কোমরে ব্যথা কেন একটি সাধারণ সমস্যা?
আমাদের পিঠের নীচের অংশে সাধারণত মাত্র পাঁচটি কশেরুকা থাকে - ঘাড় এবং পিঠের মাঝামাঝি থেকে কম। আর এই কশেরুকাগুলো অনেক ভারী ভারী জিনিস উত্তোলন করে!
পিঠের নীচের অংশটি যেখানে মেরুদণ্ড আমাদের পেলভিসের সাথে সংযোগ করে, আমাদের উপরের শরীরের ওজন বহন করে। এই এলাকাটি প্রচুর নড়াচড়া এবং চাপ অনুভব করে, যা ক্ষয়, ছিঁড়ে যাওয়া এবং আঘাতের কারণ হতে পারে।
কোমরব্যথা স্বল্পমেয়াদি, অর্থাৎ এক মাসের কম সময় হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি বা এক মাসের বেশি সময় ও হতে পারে । উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশ রোগী দুই মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যান।
কোমরে ব্যথা কি
কোমর বা নিম্ন পিঠের ব্যথাকে কোমর হতে পায়ে ব্যথা সহ বা ছাড়াই একটি ব্যথা এবং অস্বস্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা বুকের পাঁজরের মার্জিনের নীচ হতে নিতম্বের নিম্নতর ভাঁজের উপরে অবস্থিত।
আপনার কি কোমরে ব্যথা আছে? আপনি একা নন, যে কেউ যেকোন সময় পিঠের নিচের দিকে ব্যথা অনুভব করতে পারেন, এমনকি যদি আপনার পূর্বের কোনো আঘাত বা ঝুঁকির কারণ না থাকে। এটি সবসময় গুরুতর হয় না এবং প্রায়শই নিজেই ভাল হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা হল আপনার শরীরের উপায় যা আপনাকে বলে যে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে!
কোমরে ব্যথা খুবই সাধারণ সমস্যা। এটি পিছনের পেশী বা টেন্ডনে স্ট্রেন (আঘাত) থেকে হতে পারে। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে আর্থ্রাইটিস, কাঠামোগত সমস্যা এবং ডিস্কের আঘাত। ব্যথা প্রায়ই বিশ্রাম, শারীরিক থেরাপি এবং ওষুধের মাধ্যমে ভাল হয়ে যায়।
পিঠে বা কোমরে ব্যথার সাধারণ কারণ যে পেশীর টানের মতো আঘাত (স্ট্রেন) সেটি কখনও কখনও, একটি স্লিপড বা স্থানচ্যুত ডিস্ক, সায়াটিকা ( আটকে পড়া স্নায়ু) বা অ্যানকোলোজিং স্পন্ডাইলাইটিসের (বাত ) মতো রোগের কারণেও হতে পারে। খুব কমই, পিঠে ব্যথা একটি গুরুতর সমস্যা যেমন ভাঙা হাড়, ক্যান্সার বা সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।
ফ্যাটি লিভার রোগে ☕ ডায়েট কী ⁉️👉
কোমরে ব্যথা কেন হয়
সাধারণভাবে, কোমরে জয়েন্টগুলোর অস্টিওআর্থারাইটিস বা বাত এবং ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ (স্পাইনাল ডিস্কের স্বাভাবিক ক্ষয় এবং দুর্বল হয়ে যাওয়া) বেশিরভাগ দীর্ঘস্থায়ী নিম্ন পিঠের ব্যথার অন্তর্নিহিত কারণ। যাইহোক, পিঠের নিচের ব্যথা দুর্ঘটনাজনিত আঘাত এবং তীব্র চাপের কারণেও হতে পারে।
কোমর ব্যথার কারণগুলো নিম্ন রূপ :
বিভিন্ন সমস্যার জন্য কোমরব্যথা হতে পারে, যেমন :
- পেশির টান,
- হাড়ের সমস্যা,
- হাড় জোড়া সমস্যা ,
- লিগামেন্ট টান,
- হাড় জোড়ার আবরণ টান,
- স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরির কারনে হতে পারে। ,
