চিত্র, বাংলাদেশ নারী অনুর্ধ ১৬ দলের প্রতিটি কিশোরী মেয়ে প্রতিদিন মাত্র ৫০০ টাকা মূল্যের খাবার খায়, কঠোর অনুশীলন এবং সমস্ত শক্তি পূরণ করতে মেয়েদের পেছনে খেলার গভর্নিং বডির বড় খরচ এটিই, যারা ট্রেনিং ক্যাম্প বা জাতীয় দলে খেলার জন্য দৈনিক ভাতা বা মাসিক বেতনও পায় না। আড়াই মাস ট্রেনিংয়ে তারা ট্রফি এনে দেয় দেশ কে।
প্রকৃতির নিয়ম হলো কিশোর কিশোরীরা আবেগগতভাবে স্বাধীনচেতা, শারীরিক ভাবে কার্যকর এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অনুসন্ধিৎসু হয়ে বেড়ে উঠবে। নিজের পরিচয় এবং আত্ম-সম্মানবোধের বিকাশ ঘটাবে। এই বয়স শারীরিক পরিবর্তনের স্বর্ণালী সময়।
সুতরাং আমাদের কিশোর-কিশোরীরাও শারীরিকভাবে বেড়ে উঠবে, তাদের খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা বাড়বে। এই বয়সে সঠিক খাবারের সাথে একটি ইতিবাচক মানসিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে সে সারাজীবন সুস্থ, আত্মনির্ভরশীল প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠতে পারবে। একটি ভুল খাদ্যভ্যাস তার ভবিষ্যত দুর্বল দেহের জন্য রোগের সূত্রপাত ঘটাবে।
কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি
কিশোর কিশোরী কাকে বলে
ইউনিসেফ এর মতে এটি বয়ঃসন্ধিকাল নামে পরিচিত। কৈশোর হল শৈশব এবং যৌবনের মধ্যে পরিবর্তনের সময়কাল। কৈশোরে প্রবেশকারী শিশুরা তাদের শরীর ও মস্তিষ্কে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব নৈতিক কম্পাসের বিকাশ।
কৈশোর হল একটি পুষ্টিগতভাবে দুর্বল সময় যখন দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধি পুষ্টির চাহিদা বাড়ায়। এসময় খাদ্যতালিকাগত আচরণ পুষ্টি-সম্পর্কিত সমস্যাগুলিতে অবদান রাখতে পারে যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য পরিণতি ঘটায়। বর্ধিত ক্যালরি, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক এবং ফোলেটের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধির এই জটিল সময়ে সরবরাহ করতে ই হবে নতুবা সাপ্লিমেন্ট আকারে দিন ।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত ক্যালরি নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণত প্রতিদিন কিশোরীদের ১ হাজার ৬০০–২ হাজার ২০০ ক্যালরি এবং কিশোরদের ১ হাজার ৮০০-২ হাজার ৬০০ ক্যালরি প্রয়োজন হয়। এ পরিমাণ ক্যালরি তাদের শক্তি সরবরাহের পাশাপাশি উচ্চতা বৃদ্ধি ও শরীরে ওজন ঠিক রাখতে সহায়তা করবে।
কিশোরীদের পুষ্টি
অস্ট্রেলিয়ান কিশোরী ফুটবলারদের জন্য প্রদেয় খাবারের তালিকা এক্ষেত্রে একটি ধারণা দিতে পারে।
প্রাক-গেম খাবারের ধারণা:
মুসলি ও গ্রানোলা কি ধরনের নাস্তা, এর ইতিহাস কি »
একটি ১৪ বছর বয়সী কিশোর ক্রীড়াবিদের কি খাওয়া উচিত?
