরোরাত পানিতে ভিজিয়ে রাখা।

ডেটা পরামর্শ দেয় যে বেশি সময় ভিজিয়ে রাখার পাশাপাশি বেকিংয়ের বিপরীতে সেদ্ধ হওয়ার ফলে আরও অক্সালেট সরানো হয় ।

একবার এই পদক্ষেপগুলি সম্পন্ন হয়ে গেলে, বেশিরভাগ লোকের জন্য কচু পাতা খাওয়া নিরাপদ।

তবুও, কিডনিতে পাথরের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা লোকেদের উচ্চ অক্সালেট উপাদানের কারণে কচু পাতা সম্পূর্ণরূপে এড়ানো উচিত।


কচু শাকের সেরা রেসিপিগুলো

একটি প্রথমে উল্লেখ করা, কচু শাকের পাতুড়ি ও অপরটি আমার প্রিয় একটা খাবার। চান্স পেলেই রান্না করি। কচুর শাক রান্না আমি মায়ের কাছ থেকে শিখেছি।

কচু শাক ইলিশ ও চিংড়ি মাছ দিয়ে কচু পাতার তরকারি বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় । এছাড়াও ভর্তা ও ভাজি করেও কচুগাছের পাতা খাওয়া হয়। তবে কচুপাতা ভর্তা ও ডাল বেশি জনপ্রিয়।

ইলিশের মাথা দিয়ে কচু ঘাটি

প্রণালীঃ

১. মাছ কেটে ধুয়ে নিন আর মাথা ছোট ছোট টুকরা করে কাটুন

কচুর শাক ছোট করে কেটে ধুয়ে নিন

৩. একটি পাতিলে ৩ কাপ পানি, সামান্য লবণ আর কাঁচা মরিচ দিয়ে কচুর শাক সিদ্ধ করে নিন

৪. একটি কড়াই চুলায় দিন

৫. গরম হলে তেল দিন

৬. তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিন

৭. পেঁয়াজ বাদামী হলে কালো জিরা ও গোটা জিরার ফোড়ন দিন

৮. ভালমতো ফুটলে সব মশলার সাথে হাফ কাপ পানি দিয়ে পেস্ট তৈরী করুন

. ২ মিনিট নাড়াচাড়া করে মাছের টুকরা গুলো দিন

১০. মাঝারী আঁচে ১০ মিনিট কষিয়ে মাছ তুলে রাখুন

১১. এবার ঐ ঝোলের মধ্যে

সিদ্ধ করা কচুশাক বা কচু দিন

১২. ১৫ মিনিট রান্না করুন

১৩. এবার কষাণো মাছ গুলো দিন

১৪. আরও ১৫ মিনিট রান্না করুন

১৫. ঝোল গা মাখা হয়ে আসলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

কচু শাক নিয়ে আরো জানতে লিংকটি দেখার অনুরোধ।

কচু ও তার পুষ্টিগুণ👉 আরো বিস্তারিত জানতে লিংকটি দেখা যেতে পারে।


ভালো লাগলে ব্লগটি ফলো করুন।

সূত্র : নেচার সায়েন্স,ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

মন্তব্যসমূহ