- বুক, পেট, তলপেট ও মানসিক সমস্যার জন্য হতে পারে।
- মেরুদণ্ডের আর্থ্রাইটিস
- পিছনে আঘাত
- হার্নিয়েটেড ডিস্ক
- ব্যাথা সব সময় ধরে আছে—এ ধরনের ব্যথা।
- ভারী ওজন তোলা বা কাজের পর তীক্ষ্ণ হয় ।
- কোমর থেকে নিতম্ব, ঊরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা বিস্তৃত হয়।
- পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব হয়।
- হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়। প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ থাকতে নাও পারে। শোয়া অবস্থায় বা শোয়া থেকে ওঠার সময় ব্যথা হয়।
- যাঁরা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন।
- বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে। ড্রাইভিংয়ের সময় পেছনে কিছু সাপোর্ট নেওয়া উচিত।
- যারা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন, বাচ্চার যত্ন নেন বা অন্য কাজ করেন, তাদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়।
- অনেকেই আছেন যারা কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।
- এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ব্যথা।
- ব্যথা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে প্রসারিত হয়।
- পায়ে অসাড়তা, দুর্বলতা আছে।
- একটি দুর্ঘটনার পরে এখনো ব্যথা আছে।
- ব্যথা কিছু নির্দিষ্ট সময়ে বা নির্দিষ্ট অবস্থানে আরও খারাপ হয়।
- পায়খানা, অন্ত্র বা প্রস্রাব নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।
- ব্যাখ্যাতীত ওজন হ্রাস।
- জ্বর আছে।
- হাড়ের সমস্যা
- ডিস্ক সমস্যা
- টেন্ডন এবং লিগামেন্টের সমস্যা
- এক্স-রে
- আল্ট্রাসাউন্ড
- সিটি স্ক্যান
- এমআরআই
মূল কারনগুলি বিশ্লেষণ করি।
মেরুদণ্ডের আর্থ্রাইটিস -
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের সকলেরই ক্লান্তি অনুভব হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে পিঠের নীচের অংশে চাপ শুরু করা স্বাভাবিক।
মেরুদণ্ডের জয়েন্টগুলির মধ্যে তরুণাস্থি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে, পার্শ্ববর্তী টিস্যুগুলি স্ফীত হতে পারে। প্রদাহ এবং তরুণাস্থি পাতলা হয়ে যাওয়া জয়েন্টগুলোতে ঘর্ষণ বাড়ায়, যার ফলে পিঠের নিচের অংশে ব্যথা হতে পারে।
মেরুদণ্ডে আঘাত
ডিস্ক প্রোল্যাপ্স
এটি পিঠের নীচের অংশে প্রায়শই ঘটে। আহত ডিস্ক সবসময় আঘাতের জন্য নাও হতে পারে। তবে এটি ব্যথাহীন হলেও, এর বিষয়বস্তু কাছাকাছি স্নায়ুতে চাপ দিতে বা জ্বালাতন করতে পারে, যার ফলে পিঠের নিচের অংশে এবং অন্যান্য অংশে ব্যথা হতে পারে।
সায়াটিকা
এর লক্ষণ গুলো,
কোমর ব্যথার শক্তিশালী কারণ গুলোর অন্যতম হলো পি এল আই ডি বা লাম্বার ইন্টার-ভার্টিব্রাল ডিস্ক প্রল্যাপস। PLID তিন মাত্রার হতে পারে- স্বল্প, মাঝারি ও তীব্র।
কোমরে ব্যথা ও সায়াটিকার পার্থক্য কী?