কিশোর ফুটবলারের ডায়েট (শোলা শ্রয়েটার):
দেশের কিশোর কিশোরীদের বর্তমান পুষ্টি
দেশের প্রায় অর্ধেক মহিলাই পুষ্টিজনিত রক্তাল্পতায় ভোগেন, সেখানে কিশোরীদের অবস্থা আরো নাজুক।
বাংলাদেশ এর পুষ্টি প্রোফাইল '২২ অনুযায়ী দেশে কিশোর বয়সের মেয়েদের মধ্যে রক্তাল্পতা কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে কোনও অগ্রগতি হয়নি (২০২২), ১৫- থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৩৬.৭% মেয়ে এখনও রক্ত স্বল্পতায় আক্রান্ত৷ এর মূল কারণ আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ না করা।
৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ২৮% স্টান্টেড বা খর্ব। এর মূল কারণ আমিষ জাতীয় খাদ্য না খাওয়া।
অবিবাহিত মেয়েদের এক তৃতীয়াংশের ওজন কম এবং প্রায় ১৩% ছোট আকারের, যা কঠিন প্রসব এবং কম ওজনের শিশুর ঝুঁকি বাড়ায়৷ প্রায় অর্ধেক মহিলাই পুষ্টিজনিত রক্তাল্পতায় ভোগেন।
স্বাস্থ্যকরভাবে বেড়ে ওঠার ডায়েট:
মেয়েরা ১২ বছর বয়সের আশেপাশে এবং ছেলেরা ১৪ বছর বয়সের দিকে শারীরিকভাবে দ্রুত বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে যায়। আমাদের কিশোরী শুকনো বা খুব মোটা যাই মনে হোক না কেন, তার শরীর থেকে ফোকাস সরিয়ে নেওয়া উচিত। পরিবর্তে তার মনোযোগ স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া ও মানসিক আনন্দের দিকে লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ । স্বাস্থ্যকর খাবার কি জিনিস সে সম্পর্কে আমাদের অভিভাবকদের কিছু ধারণা থাকা উচিত।
স্বাস্থ্যকর খাওয়া কী :
আমাদের কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা দরকার। সেজন্য সর্বোত্তম উপায় হল পুরো শস্য, ফল, শাকসবজি, চর্বিহীন বা কম চর্বিযুক্ত দুধের জিনিস, মটরশুটি, ডিম, মাছ, বাদাম এবং চর্বিহীন মাংস সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া।
পুষ্টির সঠিক ভারসাম্য পাওয়ার জন্য ব্যালেন্স ডায়েট বা সুষম খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ। কিশোর বয়সে দেহ লম্বা হওয়ার সাথে সাথে তার আরও ক্যালোরি এবং প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন সহ মূল পুষ্টি বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে।
সুষম খাদ্য কি
একটি ডায়েট বা খাদ্য হল যা আমরা একদিনে গ্রহণ করি। এবং একটি সুষম খাদ্য হল এমন একটি খাদ্য যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে যা আমাদের একদিনে প্রয়োজন। একটি সুষম খাদ্যের মধ্যে ৬ টি প্রধান পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যেমন চর্বি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ। ভাতের সাথে চিকেন ও সবজি ভাজুন।
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস সহ দিনে ৩ বার মূল খাবার খাওয়া উচিত ।
খাবারে ফাইবার বাড়ানো এবং লবণের ব্যবহার কমিয়ে দেয়া উচিত । সেই সাথে,
- বিশুদ্ধ জলপান করা
- সুষম খাবার খাওয়া
- বয়ঃসন্ধিকালের জন্য রান্না করার সময়, ভাজার পরিবর্তে বেক বা সেদ্ধ করার চেষ্টা করুন।
- নিশ্চিত করুন যে তাদের বয়ঃসন্ধিকালের সময় চিনি খাওয়া কমানোর জন্য ।
একজন কিশোরের কতটা খাওয়া উচিত তা তাদের ব্যক্তিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে। সাধারণত কিশোর-কিশোরীদের বৈচিত্র্যময় খাদ্য খাওয়া উচিত, যার মধ্যে রয়েছে:
১, প্রতিদিন কিছু ফল ও সবজি।
প্রতিদিন ১ টা দেশি ফল (যেমন কলা, লেবু, বা খেজুর) এবং ১ কাপ রঙিন শাকসবজি খাওয়া উচিত (১০০০ ক্যালোরি ডায়েটের জন্য)।
২, বাড়ন্ত বয়সে দৈনিক ১৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এর ভালো উৎসের মধ্যে রয়েছে দই বা দুধ। এক কাপ সমতুল্য পনির বা ১ কাপ দুধ সাথে চিনে বাদাম ৫ টি । অন্যান্য খাবার হতে বাকি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ।
যাদের এসবের প্রাপ্যতা সহজ নয় তারা ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারে বা ক্যালসিয়ামের সরল উৎসগুলো সম্পর্কে জানতে পারে।
ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য সূর্যালোক ভূমিকা রাখে। সেজন্য তার নিয়মিত অবারিত সূর্যের আলোতে ১০ মিনিট যাওয়া নিশ্চিত করুন। অন্ততঃ দেহের ১০ শতাংশ জায়গায় সূর্যালোক দিন।
৩, পেশী এবং অঙ্গ গঠনের জন্য প্রোটিন।
কিশোরদের প্রতিদিন ১০০ গ্রাম প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এর ভাল উত্সগুলি হল চর্বিহীন মাংস, হাঁস ও মাছ। অন্যান্য প্রোটিন উত্সের এক-আউন্স সমতুল্যের মধ্যে রয়েছে ½ কাপ শিম বা ডাল বা টফু, একটি ডিম, এক টেবিল চামচ চিনাবাদাম মাখন এবং কিছু বীজ।
যাঁরা উদ্ভিজ খাবার পছন্দ করে তাদের জন্য উদ্ভিজ্জ্ব আমিষ ভাল বিকল্প হতে পারে যা সস্তা ও ভিটামিন বৈচিত্র সহ আসে।
৪, শক্তির জন্য পুরো শস্য।
কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন ৫ আউন্স বা ১৫০ গ্রাম শস্য পাওয়া উচিত। এক-আউন্সের সমতুল্যগুলির মধ্যে রয়েছে এক টুকরো পুরো শস্যের রুটি, ½ কাপ পুরো শস্যের পাস্তা বা বাদামী চাল, ১ কাপ গুড়, বা ১ কাপ ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল।
ছেলেমেয়েরা ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে তাদের শরীরের ভর দ্বিগুণ করে, তাদের বৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য আয়রনের প্রয়োজন হয়। মেয়েদেরও বৃদ্ধির জন্য বাড়তি আয়রন প্রয়োজন এবং মাসিকের মাধ্যমে রক্ত হারানোর জন্য আয়রন প্রতিস্থাপন করতে হয়। আয়রনের ভালো উৎসের মধ্যে রয়েছে লাল গরুর মাংস, আয়রন-ফার্টিফাইড সিরিয়াল এবং রুটি, মটরশুটি, কঁচু ও পালং শাক। যাদের এসবের সুযোগ কম তারা আয়রন সাপ্লিমেন্ট চেষ্টা করতে পারে।
৬, চর্বি সীমিত করা।
কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন তাদের মোট ক্যালোরির এক চতুর্থাংশ এর বেশি চর্বি গ্রহণ সীমাবদ্ধ করা উচিত এবং তাদের স্যাচুরেটেডের চেয়ে অসম্পৃক্ত চর্বি বেছে নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর, অসম্পৃক্ত চর্বিগুলির মধ্যে রয়েছে জলপাই তেল, সূর্যমুখী, ভুট্টা এবং সয়াবিন তেল; চর্বিযুক্ত, মাছ যেমন সামুদ্রিক মাছ এবং বাদাম ও বীজ।
৭, কিশোর-কিশোরীদের হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। এ জন্য দুধ ও দুধজাতীয় খাবার,ডিমের কুসুম, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, সবুজ শাকসবজি ভাল ।
আমাদের কিশোর কিশোরীদের পুষ্টি চাহিদা
মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে যে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ বাড়াতে হবে তার মধ্যে রয়েছে শক্তি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন।
বডি শেমিং এর ভয়ে বর্তমানে কিশোরীরা নিজেকে ফিট রাখতে পর্যাপ্ত খাবার খায় না বা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকে, যাকে বলে ‘ইটিং ডিজঅর্ডার’। এ জন্য তাদের রক্তস্বল্পতা, হাড় দুর্বলতা ও অনিয়মিত ঋতুস্রাবের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এসব থেকে মুক্ত থাকতে মূল খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পুষ্টিকর ও ক্যালরিযুক্ত হালকা খাবার বা নাশতা খেতে হবে।
কিশোর কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য
বয়ঃসন্ধিকালের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বলতে বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে বোঝায়। অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ, অনিরাপদ গর্ভপাত, STI (এইচআইভি/এইডস সহ), এবং সকল প্রকার যৌন সহিংসতা এবং জবরদস্তি থেকে মুক্ত থাকার পথ জানাতে হবে তাদের।
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকারের জ্ঞান থাকা বাল্যবিবাহ হ্রাস করতে পারে, কিশোরী গর্ভধারণ হ্রাস করতে পারে এবং যৌন সংক্রামিত সংক্রমণ রোধ করতে পারে।
ডেটিং রেপ কি
মেয়েদের মাসিক পিরিয়ড ও গর্ভবস্থা
সূত্রঃ নেচার সায়েন্স
মন্তব্যসমূহ