কোমরে ব্যথা পা পর্যন্ত হলে এর অর্থ নার্ভ রুটি কোমপ্রেষণ হওয়া যা সায়াটিকা এর ক্ষেত্রে হয়।
মেরুদণ্ডের কোমরের অংশ পাঁচটি কশেরুকা বা ভার্টিব্রা দ্বারা গঠিত। এর নিচে থাকে স্যাক্রাম। এই পাচ কশেরুকা এবং স্যাক্রামের মাঝে তালের শাসের মত স্থিতিস্থাপক চাকতি থাকে। এই চাকতিগুলো মেরুদণ্ডের শক এবজর্বারের ভূমিকা পালন করে।
অর্থাৎ এদের ওপর ভর করেই মেরুদণ্ডের কোমরের অংশ তার কার্যক্রম চালায়। সামনে ঝোঁকা, ডানে বামে বাঁকা হওয়া হাটা শোয়া বসা সহ প্রায় সকল মুভমেন্টেই এই চাকতি গুলিগুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
পি এল আই ডি তে এই চাকতিটি তার অবস্থান থেকে সরে যায় এবং সরে যাওয়া চাকতিটি স্নায়ুর গোড়ায় চাপ প্রয়োগ করে, ফলে কোমরে ব্যথা শুরু হয়।
স্নায়ুগুলো যেহেতু কোমর থেকে বের হয়ে পায়ের দিকে চলে গেছে তাই পায়ের দিকেও ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে কোন স্নায়ুর গোড়াটি
চাপে পড়ল এবং চাপের ধরন ও মাত্রা কেমন। এই ধরনটি নির্ভুলভাবে নির্ণয় করতে এম আর আই করতে হবে।
পিঠের নিচের ব্যথা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে: উৎপত্তিস্থল থেকে উপরে বা নিচে। কখনও কখনও নীচের পিঠের ব্যথা পিঠের একপাশে হতে পারে, যাও স্বাভাবিক।
যদি ব্যাথাটি পিঠের নিচের দিক থেকে এক বা উভয় পায়ে শুট করে, তবে এটি সায়াটিকা (স্নায়ু ব্যথা) হতে পারে, তবে এটি সবসময় হয় না। পিঠের নীচের অংশে এমন অনেক অংশ রয়েছে যা পায়ে ব্যথার কারণ হতে পারে, যেমন ফ্যাসেট জয়েন্ট, স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্ট, পেশী বা বার্সার প্রদাহ।
কোন লাইফস্টাইল ফ্যাক্টরগুলি কোমরে ব্যথায় অবদান রাখে?
তিনটি প্রধান লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর রয়েছে যা আমাদের নিম্ন পিঠে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে:
১,ধূমপান,একাধিক গবেষণা ধূমপান এবং পিঠের নিচের ব্যথার মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করেছে। ধূমপান শরীরের অভ্যন্তরে প্রদাহ বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ হতে বাধা দেয়।
২, স্থূলতা বিভিন্ন ধরণের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সাথেও যুক্ত, যার মধ্যে পিঠের নীচের ব্যথা সহ। উচ্চ বডি মাস ইনডেক্স (BMI)যুক্ত লোকেদের মেরুদণ্ডের উপর চাপ বৃদ্ধি পায়, যা আরও বেশি পরিশ্রান্তে অবদান রাখে।
৩, শারীরিক ক্রিয়াকলাপের স্তরটি নীচের পিঠের স্বাস্থ্যেও ভূমিকা পালন করতে পারে। যদিও একটি অলস জীবনধারা নিম্ন পিঠে ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, তেমনি অত্যধিক বা কঠোর শারীরিক কার্যকলাপও হতে পারে। যদি শারীরিক কার্যকলাপের আদর্শ স্তর সম্পর্কে অনিশ্চিত হন তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
কাদের কোমর ব্যথা বেশি হয়?
পিঠের নিচের দিকে ব্যথা কিডনির ব্যথা হতে পারে?
পিঠের ব্যথার জন্য জরুরী ডাক্তার কল করার লক্ষণগুলো কি :
কোমর ব্যথার জন্য কখন চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন ?
কোমরের ব্যথা রোগ নির্ণয়:
ইমেজিং পরীক্ষা এটির মধ্য দিয়ে যেতে পারেন যাতে একজন ডাক্তার পরীক্ষা করতে পারেন:যদি একজন ডাক্তার সন্দেহ করেন যে পিঠের হাড়গুলি দুর্বল, তারা একটি হাড়ের স্ক্যান বা হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষার উপদেশ দিতে পারে।
ইলেক্ট্রোমাইগ্রাফি (ইএমজি) বা স্নায়ু পরিবাহী পরীক্ষা একজন ডাক্তারকে আপনার স্নায়ুর সমস্যা চিহ্নিত করতে সাহায্য করতে পারে।
কোমরে ব্যাথার চিকিৎসা
LBP-এর চিকিত্সা ব্যথার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে এবং এটি অ-নির্দিষ্ট বা নির্দিষ্ট ব্যথা কিনা।
মন্তব্যসমূহ